পাটনায় (Patna) একটি রাষ্ট্র পরিচালিত আশ্রয়কেন্দ্রে খাদ্যে বিষক্রিয়ার (food poisoning) কারণে তিনজনের মৃত্যু (3-dead) এবং আরও ১২ জন অসুস্থ (12-ill) হয়ে পড়েছেন। বুধবার এই ঘটনার বিষয়ে জানিয়েছেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট চন্দ্রশেখর সিং। তিনি বলেন, ঘটনাটি ঘটেছে শাহস্ত্রী নগর থানার প্যাটেল নগরের “আশা গৃহ” নামক একটি আশ্রয়কেন্দ্রে (shelter), যেখানে প্রতিবন্ধী মহিলাদের জন্য বাসস্থান এবং খাদ্য সরবরাহ করা হয়।
ঘটনার বিস্তারিতঃ
পুলিশ এবং প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, ৭ নভেম্বর সকালে আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দারা সকালের নাস্তা খাওয়ার পর তীব্র পেটের ব্যথা এবং বমি বমি ভাব অনুভব করতে শুরু করেন। এর পর তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর হয়ে ওঠে এবং তারা হাসপাতালে নেয়ার আগেই মারা যান। বাকিরা স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন, তাদের মধ্যে ১২ জনের শারীরিক অবস্থা গুরুতর।
পুলিশ কর্তারা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে, খাদ্য বিষক্রিয়া বা ফুড পয়জনিংয়ের কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। খাবারে কী ধরনের বিষাক্ত উপাদান ছিল তা তদন্ত করা হচ্ছে। এছাড়া, পুরো আশ্রয়কেন্দ্রের খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থার দিকে নজর রাখা হচ্ছে এবং এই ঘটনার পেছনে কোনো প্রকার অবহেলা বা অবৈধ কর্মকাণ্ড আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারী দল।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুঃ
স্থানীয় পুলিশ এবং প্রশাসন ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং তারা আশ্রয়কেন্দ্রের কর্মচারী ও খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলছেন। ডিনার প্রস্তুতকারী এবং কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো অবহেলা বা মিথ্যা তথ্য সরবরাহের অভিযোগ উঠতে পারে। এর পাশাপাশি, আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনাও তদন্তের আওতায় আসতে পারে। পুলিশ ইতোমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে এবং কয়েকজন সন্দেহভাজন কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট চন্দ্রশেখর সিং জানিয়েছেন, নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা হবে। তিনি আরও বলেন, “আমরা খাদ্যে বিষক্রিয়ার ঘটনা খুবই গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছি। ইতিমধ্যে খাদ্য পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে এবং শীঘ্রই রিপোর্ট পাওয়া যাবে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্য বিষক্রিয়া একটি মারাত্মক সমস্যা, যা অনেক সময় অস্বাস্থ্যকর বা অযোগ্য খাবার খাওয়ার কারণে ঘটে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আশ্রয়কেন্দ্রের মতো সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে খাবারের গুণমান এবং প্রস্তুতির প্রতি যথাযথ মনোযোগ দেওয়া জরুরি। সঠিক খাদ্য প্রস্তুতি, সঞ্চয় এবং পরিবেশন না হলে, এর ফলে খাদ্যে বিষক্রিয়া হতে পারে, যা মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াঃ
এই ঘটনা নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। রাজ্যের খাদ্য ও সেবা বিভাগের অবহেলা এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলির ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির অভিযোগ উঠেছে। বিরোধী দলগুলির সদস্যরা সরকারের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
পাটনার এক কংগ্রেস নেতা বলেন, “এটি সরকারের ব্যর্থতা। খাবারের মান নিয়ন্ত্রণে কোনো তদারকি ছিল না। আশ্রয়কেন্দ্রের নিরাপত্তা এবং খাবারের গুণগত মান নিয়ে সরকারের অবহেলা নজরে আসছে।”এছাড়া, জেলার পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, মৃতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং তাঁদের যথাযথ সাহায্য করা হচ্ছে। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে। এদিকে, রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, হাসপাতালের চিকিৎসকরা রোগীদের অবস্থা মনিটর করছেন এবং তাদের দ্রুত সেরে উঠতে প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করছেন।