বুধবার ১৩ নভেম্বর উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দলে (Jogaddal) এক তৃণমূল কংগ্রেস নেতাকে (TMC leader) গুলি করে হত্যা (killing) করা হয়। নিহত নেতার নাম অশোক শাউ, তিনি ভাটপাড়া পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূল সভাপতি ছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, অশোক শাউ স্থানীয় একটি চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন যখন একদল দুষ্কৃতী তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় বোমা নিক্ষেপও করা হয়। ঘটনায় পুলিশ এক ব্যক্তিকে আটক (arrested) করেছে এবং পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
বুধবার সকাল ৭টা নাগাদ ভাটপাড়া থানা এলাকার একটি চায়ের দোকানের সামনে এ হামলা ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অশোক শাউ দোকানে চা খাচ্ছিলেন, সেই সময় একদল দুষ্কৃতী হঠাৎ করে দোকানে প্রবেশ করে বোমা ফেলে এবং অশোককে গুলি করে পালিয়ে যায়। দোকানের ভেতরে এবং বাইরের বিভিন্ন জিনিসপত্র তছনছ করে তারা পালিয়ে যায়। চায়ের দোকানদার জানান, তিনি দোকানে চা বানাতে ব্যস্ত ছিলেন, হঠাৎই গোলমাল শুরু হয়। তিনি বলেন, “কিছু বুঝতে পারিনি। অশোকবাবু প্রতিদিন আমার দোকানে চা খেতে আসেন, আজও এসেছিলেন। তাঁর গায়ে গুলি লেগেছে, দোকানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।”
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ওই হামলায় অশোক শারীরিকভাবে গুরুতর আহত হন এবং তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু (dead) হয়। পুলিশ কর্তা অলোক রাজোরিয়া জানান, ঘটনার পর দ্রুত তদন্ত শুরু করা হয়েছে এবং সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
জগদ্দলে ঘটে যাওয়া এই হামলার পর ভাটপাড়া এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এলাকায় বোমাবাজি এবং গুলির ঘটনা, পুলিশ ও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। কিছু সময়ের জন্য পুরো এলাকা থমথমে হয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তদন্ত শুরু করেছে, তবে এখনও অভিযুক্তদের সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে প্রশ্ন করে পুলিশ দুষ্কৃতীদের সম্পর্কে কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছে।এছাড়া, বুধবারই নৈহাটি বিধানসভায় উপনির্বাচন চলছে, যেখানে বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর মিলেছে। এর মধ্যে ভাটপাড়ায় এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আরও বেশি আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে অশোক শাউ’র উপর আগেও এক হামলা হয়েছিল। সে সময় একজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, যিনি পরে মারা যান। এবারের ঘটনায়, পুলিশের মতে, গোষ্ঠীকোন্দল অথবা ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে এই হামলা ঘটতে পারে। তবে বিজেপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষের কারণেই অশোক শাউকে হত্যা করা হয়েছে।
পুলিশ কমিশনার অলোক রাজোরিয়া জানান, “চায়ের দোকানে ঢুকে তিনজন দুষ্কৃতী অশোক শাকে গুলি করেছে। তাদের দাবি, একাধিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল এবং অশোকের পিঠে গুলি লেগেছে। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, কিন্তু পরে তিনি মারা যান।” তিনি আরও জানান, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং স্থানীয়দের সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করে দ্রুত হামলাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলে খুন?
জগদ্দলে এই হত্যাকাণ্ডটি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা ধরনের জল্পনা তৈরি হয়েছে। বিজেপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, এটি তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠী কোন্দলের ফলস্বরূপ। অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে, তবে তাদের পক্ষ থেকে তদন্তের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়েছে।
এই হত্যাকাণ্ডের পর ভাটপাড়া এলাকার পরিস্থিতি অনেকটা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। পুলিশ পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে এবং স্থানীয়দের সতর্ক করা হয়েছে। গুলির শব্দ ও বোমাবাজির ঘটনায় সাধারণ মানুষ ভয় পেয়েছেন। তদন্তের পর বিস্তারিত তথ্য সামনে আসতে পারে, তবে অশোক শার ওপর আক্রমণটি যে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে ঘটেছে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।