ট্যাব কেলেঙ্কারিতে যখন উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজ্য-রাজীনীতি, ঠিক তখনই প্রকাশ্যে এল আবাস কেলেঙ্কারির খবর। এবার পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার (Pradhan Mantri Awas Yojana) আওতায় টাকা নয়ছয়ের এক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত ব্যক্তির দাবি, আবাস যোজনায় তাঁর নামে বরাদ্দ লক্ষাধিক টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে, অথচ সেই টাকা তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কখনোই জমা পড়েনি। এই ঘটনা সামনে আসার পর এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে এবং স্থানীয় কংগ্রেস নেতারা বিষয়টি নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন।
আঁটসাঁট নিরাপত্তায় উপনির্বাচন: রাজ্যের ছয় কেন্দ্রে ভোটগ্রহণে উত্তেজনা ও অভিযোগে উত্তপ্ত পরিস্থিতি
ঘটনার সূত্রপাত
২০১৬-১৭ সালে ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’-র আওতায় বাড়ি পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন রঘুনাথপুরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দেবাশিস মুখোপাধ্যায়। কিন্তু তারপরেও বাড়ি পাননি তিনি। এরপর অনেক বছর বাদে ২৫ অক্টোবর পুরসভার পক্ষ থেকে এক চিঠি পান সেই ব্যক্তি। সেই চিঠিতে লেখা ছিল, “আবাসের অসম্পূর্ণ বাড়ি দ্রুত শেষ করতে হবে।”
সেই চিঠি পাওয়ার পর দেবাশিস অবাক হয়ে যান, কারণ তিনি যেমন আবাসের কোন টাকা পাননি তেমনি তাঁর নামে কোনো টাকা আসার কোনও খবরও ছিল না। এদিকে, পোর্টালে গিয়ে দেবাশিস দেখেন, ২০১৭ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বেশ অনেকবার তাঁর নামে তিন লক্ষ পাঁচ হাজার টাকা তোলা হয়েছে। অথচ তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এক পয়সাও জমা হয়নি।
এই দেখে হতবাক হয়ে গিয়ে তিনি সরাসরি পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং এখন তিনি এর জন্য তদন্ত চেয়ে জানতে চান কে তাঁর নামে টাকা তুলেছে। দেবাশিসের অভিযোগ, “আমি ২০১৬-১৭ সালে আবাস যোজনায় আবেদন করেছিলাম, তবে কোনো টাকা বা বাড়ি পাইনি। পোর্টালে দেখাচ্ছে আমার নামে টাকা উঠেছে, কিন্তু আমার অ্যাকাউন্টে কিছুই আসেনি। কে আমার টাকা তুলে নিয়েছে, তার তদন্ত চাইছি।”
কাজল শেখের ‘ওয়াই প্লাস’ নিরাপত্তা, বীরভূমে কোর কমিটির বৈঠকের আগে বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তেজনা
কংগ্রেসের অভিযোগ এবং তদন্তের দাবি
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর কংগ্রেস নেতা এবং স্থানীয়রা সরব হয়ে ওঠেন। রঘুনাথপুর শহর কংগ্রেসের সভাপতি তারক প্রামাণিক অভিযোগ করে জানিয়েছেন, “পুরসভা টাকা তুলে খেয়ে নিয়েছে। যে টাকা ভুক্তভোগী পাননি, সে বাড়ি করবে কীভাবে?” কংগ্রেসের পক্ষ থেকে পুরসভায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করে দাবি করা হয়েছে, আবাস যোজনার টাকা নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে। তারা তদন্তের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানায়।
পুরসভার প্রতিক্রিয়া
এ প্রসঙ্গে রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান তরণী বাউরি বলেন, “এটি আমার সামনে প্রথম অভিযোগ। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। যদি সত্যিই কেউ দুর্নীতি করে থাকে, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে স্থানীয়দের মতে, এমন অভিযোগ অনেক দিন থেকেই উঠে আসছিল কিন্তু প্রশাসন তা গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে না।
উপনির্বাচনের সকালে ভাটপাড়ায় দুষ্কৃতীর গুলিতে খুন তৃণমূল নেতা, চলল দেদার বোমাবাজি
পূর্বেও উঠেছিল টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ
তবে এটিই প্রথম নয়, কিছুদিন আগে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এমন অভিযোগ উঠে এসেছে যেখানে শিক্ষার্থীদের ট্যাব কেনার জন্য বরাদ্দ সরকারি টাকা তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢোকেনি। অনেকের দাবি, টাকা অন্য কোনো অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে। এই ধরনের অভিযোগের মধ্যে আবাস যোজনার এই নতুন কেলেঙ্কারি রাজ্য রাজনীতির মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এ বিষয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বারবার দাবি করা হয়েছে, যে টাকা একদিকে প্রকৃত উপভোক্তার কাছে পৌঁছাচ্ছে না তা অন্যভাবে অপব্যবহৃত হচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেসও এই বিষয়টি অস্বীকার করতে পারেনি তবে তারা নিশ্চিত করেছে যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বুধে ফের কমল রূপোর দাম, কলকাতায় কত দামে বিকোচ্ছে সোনা?
উত্তেজনা এবং দাবি
পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে এই ঘটনা নতুন মাত্রায় উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ সত্যি হলে তা আরো বড় দুর্নীতির ইঙ্গিত দিচ্ছে যা পশ্চিমবঙ্গের সরকার এবং প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে। স্থানীয় বাসিন্দারা চাইছেন যে, বিষয়টি সঠিকভাবে তদন্ত করা হোক এবং অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়া হোক। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন এবং পুরসভা এই অভিযোগের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের দুর্নীতি আর না ঘটে তার জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়।