আঁটসাঁট নিরাপত্তায় উপনির্বাচন: রাজ্যের ছয় কেন্দ্রে ভোটগ্রহণে উত্তেজনা ও অভিযোগে উত্তপ্ত পরিস্থিতি

পশ্চিমবঙ্গের ছয় বিধানসভা কেন্দ্র (West Bengal Assembly By Election 2024) সিতাই, মাদারিহাট, তালড্যাংরা, মেদিনীপুর, নৈহাটি ও হাড়োয়ার উপনির্বাচনের জন্য বুধবার সকাল থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।…

Tense situation and allegations in voting across six constituencies in the state on West Bengal Assembly By Election 2024

পশ্চিমবঙ্গের ছয় বিধানসভা কেন্দ্র (West Bengal Assembly By Election 2024) সিতাই, মাদারিহাট, তালড্যাংরা, মেদিনীপুর, নৈহাটি ও হাড়োয়ার উপনির্বাচনের জন্য বুধবার সকাল থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। যাতে এই উপনির্বাচনে কোনও অশান্তির ঘটনা না ঘটে সেই কারণে নির্বাচন কমিশন আঁটসাঁট নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। কিন্তু তারপরেও দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে উঠল বিভিন্ন কেন্দ্র। রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি ১০৮ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেছে, যারা বিভিন্ন ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছে।

এসবের মধ্যে সিতাইয়ে ১৮, মাদারিহাটে ১৮, নৈহাটিতে ১৩, হাড়োয়ায় ১৮, মেদিনীপুরে ১৯ এবং তালড্যাংরায় ২২ টি কোম্পানি বাহিনী রয়েছে। কমিশনের পক্ষ থেকে জানা গেছে, ১০২ কোম্পানি বাহিনী সরাসরি বুথের নিরাপত্তা দেখছে বাকি ৬ কোম্পানি স্ট্রংরুমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজে রয়েছে। এই ছয় বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটি আসনই ছিল তৃণমূলের দখলে, আর একমাত্র মাদারিহাট ছিল বিজেপির। তবে এবার তৃণমূলের শক্তি আর বিজেপির প্রচারের মধ্যে যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

   

কাজল শেখের ‘ওয়াই প্লাস’ নিরাপত্তা, বীরভূমে কোর কমিটির বৈঠকের আগে বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তেজনা

এদিকে কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের মধ্যে কোনো জোট না হওয়ায় তারা আলাদা আলাদা ভাবে লড়াই করছে। বিশেষ করে, হাড়োয়া আসনটি আইএসএফ-এর দখলে চলে যাওয়ার কারণে সেখানে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি হয়েছে। ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পরই বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর মিলেছে। সিতাইয়ে অভিযোগ উঠেছে, একটি বুথে পোলিং এজেন্ট ছাড়া মকপোল পর্ব সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে বিজেপি প্রার্থীর এজেন্ট বুথে বসতে পারছেন না বলে এমন অভিযোগও ওঠে।

পরিস্থিতি উত্তেজিত হলে, নৈহাটির বিজেপি প্রার্থী রূপক মিত্র নিজেই বুথে গিয়ে এজেন্টকে বসান। তবে তৃণমূল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং দাবি করেছে যে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ চলছিল। অন্যদিকে হাড়োয়া আসনে তৃণমূলের বুথ এজেন্টের সঙ্গে বিজেপি প্রার্থী বিমল দাসের বচসা হয়ে যায়। এর ফলে ভোটকেন্দ্রের বাইরে উত্তেজনা ছড়ায় এবং পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর পরিস্থিতি শান্ত হয়। এদিকে মেদিনীপুরে বিজেপি নেতা বাবলু ঘোষ আক্রান্ত হয়েছেন।

উপনির্বাচনের সকালে ভাটপাড়ায় দুষ্কৃতীর গুলিতে খুন তৃণমূল নেতা, চলল দেদার বোমাবাজি

অভিযোগ উঠেছে, তৃণমূল আশ্রিত গুন্ডাবাহিনী তাঁকে মারধর করেছে, যখন তিনি দলীয় পোলিং এজেন্টকে বুথে বসাতে নিয়ে গিয়েছিলেন। যদিও তৃণমূল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং দাবি করেছে যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। সিতাইয়ে একে একে একাধিক অভিযোগ উঠে এসেছে। সেখানে ইভিএমের বোতামে সেলোটেপ লাগানোর অভিযোগ ওঠে বিজেপি প্রার্থী দীপক রায়ের বিরুদ্ধে। তিনি দাবি করেন, হোকদাহ আদাবাড়ী বুথে প্রথম দু’টি বোতামে সেলোটেপ লাগানো ছিল।

যার ফলে ভোটের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও তৃণমূল এই অভিযোগকে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করে বলেছে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ চলছিল। নৈহাটিতে ভোটগ্রহণ চলাকালীন তার কাছে জগদ্দলে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে প্রাক্তন তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় তাঁর মৃত্যু ঘটেছে। মাদারিহাটে বিজেপি প্রার্থী রাহুল লোহারের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করা হয়েছে, গত পাঁচ বছরে মাদারিহাটে বিজেপির কোনও উন্নয়ন হয়নি।

বুধে ডিজেলের দাম কমে দাঁড়াল ৮৭.৬৭ টাকা, কলকাতায় কত দাম রয়েছে পেট্রোলের?

তাই তৃণমূলের কর্মীরা রাহুলকে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, ভোটদানের হার অনুযায়ী, বাংলার ছয় আসনে দুপুর ১টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে গড়ে ৪৫.৫৯ শতাংশ। সিতাই, মাদারিহাট, তালড্যাংরা, মেদিনীপুর, নৈহাটি এবং হাড়োয়াতে ভোটদানের হার যথাক্রমে ৪৫ শতাংশ, ৪৬.১৮ শতাংশ, ৪৮ শতাংশ, ৪৬.২৪ শতাংশ, ৩৯.৭৫ শতাংশ এবং ৪৭.১ শতাংশ। কমিশনের পক্ষ থেকে ভোটগ্রহণের পুরো প্রক্রিয়ার ওপর নজর রাখা হচ্ছে এবং ইতিমধ্যেই ৪১টি অভিযোগ সেখানে জমা পড়েছে।

কমিশন জানিয়েছেন, কোনো ধরনের অব্যবস্থা বা অশান্তি ঘটলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং ফলাফল ঘোষণা করার আগে সমস্ত অভিযোগের তদন্ত করা হবে। পশ্চিমবঙ্গের ছয় বিধানসভা কেন্দ্রের এই উপনির্বাচন তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে এক তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখাচ্ছে। বিশেষত, এই নির্বাচনের মাধ্যমে রাজ্যের শাসক দলের পক্ষে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ আসনগুলো রক্ষা করা জরুরি।

সপ্তাহান্তেই শীতের ছোঁয়া পাবে বঙ্গবাসী! পারদ নেমে কবে পড়বে জাঁকিয়ে শীত?

অন্যদিকে, বিজেপি চাইছে এখান থেকে কিছু আসন দখল করে নিজেদের শক্তি পুনরুদ্ধার করতে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের ছয় বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের ফলাফল শুধুমাত্র তৃণমূল ও বিজেপির জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং রাজ্যের রাজনৈতিক গতিপথের জন্যও তা অনেকটা নির্ধারণ করে দেবে।