পূর্ব লাদাখের সীমান্ত এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিল ভারত ও চীন। ডেমচক (Ladakh Demchok) ও দেপসাং (Depsang) এলাকায় প্রতি সপ্তাহে একবার করে যৌথ টহল (India-China border patrol) দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে দুই দেশের সেনাবাহিনী। এই চুক্তি কার্যকরী করার পর প্রথম টহলও সম্পন্ন হয়েছে বলে প্রতিরক্ষা সূত্রে জানা গিয়েছে।
উত্তেজনা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
ভারত ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে ২০২০ সালের জুন মাসে গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষের পর। ঐ সংঘর্ষে দুই দেশের সেনাবাহিনী ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়, যা দুই দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি করে। এই ঘটনার পর থেকে পূর্ব লাদাখে ডেমচক ও দেপসাং এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। তবে সাম্প্রতিক কিছু রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক আলোচনার পর দুই দেশই সেই উত্তেজনা কমানোর জন্য পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়।
গত মাসে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে ডেমচক ও দেপসাং এলাকায় দুই দেশের সেনাবাহিনী বিতর্কিত এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন করে। এর পরই নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে যৌথ টহল শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই চুক্তির অংশ হিসেবে, দুই দেশই প্রতি সপ্তাহে একবার করে ওই এলাকাগুলিতে টহল দেবে।
টহলের পদ্ধতি
ডেমচক ও দেপসাং এলাকায় যৌথ টহল পরিচালনার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রতিটি এলাকায় ভারতীয় সেনাবাহিনী একটি টহল পরিচালনা করবে, একইভাবে চীনা সেনাবাহিনীও আলাদা একটি টহল পরিচালনা করবে। এর মাধ্যমে দুই পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ আরও মজবুত করা হবে এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখা সহজ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চুক্তির পরবর্তী পর্যায় এবং সমঝোতা
ডেমচক ও দেপসাং থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও সামরিক পর্যায়ে বহু রাউন্ড আলোচনা হয়েছিল। অবশেষে, দুই দেশই সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছায় এবং তারপরই যৌথ টহল চালুর সিদ্ধান্ত হয়। এই চুক্তির পরে উভয় পক্ষই ‘ভেরিফিকেশন প্যাট্রোল’ পরিচালনা করে নিশ্চিত করেছে যে সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে নিয়মিত বৈঠক
ডেমচক ও দেপসাং অঞ্চলে নিয়মিতভাবে গ্রাউন্ড কমান্ডারদের মধ্যে আলোচনা করা হবে বলে দুই পক্ষই সম্মত হয়েছে। এর মাধ্যমে উভয় দেশই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং যে কোনো ধরনের উত্তেজনা বা বিবাদ এড়াতে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সংঘর্ষ এবং উত্তেজনা প্রশমিত করার লক্ষ্যে এই বৈঠকগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
চার বছরের সামরিক সংঘাতের পর শান্তির পথে দুই দেশ
গালওয়ান উপত্যকার সংঘর্ষের পর থেকে ভারত ও চীনের মধ্যে সামরিক বিরোধ এক নতুন মাত্রা পায়। পূর্ব লাদাখে বহুস্থানে দুই পক্ষের সেনাবাহিনী মুখোমুখি ছিল, যা দুই দেশের মধ্যে স্থিতিশীলতার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। দীর্ঘ চার বছরের সামরিক সংঘাতের পর এবার সেই পথ থেকে সরে এসে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে উভয় পক্ষই উদ্যোগী হয়েছে।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মতে, সীমান্তে এই যৌথ টহল ব্যবস্থা দুই দেশের মধ্যে আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে সহায়ক হবে। ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং চীনা পিপলস লিবারেশন আর্মি উভয় পক্ষই এই চুক্তিকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ
যদিও এই পদক্ষেপটি ভারত ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে, তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। দুই দেশের মধ্যে আস্থার অভাব এবং সীমান্ত সংক্রান্ত আরও বহু বিষয়ে মতপার্থক্য এখনও রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, দুই পক্ষকেই আরও সচেতনভাবে এগোতে হবে এবং আলোচনার মাধ্যমে শান্তি বজায় রাখতে হবে।
ভারতীয় কূটনৈতিক মহল এবং প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পূর্ব লাদাখে এই নতুন পদক্ষেপ সফল হলে তা ভবিষ্যতে ভারত-চীন সম্পর্ক উন্নয়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।