ভারতে ‘ভিএআর’ প্রযুক্তি বিতর্কে ‘বিস্ফোরক’ নর্থইস্ট ইউনাইটেড কোচ

ভারতীয় ফুটবলে গত কয়েকটি সিজনে রেফারি সিদ্ধান্ত নিয়ে একের পর এক বিতর্ক দেখা দিয়েছে। বহু ম্যাচে রেফারিদের কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে। এই…

Northeast United FC Coach Juan Pedro Benali on Hyderabad FC

short-samachar

ভারতীয় ফুটবলে গত কয়েকটি সিজনে রেফারি সিদ্ধান্ত নিয়ে একের পর এক বিতর্ক দেখা দিয়েছে। বহু ম্যাচে রেফারিদের কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বারবার সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন ফুটবল ক্লাব, খেলোয়াড় এবং দর্শকরা। ফেডারেশনকে মাঝে মধ্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হলেও এখনও ভারতে আধুনিক প্রযুক্তি ‘ভিএআর’ (ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি) চালু করা সম্ভব হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে ফুটবলবিশ্বে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই প্রযুক্তি নিয়ে এবার মুখ খুললেন নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র কোচ পেদ্রো বেনালি (Pedro Benali)।

   

ভারতীয় ফুটবলে ‘ভিএআর’ প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা কেন?
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ফুটবল ম্যাচে ‘ভিএআর’ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভুল রেফারি সিদ্ধান্তের হার কমানো হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্ত ম্যাচের ফলাফলে বড় পরিবর্তন এনে দেয়। ভারতের আইএসএল (ইন্ডিয়ান সুপার লিগ)-এও প্রায়ই রেফারি সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা হতে দেখা যায়, বিশেষ করে যখন দুই প্রধান দল ইমামি ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান সুপারজায়ান্টস মাঠে নামে। এই ক্লাসিক ম্যাচগুলিতে রেফারি সিদ্ধান্তগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, এবং ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ফলাফলে বড় প্রভাব পড়ে।

ভারতে ‘ভিএআর’ প্রযুক্তি চালুর জন্য বহুদিন ধরেই ফুটবল মহল থেকে দাবি উঠছে। তবে বিভিন্ন সমস্যার কারণে এখনও তা চালু করা যায়নি। ‘ভিএআর’ ব্যবহারের জন্য যেমন উচ্চমানের প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন, তেমনই প্রয়োজন বড় পরিমাণ অর্থের। দেশের প্রথম ডিভিশন লিগে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে গেলে অনেক খরচ পড়বে, যা হয়তো ফেডারেশনের জন্য একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

প্রযুক্তিগত উন্নতির অভাবে দেশের ফুটবলে বাধা
পেদ্রো বেনালি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, “বিশ্বের অন্যান্য দেশে দলগুলি রিয়াল টাইম ডেটা ব্যবহার করে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করতে পারে। এখানে তা সম্ভব হয় না। আমাদের উচিত এই প্রযুক্তিগত সহায়তাকে কাজে লাগিয়ে খেলোয়াড়দের দক্ষতার উন্নতি করা।” তিনি আরও বলেন, “তাৎক্ষণিক তথ্য এবং খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে প্রশিক্ষণ দিলে তাদের পারফরম্যান্সের মান বৃদ্ধি পাবে, যা দলের সামগ্রিক সাফল্যেও ভূমিকা রাখতে পারে।”

ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন এই বছর থেকে ‘ভিএআর’ প্রযুক্তি চালুর ব্যাপারে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে, এই প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করার জন্য যেসব প্রক্রিয়া প্রয়োজন, সেগুলি যথেষ্ট জটিল। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি খরচের পরিমাণও বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার ওপর এই প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য দেশীয় রেফারিদের বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন, যা চালু করার জন্য ফেডারেশনকে বেশ কয়েকটি ধাপ পেরোতে হবে। এমনকি ফিফা-সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রযুক্তির মতো ‘ভিএআর’ ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পাওয়ার প্রয়োজন।

রেফারি সিদ্ধান্ত নিয়ে বারংবার বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু কলকাতার ময়দান
বিশেষ করে কলকাতার ফুটবল ময়দানে দুই প্রধান ক্লাব ইমামি ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান সুপারজায়ান্টসকে প্রায়ই রেফারি সিদ্ধান্তের জন্য ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। কলকাতার ফুটবলপ্রেমীরা অত্যন্ত আবেগপ্রবণ এবং এই ম্যাচগুলিতে রেফারিদের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক মাথাচাড়া দিলেই তা বৃহত্তর পরিসরে পৌঁছায়। বহুবার সমর্থকরা দাবি তুলেছেন এই প্রযুক্তি চালুর জন্য যাতে সঠিক এবং নিরপেক্ষভাবে রেফারি সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।

‘ভিএআর’ চালুর পথে বাধা ও সম্ভাবনা
ভারতে ‘ভিএআর’ প্রযুক্তি চালু করার জন্য আরও কিছু সময় লাগবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু হলে তা একদিকে যেমন রেফারিদের সিদ্ধান্ত সঠিক করতে সহায়তা করবে, অন্যদিকে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ এবং উন্নত করার ক্ষেত্রেও ভূমিকা পালন করবে। তবে ফেডারেশন এখন চেষ্টা করছে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের উপযুক্ত অবস্থা তৈরি করার জন্য। এর জন্য প্রয়োজন রেফারিদের প্রশিক্ষণ, ফান্ডিং, এবং প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি।

ফুটবলপ্রেমীদের আশা এবং ভবিষ্যৎ
ভারতের ফুটবলপ্রেমীরা আশা করছেন যে শীঘ্রই এই প্রযুক্তি চালু হবে এবং রেফারি সিদ্ধান্তে নিরপেক্ষতা আসবে। পেদ্রো বেনালির মতামত দেশের ফুটবলে প্রযুক্তিগত উন্নতির প্রয়োজনীয়তার কথা আরও একবার সামনে এনেছে। ‘ভিএআর’ চালু হলে ভারতীয় ফুটবলে নতুন যুগের সূচনা হবে এবং সেইসঙ্গে দেশের ফুটবল আরও উচ্চ স্তরে পৌঁছাতে পারবে।

ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন এবং ফুটবল মহল একযোগে কাজ করলে শীঘ্রই দেশের ফুটবলে এই প্রযুক্তি চালু হবে এবং ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক মানের আরও খেলোয়াড় তৈরি হবে বলে ফুটবলপ্রেমীরা আশাবাদী।