শহর তিলোত্তমায় (Kolkata) সবসময়ই ব্যস্ত থাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক থেকে অরাজনৈতিক কর্মসূচিকে (Political & Non Political Rally) কেন্দ্র করে। কিছুদিন আগেই এই শহর তপ্ত হয়েছিল ময়দানের রাজনীতি। যেখানে কলকাতা ময়দানের প্রধান তিন দলের শীর্ষকর্তাদের দেখা গিয়েছিল নৈহাটি বিধানসভার উপনির্বাচনে শাসক দলের প্রার্থীর হয়ে প্রচার করতে। সেই নিয়ে সরব হতে দেখা যায় দলের প্রাক্তন ফুটবলারদের। এবার রাজনীতি মুক্ত ময়দান গড়ে তোলার প্রতিবাদে পথে নামলেন কলকাতা ফুটবল প্রেমীরা (Kolkata Football Lovers)।
ভারতকে ছাড়াই কোন বিশ্বকাপ আয়োজনের কথা বলল পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড ?
মঙ্গলবার রাজনীতি মুক্ত ময়দান দাবিতে যে বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছিল, তা বাংলা ফুটবল প্রেমীদের এক নতুন সচেতনতার ইঙ্গিত। কলকাতার তিন প্রধান ফুটবল ক্লাব ইস্টবেঙ্গল (East Bengal), মোহনবাগান (Mohun Bagan) এবং মহামেডানের (Mohammedan SC) সমর্থকরা একযোগে এই দাবিতে মুখর হন। ময়দান এলাকার গোষ্ঠপাল মূর্তির পাদদেশে বেশ কিছু জন ফুটবল সমর্থক উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল, ফুটবলকে যেন আর রাজনীতির আঁতাতে ব্যবহার না করা হয়।
Manolo Marquez : মালেশিয়ার বিরুদ্ধে নামার আগে ফুটবলারদের নিয়ে ‘বিস্ফোরক’ মানোলো মার্কুয়েজ
বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছিল একটি টুইট থেকে, যেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের অফিশিয়াল টুইটার হ্যান্ডলে এক ভিডিও পোস্ট করা হয়েছিল। সেই ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার, মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত এবং মহমেডান স্পোর্টিংয়ের কর্তা মহম্মদ কামারউদ্দিন, নৈহাটি উপনির্বাচনের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সনৎ দে’এর জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন। এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। তাঁরা বলছেন, “ফুটবল আমাদের আবেগ, রাজনীতি আমাদের ক্ষতি করছে।”
কলকাতার ফুটবল ক্লাবগুলো ইতিহাসের এক অনবদ্য অংশ, যা শুধু মাঠে নয়, সমাজের বিভিন্ন স্তরে নিজের ছাপ রেখে চলেছে। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান এবং মহমেডান, এই তিন ক্লাবের সমর্থকদের আবেগের সঙ্গে রাজনীতি কখনোই মিশে যায়নি। তবে সম্প্রতি এই সংস্থাগুলির শীর্ষকর্তাদের কিছু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ফুটবলার ও সমর্থকদের মধ্যে এক ধরনের বিরোধ সৃষ্টি করেছে। তাঁদের মতে, রাজনৈতিক প্রচারের জন্য ফুটবল সমর্থকদের আবেগ ব্যবহার করা একেবারেই অনুচিত।
অর্শদীপকে দলে নিতে কোন কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি টাকার ঝুলি নিয়ে বসবে?
বিক্ষোভ সমাবেশে এসে মোহনবাগানের একজন সমর্থক বললেন, “আমরা ফুটবল ভালোবাসি, কিন্তু রাজনীতি নয়। রাজনীতি যদি ফুটবলে ঢুকে যায়, তাহলে তা আমাদের প্রিয় খেলা ও ক্লাবকে ধ্বংস করবে।” তিনি আরো বলেন, “আমরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থক হতে পারি, তবে আমাদের ক্লাবের আবেগ কখনোই রাজনীতির জন্য কাজে লাগানো উচিত নয়।”
ইস্টবেঙ্গল ব্রিগেডের একজন সমর্থক বলেন, “আমরা রাজনীতি থেকে মুক্ত ময়দান চাই। এর আগে ডুরান্ডে কলকাতা ডার্বি বাতিল হয়েছিল, কিন্তু আমাদের আন্দোলন থেমে যায়নি। রাজনৈতিক দলের চাপের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।” তাঁর মতে, ফুটবল একটি খেলা, যার প্রতি মানুষের অবিচ্ছেদ্য ভালোবাসা রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো যখন নিজেদের স্বার্থের জন্য ফুটবলকে ব্যবহার করে, তখন সেটা কেবল খেলার সঙ্গে প্রতারণা হয়।
ফুটবল সমর্থকদের এই প্রতিবাদে একটি বড় বার্তা রয়েছে—ফুটবল মাঠের বাইরে, মাঠে অথবা ক্লাবের শীর্ষ নেতৃত্বে, রাজনীতি কেবল ক্ষতি করতে পারে। ফুটবল এমন একটি খেলা, যা সকলকে একত্রিত করে। এটা কেবল দলের খেলা নয়, মানুষের আবেগের খেলা। ক্লাব সমর্থকরা চান, তাদের আবেগ যেন কোনো রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির শিকার না হয়।