মণিপুরের (Manipur) জিরিবাম এলাকায় কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনীর (CRPF) সঙ্গে সংঘর্ষে ১১ জন সন্দেহভাজন জঙ্গি নিহত হয়েছে। সোমবার সকালে সংঘর্ষের সময় এক সিআরপিএফ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন।
মণিপুরে ২০২৩ সালের ৩ মে সহিংসতা শুরু হয়েছিল, যখন একটি র্যালি চলাকালীন উপজাতি ছাত্র ইউনিয়ন (এটিএসইউ) মৈতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতি (এসটি) শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি তুলে। এই দাবির প্রতিবাদ জানাতে উপজাতীয় ছাত্র ইউনিয়ন একটি র্যালি আয়োজন করে, যা পরে সহিংস সংঘর্ষে রূপ নেয়।
সাম্প্রতিক এই সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে মণিপুরে সহিংসতা, মৃত্যু, এবং আঘাতের হার কমলেও রাজ্যে এখনও মাঝে মাঝে আগুন লাগানো এবং গুলি চালনার ঘটনা ঘটছে। সিআরপিএফ এবং অন্যান্য সুরক্ষা সংস্থাগুলি সম্পূর্ণ সতর্কতায় রয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
মণিপুর পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেলের প্রতিক্রিয়া
মণিপুর পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল রাজীব সিংহ বলেন, “এই সময়গুলো খুবই চ্যালেঞ্জিং, তবে আমরা আমাদের সেরা প্রচেষ্টা দিয়ে এই সমস্যাগুলো মোকাবিলা করছি। আমরা সবাই, বিশেষ করে নিরাপত্তা সংস্থাগুলি একত্রিতভাবে কাজ করছি যেন রাজ্যে শান্তি এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে।”
মণিপুর পুলিশের ১৩৩তম প্রতিষ্ঠা দিবসে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে রাজীব সিংহ বলেন, “আমাদের সুরক্ষা সংস্থাগুলি এবং জনগণের সহযোগিতায় আমরা শান্তি এবং স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরানোর চেষ্টা করছি। গত দেড় বছরে সহিংসতা কমেছে, এবং আঘাতের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। তবে মাঝে মাঝে অগ্নিকাণ্ড এবং গোলাগুলির বিচ্ছিন্ন ঘটনাও ঘটে, কিন্তু সব সুরক্ষা বাহিনী সম্পূর্ণরূপে সতর্ক রয়েছে যাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ না হয়।”
সম্প্রদায়ের মধ্যে আলোচনার প্রচেষ্টা
অক্টোবর মাসের ১৫ তারিখে, মণিপুরের নির্বাচিত সদস্যদের একটি প্রতিনিধি দল প্রথমবারের মতো কুকি-জো-হমার, মৈতেই এবং নাগা সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈঠক করেছে। রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এই বৈঠকে তারা রাজ্যের জনগণের কাছে সহিংসতা পরিহারের আবেদন জানিয়েছে।
এই আলোচনা, যা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়, রাজধানীতে মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কুকি, মৈতেই এবং নাগা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। এতে জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ মেটানোর প্রচেষ্টা আরও জোরদার হয়েছে।
শান্তি প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব
মণিপুরে সুরক্ষা বাহিনীর পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন এবং সুশীল সমাজ রাজ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একসাথে কাজ করছে। রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সেনা, আধা-সামরিক বাহিনী, এবং পুলিশের বিশেষ তৎপরতা চলছে। সিআরপিএফসহ অন্যান্য বাহিনী মণিপুরের বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছে এবং সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
মণিপুরে চলমান উত্তেজনার মাঝে এই সংঘর্ষ রাজ্যবাসীর মধ্যে আরও ভীতি ছড়িয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে সম্প্রদায়গুলির মধ্যে যে আলোচনা শুরু হয়েছে, তাতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা কমে আসার আশা করা হচ্ছে।
সংঘাত নিরসনে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগ
সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিরসনে কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রদায়গুলির মধ্যে সংঘাত কমাতে এবং একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে। মণিপুরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য মন্ত্রী ও অন্যান্য কর্মকর্তা উদ্যোগী হয়েছেন। সরকারের এই প্রচেষ্টা রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করেছে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নতুন হিংসা ও সরকারের কঠোর পদক্ষেপ
সাম্প্রতিক এই সংঘর্ষ রাজ্য প্রশাসনের সামনে এক নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে। মণিপুরে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং সব ধরনের সহিংসতা রোধে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী সম্পূর্ণ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
সামগ্রিক পরিস্থিতি নিরীক্ষণে স্থানীয় প্রশাসন এবং কেন্দ্রীয় সরকার একত্রে কাজ করছে।