প্রথমার্ধের শেষভাগে ইস্টবেঙ্গলের দুই গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার নন্দকুমার শেখর এবং নাওরেম মহেশ সিং লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ায় দলটি ৯ জনের দলে পরিণত হয়। এই বিরাট সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠে মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব (Mohammedan SC)। বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধে তাঁরা একের পর এক আক্রমণ শানিয়েছে, কিন্তু লাল-হলুদের দুর্ভেদ্য রক্ষণভাগ তাঁদের বারবার ব্যর্থ করেছে।
শুরু থেকেই এবারের আইএসএলে দুরন্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছিল মহামেডান। নিজেদের প্রথম তিনটি ম্যাচেই তাঁরা জয়ী হয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছিল। তবে সাম্প্রতিক তিনটি ম্যাচে টানা পরাজয় তাঁদের এই ধারা বদলে দিয়েছে। ত্রয়ীর এই পরাজয়ের ধাক্কায় মহামেডান স্পোর্টিং ক্রমশ নীচে নেমে যাচ্ছে এবং দলের আস্থা কমতে শুরু করেছে। এই ম্যাচে তাই তাঁদের জন্য ঘুরে দাঁড়ানোর অন্যতম সুযোগ ছিল, কিন্তু তা সম্পূর্ণ রূপে কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি।
ম্যাচ শেষে মহামেডানের কোচ আন্দ্রে চেরনিশভ ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে এই ড্রকে যথেষ্ট হতাশাজনক বলে মনে করেন। তাঁর মতে, “নয়জনের বিরুদ্ধে খেলেও আমরা গোল করতে পারলাম না, এটা অত্যন্ত দুঃখের। ইস্টবেঙ্গল আমাদের শক্তিশালী আক্রমণের বিরুদ্ধে পুরো ম্যাচ ধরে ভালভাবে রক্ষা করল। আমাদের বেশকিছু আকর্ষণীয় গোলের সুযোগ ছিল, কিন্তু আমাদের খেলোয়াড়রা তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে।”
এই ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণভাগ এবং গোলরক্ষক দুর্দান্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। প্রতিপক্ষের ৯ জন থাকা সত্ত্বেও তাঁরা মহামেডানের প্রতিটি আক্রমণকে ঠেকিয়ে দিয়েছেন। চেরনিশভ বলেন, “প্রতিটি দলে যখন এগারোজন থাকে এবং প্রতিপক্ষ নয়জন নিয়ে খেলছে, তখন প্রত্যেকেই আশা করে যে এগারোজনের দল জিতবে। কিন্তু আমাদের ছেলেরা সেই আশা পূরণ করতে পারেনি।”
চেরনিশভ আরও বলেন, “গোলের মুখে পৌঁছে ফিনিশিংয়ের অভাবে আমাদের মূল সমস্যা তৈরি হয়েছে। আমরা পুরোপুরি পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে পারিনি। অনুশীলনে এসব বিষয়ের উপর কাজ করা হয়েছে, তবুও মাঠে অনেক সুযোগ নষ্ট হয়েছে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস নষ্ট হতে পারে। আমাদের সেই দিকে মনোযোগ দিতে হবে এবং তাদের আরও বেশি উন্নতি করতে হবে।”
এই ম্যাচের ফলে ইস্টবেঙ্গল প্রথমবারের মতো চলতি আইএসএলে একটি পয়েন্ট সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে, যা তাঁদের পরবর্তী ম্যাচে আত্মবিশ্বাস যোগাবে। অন্যদিকে, মহামেডানের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ হাতছাড়া করার মতো এবং তাঁদের নিজেদের মধ্যে আরও পর্যালোচনা প্রয়োজন।
চেরনিশভের মতে, “এই ম্যাচ থেকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিতে পারি। প্রতিপক্ষ নয়জনে থাকলেও সেটাকে কাজে লাগানোর ক্ষমতা থাকতে হবে। আশা করি ভবিষ্যতে আমাদের খেলোয়াড়রা এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবে এবং মাঠে আরও দৃঢ় মনোভাব নিয়ে খেলবে।”
সমর্থকরাও এই ফলাফলে হতাশ হলেও, তাঁরা কোচের আশার উপর ভরসা রাখছেন। মহামেডানের এই ড্র তাঁদের প্লে-অফে পৌঁছানোর পথ কিছুটা হলেও কঠিন করে তুলেছে, তবে এখনো লিগের অনেক ম্যাচ বাকি রয়েছে এবং চেরনিশভ তাঁদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় আরও উন্নতি আনার জন্য বদ্ধপরিকর।