গত শনিবার বিজাপুর জেলার জঙ্গলে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে এক এনকাউন্টারে (Bijapur Encounter) তিনজন মাওবাদীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন প্লাটুন কমান্ডারও রয়েছেন, যার মাথায় ৮ লাখ টাকার পুরস্কার ছিল। এদিন নিরাপত্তা বাহিনী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এক বিশাল অস্ত্রভাণ্ডারও।
এই এনকাউন্টারটি ঘটে শুক্রবার, যখন জেলা রিজার্ভ গার্ড (ডিআরজি), স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ), সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ), কোবরা ইউনিট এবং মাওবাদী বাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময় শুরু হয় রেকহাপল্লী-কমাঠপল্লী অঞ্চলের জঙ্গলে, যা উসুর-বাসাগুড়া-পামেদ এলাকার ত্রিবিধ সীমানায় অবস্থিত।
এনকাউন্টারের পরে, নিরাপত্তা বাহিনী তিনটি মাওবাদীের মরদেহ উদ্ধার করে এবং তাদের কাছ থেকে একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র বাজেয়াপ্ত করে। বাজেয়াপ্ত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে একটি সেলফ লোডিং রাইফেল (এসএলআর), একটি স্নাইপার রাইফেল এবং আরও কয়েকটি রাইফেল। বর্তমানে, ঘটনাস্থলে নিরাপত্তা বাহিনীর অনুসন্ধান অভিযান চলমান রয়েছে।
বিজাপুর রেঞ্জের পুলিশ ইনস্পেক্টর জেনারেল (আইজিপি) সুন্দররাজ পি এই অভিযান নিশ্চিত করে বলেছেন, “৮ই নভেম্বর নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে মাওবাদী বাহিনীর সংঘর্ষ হয়েছিল রেকহাপল্লী-কমাঠপল্লী জঙ্গলে। এখান থেকে তিনজন মাওবাদীের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং একাধিক অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযান, যার মাধ্যমে মাওবাদীীদের কার্যকলাপ দুর্বল করা সম্ভব হবে।”
আইজিপি আরও জানান, এ অভিযান বিজাপুর জেলার মাওবাদী কার্যক্রমকে বড় আঘাত হেনেছে এবং স্থানীয় পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী এটি সফল বলে গণ্য করছে। এই অভিযানটি জেলা পুলিশের জন্য একটি বড় সাফল্য, যেহেতু এই এলাকাটিতে মাওবাদীীরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের কার্যকলাপ চালিয়ে আসছে।
এছাড়া, পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, নিহত তিন মাওবাদীর মধ্যে একজন প্লাটুন কমান্ডার ছিল, যার ওপর ৮ লাখ টাকার পুরস্কার ছিল। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে জেলা পুলিশের জন্য শীর্ষ লক্ষ্য ছিলেন। নিহতদের মধ্যে থাকা অন্যান্য মাওবাদীদের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি, তবে তাদের পরিচয় জানাতে অনুসন্ধান কাজ চলমান রয়েছে।
নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে যে, এই ধরনের সফল অভিযান জেলা পুলিশের ঐক্য এবং দক্ষতা প্রদর্শন করে, যার মাধ্যমে নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও শক্তিশালী করা যাবে। আরও মাওবাদী সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং তাঁদের অবস্থান চিহ্নিত করার জন্য সাইরেন, স্যাটেলাইট এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
অপরদিকে, পুলিশ আরও জানায় যে এই এলাকাটি মাওবাদীদের ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছিল এবং নিরাপত্তা বাহিনী তাদের কার্যকলাপ বন্ধ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
এই এনকাউন্টার এবং উদ্ধার অভিযানটি একে অপরকে সহায়তা করে নিরাপত্তা বাহিনীর দীর্ঘদিনের মাওবাদী বিরোধী অভিযানকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ছত্তীসগড়ের বনভূমি এবং পাহাড়ি এলাকায় মাওবাদী বাহিনীর উপস্থিতি দীর্ঘদিন ধরে সমস্যা তৈরি করে আসছে, কিন্তু সম্প্রতি পুলিশ বাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং অভিযানের ফলস্বরূপ মাওবাদী বিরোধী কার্যক্রমে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে।
এছাড়া, এই ধরণের এনকাউন্টার থেকে স্পষ্ট হচ্ছে যে, নিরাপত্তা বাহিনী বর্তমানে আরও সুসংহত এবং প্রস্তুত, যা মাওবাদীদের মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সক্ষম।
এই এনকাউন্টারটি একটি কৌশলগত সাফল্য হিসেবেই দেখা হচ্ছে, যা শুধু মাওবাদী বাহিনীর ওপর হামলা নয়, বরং তাদের কার্যকলাপ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ। এই অভিযানটি শুধু স্থানীয় পুলিশ বাহিনীরই নয়, দেশের বৃহত্তর নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতিরক্ষা শক্তিরও প্রশংসনীয় অগ্রগতি হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, অভিযানের পরও পুরো অঞ্চলটি তল্লাশি করা হচ্ছে এবং আরও বেশ কিছু মাওবাদী সদস্যের উপস্থিতি শনাক্ত করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। এটা নিশ্চিত যে, চলমান অভিযানে আরও সাফল্য পাওয়া যাবে, যা মাওবাদী বিরোধী অভিযানের পরবর্তী ধাপে প্রভাব ফেলবে।
পরবর্তী সময়ে আরও মাওবাদী বিরোধী অভিযান চলবে, যেগুলি নিরাপত্তা বাহিনীর মনোবল আরও উঁচু করতে সহায়তা করবে।