প্রচুর অস্ত্রসহ কলকাতা পুলিশের জালে মহম্মদ ইসরাইল

কলকাতা (Kolkata) পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর অভিযানে আটক হল মহম্মদ ইসরাইল। অস্ত্র পাচারের পরিকল্পনা ছিল তার, কিন্তু এসটিএফের চৌকস অভিযানে হাত বদলের আগেই অস্ত্রসহ…

Extortion in the Name of Baro Maa: Youth from Rishra Arrested"

কলকাতা (Kolkata) পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর অভিযানে আটক হল মহম্মদ ইসরাইল। অস্ত্র পাচারের পরিকল্পনা ছিল তার, কিন্তু এসটিএফের চৌকস অভিযানে হাত বদলের আগেই অস্ত্রসহ পাকড়াও হলো তিনি। শনিবার সুরেন্দ্র নাথ কলেজের কাছে কলকাতা পুলিশ এসটিএফ অভিযান চালিয়ে মহম্মদ ইসরাইলকে গ্রেফতার করে। অভিযানের সময় তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র এবং গুলি।

অভিযানের বিবরণ
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ৫৩ বছর বয়সি মহম্মদ ইসরাইল কলকাতার বেলেঘাটা রোড সংলগ্ন এলাকায় অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করছিলেন। ইসরাইলের আসল বাড়ি বিহারের ঝাড়খণ্ডের হান্টারগঞ্জ থানার অন্তর্গত কেতারীওয়ার গ্রামে। তবে তিনি বেশ কিছুদিন ধরে কলকাতার রাজাবাজার এলাকায় বসবাস করছিলেন। পুলিশের কাছে গোপন সূত্রে খবর আসে যে তিনি অস্ত্র পাচারের জন্য ডেলিভারি দিতে আসছেন। সেইমতো এসটিএফ-এর একটি বিশেষ দল সেখানে গিয়ে অভিযান চালায় এবং তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলে।

   

উদ্ধারকৃত আগ্নেয়াস্ত্র
মহম্মদ ইসরাইলের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রগুলির মধ্যে ছিল ৫টি পিস্তল এবং ৯০ রাউন্ড লাইভ কার্তুজ। এর মধ্যে ২টি ছিল সেভেন এমএম পিস্তল এবং ৩টি ওয়ান শ্যটার বন্দুক। প্রতিটি বন্দুকেই লাইভ কার্তুজ ছিল এবং এগুলি বিহারের মুঙ্গেরে তৈরি বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এই অস্ত্রগুলির বেশিরভাগই অবৈধভাবে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল বলে পুলিশ মনে করছে।

পুলিশি তদন্তের অগ্রগতি
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ইসরাইল মূলত একটি অস্ত্রপাচার চক্রের ‘ক্যারিয়ার’ হিসেবে কাজ করছিল। তার কাজ ছিল বিহার থেকে কলকাতায় অবৈধ অস্ত্র এনে বিক্রি করা। গতকাল সে নতুন করে মুঙ্গের থেকে অস্ত্রের চালান সংগ্রহ করে কলকাতায় পৌঁছায় এবং আজই সেই অস্ত্র রাজাবাজার এলাকায় একটি নির্দিষ্ট ডেলিভারি পয়েন্টে নিয়ে যাচ্ছিল। পুলিশি সূত্রে আরও জানা গেছে, রাজাবাজারে এই ধরনের অবৈধ অস্ত্র কেনাবেচার একটি গোপন নেটওয়ার্ক রয়েছে এবং ইসরাইল সেখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিল।

কলকাতা পুলিশের প্রতিক্রিয়া
এসটিএফ জানিয়েছ, “এটি  তাদের কাছে খুবই বড়ো সাফল্য। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে আমরা সময়মতো এই অস্ত্রচক্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি।” আরও বলা হয়েছে, “এটি একটি সংগঠিত চক্র এবং তাদের মূল উৎসের খোঁজ পেতে আমরা বিভিন্ন রাজ্যে আমাদের অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছি।”

গোপন সূত্রের ভূমিকা
এ ধরনের বড়ো অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে পুলিশের কাছে গোপন সূত্রের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ক্ষেত্রে পুলিশ গোপন সূত্র থেকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ইসরাইলের অস্ত্র সহ উপস্থিত থাকার খবর পায় এবং সেটির ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে। রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে অস্ত্র এবং গোলাবারুদ ছড়িয়ে দেওয়ার আগে তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসার।

এলাকার বাসিন্দাদের প্রতিক্রিয়া
রাজাবাজার ও বেলেঘাটা রোড সংলগ্ন এলাকায় এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর স্থানীয় বাসিন্দারা বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তারা জানাচ্ছেন, “আমরা কখনও ভাবিনি যে এই এলাকায় এমনভাবে অস্ত্র পাচার হয়। আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা চিন্তিত। প্রশাসনের কাছে আমাদের অনুরোধ, অবিলম্বে এর পিছনের চক্রটিকে ধরা হোক এবং এলাকাকে সুরক্ষিত করা হোক।”

প্রশাসনিক পদক্ষেপ
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, রাজাবাজার এলাকা ও আশপাশের এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হবে। এছাড়া বেআইনি অস্ত্র কেনাবেচা ঠেকাতে পুলিশ বিভিন্নভাবে অভিযান চালিয়ে যাবে। ইতিমধ্যেই এসটিএফ-এর তরফে বেশ কয়েকটি স্থানে তল্লাশি চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া এই অস্ত্র চক্রের পিছনে কারা রয়েছে এবং কোথা থেকে এই অস্ত্রগুলির আসা-যাওয়া হচ্ছে, তা জানার জন্য ইসরাইলকে জেরা করে আরও তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।

কলকাতা পুলিশের এই সাফল্য শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করতে সাহায্য করবে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। ইতিমধ্যেই এসটিএফ-এর এই অভিযানে বেআইনি অস্ত্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে এই চক্রের মূল হোতাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব না হলে এ ধরনের অস্ত্র পাচার বন্ধ করা সম্ভব নয়।