মুম্বইয়ের চত্রপতি শিবাজী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টমস বিভাগের কর্মকর্তারা এক বিশাল মাদক ধরপাকড়ে সফল হয়েছেন। এদিন, কাস্টমস কর্মকর্তারা হাইড্রোপনিক গাঁজা (Hydroponic Weed) আটক করেছেন, যার বাজার মূল্য ১৪.৯ কোটি টাকা। দুই যাত্রীর কাছ থেকে ১৪.৯ কিলোগ্রাম হাইড্রোপনিক গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাটি শুক্রবার ঘটে, যখন এই দুই যাত্রী ব্যাংকক থেকে মুম্বই বিমানবন্দরে পৌঁছান।
একটি গোপন সূত্রে খবর পেয়ে কাস্টমস কর্মকর্তারা ওই দুই যাত্রীকে শনাক্ত করেন। তারা দু’জনই সন্দেহজনক আচরণ করছিলেন এবং তাঁদের লাগেজে কিছু অস্বাভাবিক কিছু রয়েছে, এমন ধারণা পাওয়া যায়। পরবর্তীতে, লাগেজ তল্লাশি করে ১৪টি প্যাকেটে গাঁজা পাওয়া যায়, যা অনেক ভালো ভাবে বাক্সে লুকানো ছিল।
কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, এই গাঁজা ছিল অত্যন্ত উন্নত মানের হাইড্রোপনিক প্রক্রিয়ায় তৈরি, যা সাধারণত উচ্চ মানের এবং বাজারে এর চাহিদা খুব বেশি। হাইড্রোপনিক গাঁজা বিশেষভাবে সুনির্দিষ্ট পরিবেশে উন্নত হয়, এবং এটি নিয়মিত গাঁজার তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। এর ফলে, এটি বিদেশে বেশি দাম পাচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক মাদক পাচারের একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গ্রেফতার দুই যাত্রীর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া এই মাদক চালানটি শুল্ক বিভাগ আরও তদন্ত করবে। তদন্তের অংশ হিসেবে, কর্মকর্তারা জানতে চান, ওই মাদক কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল এবং এর পেছনে কোন চক্রের হাত রয়েছে। এদিকে, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের (এনডিপিএস অ্যাক্ট) বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে যে, তারা এই গাঁজার চালানটি মুম্বই শহরে কোথাও সরবরাহ করার জন্য নিয়ে এসেছিল। তাদের কাছে এই মাদকটি কোথায় নিয়ে যেতে হবে এবং এটি কীভাবে দেশের ভিতরে পরিবাহিত হচ্ছিল তা জানতে তদন্ত আরও ব্যাপকভাবে চালানো হচ্ছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক মাদক পাচারের চক্রে জড়িতদের খোঁজে আরও অভিযান চালানো হবে।
এদিকে, কাস্টমস বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “এই ধরনের বড় ধরনের উদ্ধার অভিযান মাদক পাচারের বিরুদ্ধে আমাদের অবিচল পদক্ষেপের অংশ। মুম্বই বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক মাদক পাচারের জন্য একটি বড় গেটওয়ে হয়ে উঠেছে, এবং আমরা এখানে কড়া নজরদারি রাখি। আমরা এই চক্রের সাথে জড়িত অন্যদেরও চিহ্নিত করতে চাই।”
মুম্বই বিমানবন্দরে এ ধরনের বড় উদ্ধারকাজই নিশ্চিত করে যে, এখানে মাদক পাচারের পরিমাণ বাড়ছে। এটি প্রশাসনের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয়, কারণ মাদক পাচারের ফলে বিভিন্ন সমাজে বিশাল ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। মাদক ব্যবহারকারীরা কেবল শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন না, বরং তাদের পরিবারের জীবনে বিশাল প্রভাব ফেলে এবং সমাজে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডও বেড়ে যায়।
এছাড়া, কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান যে, এ ধরনের অভিযানের মাধ্যমে শুধু মাদক চক্রকে ধরতে নয়, মাদক বিরোধী সচেতনতা বৃদ্ধিও করা হচ্ছে। দেশের মধ্যে মাদক নিয়ন্ত্রণে সরকারি পদক্ষেপগুলোর পাশাপাশি, সাধারণ মানুষকেও এ বিষয়ে সচেতন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত যুব সমাজের মধ্যে মাদক ব্যবহারের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায়, এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই ঘটনায়, মুম্বই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং কাস্টমস বিভাগের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও কর্মকর্তারা দাবি করেছেন যে, তাঁরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন মাদক পাচারের প্রবাহ রোধ করতে, তবুও তাদের কাছে আরও উন্নত প্রযুক্তি এবং নজরদারির ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন।
এভাবে নিয়মিতভাবে মাদক উদ্ধারের ঘটনা ঘটতে থাকলে, মুম্বইয়ের মত বড় বিমানবন্দরগুলোতে আরও কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা সামনে আসবে। দেশের নিরাপত্তার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং মাদক পাচারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা খুব জরুরি, যাতে মাদক পাচারের মত গুরুতর অপরাধ রোধ করা সম্ভব হয় এবং নিরাপদ সমাজ গড়ে তোলা যায়।
এই উদ্ধার কার্যক্রমটি দেশের মাদক পাচার বিরোধী অভিযানে একটি বড় সফলতা বলে ধরা হচ্ছে এবং এটি প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের প্রমাণ।