কেরলের ওয়েনাড় ( Kerala) লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন ঘিরে শুরু হয়েছে নতুন রাজনৈতিক বিতর্ক। এই কেন্দ্রে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরার (Priyanka Gandhi) লড়াই নিয়ে এসেছে গুরুতর অভিযোগ। কেরলের মুখ্যমন্ত্রী এবং সিপিএমের (CPIM) পলিটব্যুরো সদস্য পিনারাই বিজয়ন (Pinarai Vijayan) দাবি করেছেন, প্রিয়াঙ্কার প্রার্থিতায় কট্টরপন্থী মুসলিম সংগঠন জামাত-ই-ইসলামির ‘গোপন সমর্থন’ রয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই অভিযোগ বিজেপির পক্ষ থেকে আসেনি; বরং এসেছে কংগ্রেসের জোট শরিক সিপিএমের তরফ থেকে। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে এবং বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র মধ্যে টানাপোড়েন প্রকাশ্যে এসেছে।
‘ফাইভ আইজ’ দেশ অস্ট্রেলিয়া থেকে কানাডাকে চাপ জয়শঙ্করের, খালিস্তান নিয়ে সুর নরম ট্রুডোর
কেরলের মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন তার বক্তব্যে বলেন, কংগ্রেস দলটি ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশের আড়ালে জামাত-ই-ইসলামির মতো কট্টরপন্থী সংগঠনের সমর্থন নিচ্ছে, যা রাজ্যের সামাজিক ও ধর্মীয় স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। বিজয়ন অভিযোগ করেন, জামাতের মতো সংগঠনগুলোর সঙ্গে কংগ্রেসের যোগাযোগ কেরলের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে খর্ব করবে এবং এটি একপ্রকার ক্ষমতার লোভের প্রকাশ।
সিপিএমের তরফে এই অভিযোগে বলা হয়, ভোটে জয়ী হতে কংগ্রেস এখন এমনসব দলের সমর্থন নিচ্ছে যারা উগ্রপন্থী এবং সমাজে বিভাজনের বার্তা ছড়ায়। সিপিএমের অভিযোগ আরও জোরালো, কারণ দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেস নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ দলের পরিচয় দিয়ে এসেছে। কিন্তু জামাত-ই-ইসলামির মতো সংগঠনের সমর্থন নেওয়া তাদের নীতির বিপরীতে যায় বলে মনে করছেন সিপিএমের নেতারা। সিপিএম মনে করছে, এই ধরনের কর্মকাণ্ডে কেরলের ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের পরিপন্থী এক চিত্র প্রকাশ পাচ্ছে।
ট্রাম্প ফেরায় নিষেধাজ্ঞা-মুক্ত হবে ১৯ টি ভারতীয় সংস্থা, আশায় নয়াদিল্লি
সিপিএমের এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের তরফে জানানো হয়, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এবং দল কখনোই কোনো কট্টরপন্থী বা বিভাজনমূলক সংগঠনের সঙ্গে কোনো সমঝোতা করে না। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বলা হয়, এটি সিপিএমের রাজনৈতিক চক্রান্ত, যা তাদের জনপ্রিয়তাকে খর্ব করার একটি কৌশল মাত্র। কংগ্রেসের মতে, সিপিএম এই অভিযোগ তুলে কেরলের সাধারণ মানুষের মনোযোগ সরিয়ে দিতে চাইছে, যেখানে তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি জনসমর্থন পাচ্ছে না।
কংগ্রেসের আরেকটি দাবিও রয়েছে। তারা বলছে, ওয়েনাড়ে প্রিয়াঙ্কার পদপ্রার্থী হওয়ায় সিপিএম তাদের অবস্থান দুর্বল হওয়ার আশঙ্কায় পড়েছে। কেরলে সাম্প্রতিককালে কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং সিপিএম সেই জনপ্রিয়তাকে আটকাতে এই ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে বলে কংগ্রেস নেতারা দাবি করেছেন।
অবসরের পূর্বে সুপ্রিম কোর্টে আবেগপূর্ণ বার্তা প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের
রাজনৈতিকবিশ্লেষকদের মতে, সিপিএমের এই অভিযোগ কেবলমাত্র ওয়েনাড়ের উপনির্বাচনের জন্য নয়। এটি কংগ্রেস এবং সিপিএমের মধ্যেকার দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটি অংশ। কেরলে সিপিএম ও কংগ্রেস বরাবরই প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে রাজনীতিতে সক্রিয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কংগ্রেসের বর্তমান উত্থান এবং প্রিয়াঙ্কার জনপ্রিয়তা সিপিএমের অবস্থানকে কিছুটা হলেও হুমকির মুখে ফেলেছে, যার ফলে এই ধরনের অভিযোগের অবতারণা।
বিদায়ী প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে বাংলার ‘অমীমাংসিত’ পাঁচটি মামলা
সিপিএমের অভিযোগের পরে কেরলের রাজনৈতিক মঞ্চে উত্তাপ বেড়েছে। বিশেষ করে, কেরলের ধর্মনিরপেক্ষ এবং প্রগতিশীল ভোটারদের মধ্যে প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে জামাত-ই-ইসলামির গোপন সমর্থন নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তবে, ভোটারদের মনস্তত্ত্বে এই অভিযোগ কেমন প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে এখনও সন্দেহ রয়েছে।