রাষ্ট্রপতি হিসেবে ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচন, তাঁর বিরুদ্ধে মামলা বন্ধ হবে নাকি চলবে?

ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) রাষ্ট্রপতি হিসেবে ফিরে আসা শুধু তার পুনরায় হোয়াইট হাউসে প্রবেশের বিষয় নয়, এটি তার বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলোর বিষয়ে একটি বিরতি এনে…

Donald Trump

ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) রাষ্ট্রপতি হিসেবে ফিরে আসা শুধু তার পুনরায় হোয়াইট হাউসে প্রবেশের বিষয় নয়, এটি তার বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলোর বিষয়ে একটি বিরতি এনে দেবে। ট্রাম্পের (Donald Trump) নির্বাচনী জয় তাকে শুধু আদালতকেন্দ্রিক সংগ্রাম এবং বিপুল পরিমাণ আইনগত খরচ থেকে কিছুটা মুক্তি দেবে, বরং এটা তার বিরুদ্ধে করা ফেডারেল মামলাগুলোরও সাসপেনশন ঘটাতে পারে। বিশেষ কৌঁসুলি জ্যাক স্মিথ ইতোমধ্যে মার্কিন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা শুরু করেছেন, যাতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুটি ফেডারেল মামলা বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করা যায়।

Advertisements

এটি দীর্ঘদিনের বিচার বিভাগের নীতি অনুযায়ী করা হচ্ছে, যেখানে বলা হয়েছে যে একজন কার্যকরী রাষ্ট্রপতিকে অপরাধমূলকভাবে অভিযুক্ত বা মামলাগ্রস্ত করা সম্ভব নয়। বিশেষ কৌঁসুলি জ্যাক স্মিথের দ্বারা পরিচালিত মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ২০২০ সালের নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ এবং হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর গোপনীয় নথি সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করার অভিযোগ। এই মামলাগুলোর বিষয়ে ট্রাম্প নিজেই দাবি করেছেন যে, তিনি ক্ষমতায় আসার পর স্মিথকে “দ্বিতীয় সেকেন্ডে” বরখাস্ত করবেন।

   

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চলমান ফেডারেল মামলা
ট্রাম্পের (Donald Trump) বিরুদ্ধে দুটি প্রধান ফেডারেল মামলা চলছে:

১. নির্বাচনী ফলাফল উল্টানোর ষড়যন্ত্র: ট্রাম্পকে (Donald Trump) অভিযুক্ত করা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন নিয়ে জালিয়াতি করার এবং নির্বাচনের ফলাফলকে অন্যায়ভাবে পাল্টানোর চেষ্টা করার জন্য। বিশেষত, ২০২০ সালের নির্বাচনে জয়ী হিসেবে জো বাইডেনের ফলাফলকে বাধা দেওয়ার জন্য একটি অফিসিয়াল কংগ্রেস সেশনে হামলা চালানো হয়, যা ২০২১ সালের জানুয়ারি ৬ তারিখে ঘটে।

২. গোপনীয় নথি সংক্রান্ত মামলা: ট্রাম্পের (Donald Trump) বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা রয়েছে, যেখানে তিনি হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর গোপনীয় এবং সংবেদনশীল নথি ঠিকভাবে সংরক্ষণ করেননি। এই মামলাটি বর্তমানে ওয়াশিংটন ডিসিতে চলছে, তবে এর কোনো ট্রায়াল তারিখ নির্ধারিত হয়নি এবং এটি সুপ্রিম কোর্টের জুলাই মাসের রায়ের ফলে আরও জটিল হয়ে উঠেছে, যেখানে বলা হয়েছে যে, একজন সাবেক প্রেসিডেন্টকে ব্যাপকভাবে অপরাধমূলকভাবে অভিযুক্ত করা যায় না।

ট্রাম্পের সম্ভাব্য পদক্ষেপ
এখন, যখন ট্রাম্প আবার রাষ্ট্রপতি হতে যাচ্ছেন, তার বিরুদ্ধে এই মামলাগুলোর জন্য একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব। তিনি যদি চায়, তবে তিনি সোজাসুজি বিচার বিভাগকে নির্দেশ দিতে পারেন যে এই মামলা দুটি বাদ দেওয়া হোক। আবার, ট্রাম্প যদি নিজের জন্য একটি নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ করেন, তবে সেই ব্যক্তি বিশেষ কৌঁসুলি স্মিথকে বরখাস্ত করতে পারেন। যদিও, রাষ্ট্রপতির নিজস্ব ক্ষমতায় বিশেষ কৌঁসুলিকে সরানো সম্ভব নয়, তবুও প্রশাসনিক রদবদল করে তিনি বিচার বিভাগের কার্যক্রম পরিবর্তন করতে পারেন।

Advertisements

রাজ্য পর্যায়ের মামলা
ফেডারেল মামলার পাশাপাশি ট্রাম্প আরও দুটি রাজ্য মামলার সম্মুখীন হচ্ছেন — নিউ ইয়র্ক এবং জর্জিয়া রাজ্যে।

নিউ ইয়র্কের মামলা: ট্রাম্পকে নিউ ইয়র্কে একটি বড় অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যেখানে ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে চুপচাপ অর্থ প্রদান করে তার সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে কথা বলার ঠেকাতে তার ব্যবসায়িক রেকর্ডে জালিয়াতি করার অভিযোগ রয়েছে। ২০২৪ সালের মে মাসে ট্রাম্পকে এই অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। যদিও, তার আইনজীবীরা এই মামলাটি বাতিল করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন, যেহেতু সাবেক প্রেসিডেন্টকে অপরাধমূলকভাবে দোষী সাব্যস্ত করা খুবই কঠিন।

জর্জিয়ার মামলা: জর্জিয়া রাজ্যে ট্রাম্পকে র্যাকেটিয়ারিং (অর্গানাইজড ক্রাইম) মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে, যেখানে তাকে ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন করার চেষ্টা করার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে, এই মামলাটি সম্ভবত রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতায় আসার পর সাসপেন্ড হয়ে যাবে, কারণ কোনো বর্তমান প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার নীতি অনুসরণ করা হয়।

ট্রাম্পের উপর সম্ভাব্য শাস্তি
ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন, তবে তাকে বড় ধরনের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। নিউ ইয়র্কের মামলায় ট্রাম্পকে প্রতি অভিযোগে ৪ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে, তবে প্রথম অপরাধী হওয়ায় তাকে জরিমানা এবং শাস্তিস্বরূপ প্যারোল দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি।