কালচিনিতে (Alipurduar’s Kalchini ) নাবালিকার ওপর অশ্লীল ভিডিও তুলে ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ১৭ বছর বয়সী এই নাবালিকাকে প্রতিবেশী এক যুবক একাধিকবার ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল রাতে নির্যাতিতার মা কালচিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে কালচিনি থানার পুলিশ অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নাবালিকার সঙ্গে অভিযুক্ত যুবকের পূর্ব থেকেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। কয়েক মাস আগে অভিযুক্ত ওই যুবক নাবালিকার একটি অশ্লীল ভিডিও তুলে রাখে। এরপর থেকে নাবালিকাকে ভয় দেখিয়ে, যখনই সে বাড়িতে একা থাকত, তখন যুবকটি ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার হুমকি দিয়ে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করে। অভিযুক্ত যুবক নাবালিকার ওপর যে চাপ সৃষ্টি করেছিল, তা থেকে মুক্তি পেতে সম্প্রতি নাবালিকা তার মাকে সবকিছু খুলে বলেছে।
নাবালিকার মায়ের অভিযোগ অনুযায়ী, তার মেয়ে যুবকের হুমকির কারণে অনেকদিন ধরে মানসিক চাপের মধ্যে ছিল। মেয়ে এভাবে অত্যাচারিত হওয়ার পর মা স্থানীয় ভিলেজ লেভেল চাইল্ড প্রটেকশন কমিটি এবং মহিলা সমিতির কাছে যান। ওই দুই কমিটির সহযোগিতায় তিনি কালচিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
কালচিনি থানার অফিসার ইনচার্জ গৌরব হাঁসদা জানান, ঘটনার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা জানতে পারেন, দুই বছর আগে ওই নাবালিকা আরেক যুবকের সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু সেই সংসার স্থায়ী হয়নি এবং পরে তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন। এরপর তিনি অভিযুক্ত যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক জড়ান। কিছুদিন সম্পর্ক চলার পর যুবকের আচরণে বিরক্ত হয়ে তিনি সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসেন, এবং তারপর থেকেই এই ঘটনা শুরু হয়।
অভিযুক্ত যুবকের বিরুদ্ধে পকসো আইন অনুযায়ী মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশ তদন্তের পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করছে। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার পর আজ তাকে আলিপুরদুয়ার আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে স্থানীয় সমাজে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, কিভাবে একজন যুবক এতটা দুঃসাহসিকতা দেখাতে পারে এবং একটি অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুর ওপর এভাবে নির্যাতন চালাতে পারে। একই সঙ্গে, মা এবং নাবালিকার প্রশংসা করছেন, যারা এই ঘটনা প্রকাশ করতে সাহস দেখিয়েছেন।
এলাকাবাসী এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং অপরাধীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন। তারা মনে করেন, এই ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কমে যায়।
এছাড়া, এ ধরনের ঘটনায় নাবালিকাদের নিরাপত্তা এবং সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। নাবালিকাদের বিরুদ্ধে এই ধরনের ঘৃণ্য অপরাধ রোধে জনসচেতনতা তৈরি এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকর পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আশা করা যাচ্ছে, এই মামলার মাধ্যমে দোষীদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত হবে এবং সমাজের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা পৌঁছাবে যে, নাবালিকাদের বিরুদ্ধে অপরাধ কখনোই মেনে নেওয়া হবে না।