Indian Army Depsang Mission: লাদাখের দেপসাং অঞ্চলে ভারতের সেনাবাহিনী আজ সফলভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে টহল সম্পন্ন করেছে। গত মাসে ভারত ও চীনের মধ্যে দেপসাং ও ডেমচকে টহল ব্যবস্থা পুনরায় চালু করার বিষয়ে সম্মতি জানানো হয়েছিল, এবং এই চুক্তির ফলেই ভারতীয় সেনাবাহিনী আজ এই টহল সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে।
সেনাবাহিনীর ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি কর্পস (১৪ কর্পস) এক বিবৃতিতে জানায়, “ডেমচক ও দেপসাংয়ে পুনরায় টহল কার্যক্রম চালুর জন্য ভারত ও চীনের মধ্যে যে ঐক্যমত গড়ে উঠেছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতে আজ দেপসাংয়ের একটি টহল পয়েন্টে ভারতীয় সেনাবাহিনীর টহল সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।” তারা আরও জানায়, “এটি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলএসি) শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।”
বিদেশ মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য ও পটভূমি
বিদেশ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ডেমচক ও দেপসাং অঞ্চলে প্রাথমিক যাচাইকরণ টহল শুরু হয়েছে, যা পর্যায়ক্রমিক টহলের পথ প্রশস্ত করবে। এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তটি ব্রিকস সম্মেলনের আগে নেওয়া হয়েছিল, যেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়েছিল।
গত ২১শে অক্টোবর, বিদেশ মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছিল যে দেপসাং ও ডেমচক অঞ্চলে “শেষ পর্যায়ের বিচ্ছিন্নতা প্রক্রিয়ার” জন্য ভারত ও চীনের মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে এবং সৈন্যরা ২০২০ সালে সংঘাতের পূর্ববর্তী অবস্থানে ফিরে আসবে। এটি এমন একটি অবস্থান যেখানে দুই দেশের সৈন্যরা প্রাক-সংঘাত অবস্থায় ছিল, যা গালওয়ান উপত্যকার সংঘর্ষ, পানগং লেক ও গোগরা হট স্প্রিংস অঞ্চলে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিল।
সেনাবাহিনীর টহল কার্যক্রম ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার অগ্রগতি
বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শংকর এনডিটিভি ওয়ার্ল্ড সামিটে বলেন, “আমরা একটি চুক্তিতে পৌঁছেছি, এবং ২০২০ সালের টহল অবস্থানে ফিরে গেছি। সেই অনুযায়ী, চীনের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা সম্পন্ন হয়েছে। কিছু এলাকায় তারা আমাদের বাধা দিয়েছিল, আমরা তাদের বাধা দিয়েছিলাম, কিন্তু এখন আমরা একটি ঐক্যমতে পৌঁছেছি যা ২০২০ পর্যন্ত করা টহল পুনরায় চালানোর অনুমতি দেবে।”
২০২১ সালে, পানগং লেকের উত্তর ও দক্ষিণ পাড়ে ভারত ও চীনের সৈন্যরা বিচ্ছিন্নতা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। পরবর্তীতে, ২০২২ সালে সেপ্টেম্বরে গোগরা-হট স্প্রিংস এলাকা থেকেও তারা তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে প্রাক-এপ্রিল ২০২০ অবস্থানে ফিরে যায়।
সাম্প্রতিক উন্নয়ন ও স্থাপনা অপসারণের প্রমাণ
দীপাবলির সময় ভারত ও চীনের সৈন্যরা নিয়ন্ত্রণ রেখায় মিষ্টি বিনিময় করে এবং প্রাথমিক যাচাইকরণ প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় কমান্ডাররা এই টহল কার্যক্রমের পদ্ধতি চূড়ান্ত করবেন।
বিচ্ছিন্নতা প্রক্রিয়ার আওতায় প্রতিটি অংশে নির্মিত কাঠামো অপসারণ এবং জমি পূর্বাবস্থায় ফেরানো হয়েছে। এই চুক্তির কয়েকদিন পরে, এনডিটিভি স্যাটেলাইট চিত্রে চীনা পক্ষের অবকাঠামো সরানোর প্রমাণ দেখতে পায়। দেপসাং সমভূমির একটি চিত্রে দেখা যায় যে, ১১ই অক্টোবর চারটি গাড়ি ও দুটি তাঁবু ছিল এবং ২৫শে অক্টোবরের চিত্রে তাঁবুগুলি অপসারিত হয়েছে ও গাড়িগুলি সরে যাচ্ছে। এই অঞ্চলটি ‘ওয়াই জাংশন’ নামে পরিচিত, যেখানে ভারতীয় সৈন্যদের টহল পয়েন্টে যেতে বাধা দেওয়া হয়েছিল, যা এলএসি পর্যন্ত ভারতের দাবিকৃত অঞ্চল চিহ্নিত করে।
ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি
এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপ ভারত ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক পুনর্গঠনের ইঙ্গিত বহন করে। দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের সমাপ্তির লক্ষ্যে প্রায় দুই বছরের আলোচনা শেষে এলএসি-তে পরিস্থিতি পুনর্গঠন এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য এটি একটি বড় পদক্ষেপ।