আমিও যদি এমন হতে পারতাম….

অন্তর্বাস পরে ক্যাম্পাসে হাঁটছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া। সবাই তাঁকে দেখছেন। পাসের সব মহিলাদের গায়ে হিজাব-বোরখা। এই ছবি দেখে বা সেই অর্ধনগ্ন তরুণীকে দেখে আক্ষেপ করছেন লেখিকা…

Protest scene in Tehran with women demonstrating against the mandatory hijab; some holding banners. The image captures a moment of public dissent with Taslima Nasreen’s statements adding to the international debate on women’s rights in Iran

short-samachar

অন্তর্বাস পরে ক্যাম্পাসে হাঁটছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া। সবাই তাঁকে দেখছেন। পাসের সব মহিলাদের গায়ে হিজাব-বোরখা। এই ছবি দেখে বা সেই অর্ধনগ্ন তরুণীকে দেখে আক্ষেপ করছেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন। বলছেন, আমিও যদি এমন হতে পারতাম।

   

ইরানে হিজাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের (Protests Against Hijab) নতুন অধ্যায় খুললেন এক সাহসী তরুণী। তেহরানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে সকলের সামনে নিজেকে প্রকাশ্যে আনেন তিনি, যা সেখানে অভূতপূর্ব সাহসিকতার উদাহরণ হয়ে উঠেছে। কেবল অন্তর্বাসে থাকা অবস্থায় তিনি ক্যাম্পাসের মধ্য দিয়ে হেঁটে গিয়ে একটি শক্তিশালী বার্তা প্রদান করেন। এরপরই নিরাপত্তা বাহিনী তাকে আটক করে, গ্রেফতারের সময় তাকে নির্মমভাবে প্রহার করা হয় এবং তার মাথা রক্তাক্ত হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

বিশিষ্ট লেখিকা তসলিমা নাসরিন এই সাহসী তরুণীর জন্য নিজের মুগ্ধতা প্রকাশ করে বলেছেন, “ইচ্ছে করে আমি যদি এই মেয়েটির মতো সাহসী হতে পারতাম!” নাসরিন মনে করেন, মেয়েটির এই আচরণ আরও একটি নতুন প্রতিবাদের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যা ইরানের নারীদের জন্য উজ্জীবিত হবার বার্তা হতে পারে।

মাহসা আমিনির স্মৃতি ও বিক্ষোভের আগুন
মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর থেকে ইরানে হিজাব বিরোধী আন্দোলন নতুন মাত্রা পেয়েছে। ২০২২ সালে ইরানের নৈতিকতা পুলিশ মাহসাকে হিজাব ঠিকমতো না পরার অভিযোগে আটক করেছিল এবং পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে। এই ঘটনার পরই ইরানজুড়ে হিজাবের বিরুদ্ধে এক বিশাল প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে ওঠে, যেখানে ৫৫০ জনেরও বেশি প্রতিবাদী জীবন উৎসর্গ করেন।

হিজাবের বিরুদ্ধে তরুণীরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রতিবাদ করছে—কারও চুল কাটা, চুল দিয়ে প্রতিবাদের প্রতীক বানানো, হিজাব নেড়ে বা পোড়ানোর মাধ্যমে এই বিক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। এই তরুণী জানতেন তার জন্যও এমন কোনো পরিস্থিতি হতে পারে, তবু তিনি এভাবে প্রতিবাদ করেছেন। অনেকের মতে, এরকম আন্দোলনের একটি উদ্দেশ্য হল ইরানের নারীদের উপর চাপানো বাধ্যতামূলক পোশাকের বিরুদ্ধাচরণ করা।

নিরাপত্তা বাহিনীর নির্মমতা ও সম্ভাব্য পরিণতি
ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী হিজাববিরোধী প্রতিবাদী নারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। যারা এই ধরনের বিক্ষোভে অংশ নেয় তাদের আটক করা হচ্ছে, এমনকি অনেককে মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে। এই সাহসী তরুণীর ক্ষেত্রেও তার অনুরূপ পরিণতি হতে পারে। তাকে মানসিক হাসপাতালেও প্রেরণ করা হতে পারে, যা সাধারণত এমন প্রতিবাদীদের জন্য ব্যবহার করা হয়।

তসলিমা নাসরিনের প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
তসলিমা নাসরিন এই মেয়েটির সাহসিকতার প্রশংসা করে বলেন, “যখন অত্যাচার চরমে পৌঁছায়, তখন প্রতিবাদও চরম হতে হয়।” নাসরিন আরও বলেন, “যদি সব মেয়েই এমন ‘পাগলী’ হতে পারত!” এর মাধ্যমে তিনি ইঙ্গিত করেন যে এই ধরনের প্রতিবাদ প্রয়োজনীয় এবং যথাযথ।

এই ধরনের প্রতিবাদ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইরানের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। ইরানে নারীদের ওপর বাধ্যতামূলক হিজাব চাপিয়ে দেওয়ার এই প্রথার বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলি এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলি বারবার প্রশ্ন তুলেছে। তেহরানের এই তরুণীর সাহসিকতার ঘটনা ইরানের নারীদের অধিকারের জন্য এক স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে।