শনিবার পাকিস্তানের জাকোবাবাদে একটি মর্মান্তিক বাস দুর্ঘটনায় (Bus Accident in Jacobabad) পাঁচজন নিহত এবং ১৫ জন আহত হয়েছেন। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম এআরওয়াই নিউজ জানায়, থুল এলাকায় একটি যাত্রীবাহী কোচ খাদে পড়ে যায়। এই বাসটি বেলুচিস্তান থেকে পাঞ্জাবে যাওয়ার পথে ছিল।
দুর্ঘটনার পর আহত যাত্রীদের স্থানীয় একটি তালুক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, নিহতদের দেহও হাসপাতলে পাঠানো হয়েছে যেন মৃতদেহগুলির আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ দুর্ঘটনার শিকার যাত্রীরা মূলত পরিবারের সদস্য এবং কর্মসংস্থান উপলক্ষে পাঞ্জাবে যাচ্ছিলেন। আহতদের মধ্যে কিছু ব্যক্তির অবস্থা গুরুতর হওয়ার কারণে চিকিৎসকদের একটি বিশেষজ্ঞ টিম হাসপাতলে ডাকা হয়েছে।
এআরওয়াই নিউজের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, এই বছর মে মাসে জাকোবাবাদে ঘটে যাওয়া একটি দুর্ঘটনায় অন্তত একজন নিহত এবং ৩০ জনেরও বেশি আহত হয়েছিল, যখন একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের বাস উল্টে যায়৷ তখন দুর্ঘটনাটি দায়েভাল মাচ্চি গ্রামে ঘটে, যেখানে একটি বাস একটি খাদে পড়ে যায়।
পাকিস্তানে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, যা জনসাধারণের নিরাপত্তা এবং সড়ক ব্যবস্থাপনায় সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। দেশের সড়ক নিরাপত্তার অবস্থা সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদন, ‘পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার ট্রেন্ডস অ্যান্ড গ্যাপস ইন পাকিস্তান’ অনুযায়ী, “পাকিস্তানের পাকা সড়কের ঘনত্ব তুলনামূলকভাবে কম, রেলপথ ও বিমানবন্দরগুলোর মান হতাশাজনক এবং নির্বাচিত তুলনামূলক দেশের তুলনায় সামুদ্রিক বন্দরগুলোর মান কেবলমাত্র গ্রহণযোগ্য।”
পাকিস্তান একটি নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ, যেখানে সড়ক নিরাপত্তা নিয়মের অভাব রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি ২০২৩’ অনুযায়ী, পাকিস্তানে জরুরি সেবার জন্য কোনও জাতীয় আইন নেই। এছাড়া, আহতদের পুনর্বাসনের জন্য বিনামূল্যে সেবা দেওয়ার কোন আইনও নেই, যা সড়ক দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের এবং তাদের পরিবারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
দুর্ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন দ্রুত ত্রাণ এবং চিকিৎসা সহায়তার ব্যবস্থা করেছে। স্থানীয় হাসপাতালের ডাক্তার এবং নার্সদের একটি টিম আহতদের চিকিৎসায় নিয়োজিত রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনাগ্রস্ত এলাকায় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক একটি বিশেষ সভা আহ্বান করা হয়েছে।
এদিকে, স্থানীয় জনগণের মধ্যে এই দুর্ঘটনার কারণে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। তারা দাবি করেছেন, সড়ক ও যানবাহনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের প্রধান দায়িত্ব হওয়া উচিত। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, সড়কের অবস্থা এবং যানবাহনের প্রযুক্তিগত ত্রুটি সমস্যার মূল কারণ। তারা বলেন, “সরকারের উচিত সড়ক অবকাঠামো উন্নত করা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা।”
পাকিস্তানের সড়ক নিরাপত্তা সমস্যা শুধু একটি সাধারণ বিষয় নয়, এটি দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং অর্থনীতির উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা কমাতে এবং জনগণের জীবন রক্ষায় কঠোর আইন এবং পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে।
এটি একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করা উচিত, কারণ প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে। এই ধরণের ঘটনা যেন ভবিষ্যতে না ঘটে, সেজন্য সরকারের উচিত একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা, যাতে জনগণের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হয়।
স্থানীয় জনগণ এবং বিভিন্ন সংস্থা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যে, তাদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য সড়ক ব্যবস্থাপনায় দ্রুত এবং কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এ ধরনের দুর্ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেজন্য সড়কগুলোকে নিরাপদ করতে হবে এবং জনগণের নিরাপত্তার জন্য সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে।
এই ঘটনার পর, জাকোবাবাদবাসী এবং অন্যান্য অঞ্চলের বাসিন্দারা সরকারের কাছ থেকে নিরাপত্তার প্রত্যাশা করছেন। তারা আশা করছেন, সরকার এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত পদক্ষেপ নিতে সচেষ্ট হবে।