মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে তৃণমূল কর্মী খুনের (TMC Workers Murder Case) ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত আকাশ দত্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বহরমপুর থানার গোয়ালজান নিয়াল্লিশপাড়া এলাকার আকাশ দত্তকে পুলিশ উত্তরপ্রদেশ থেকে গ্রেফতার করেছে বলে জানা গেছে। ১৬ অক্টোবর ভোরে প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে দুষ্কৃতীদের হাতে প্রাণ হারান তৃণমূল কর্মী প্রদীপ দত্ত। এই ঘটনার পরপরই অভিযুক্ত আকাশ উত্তরপ্রদেশে পালিয়ে আত্মগোপন করেছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খুনের ঘটনা
প্রদীপ দত্ত প্রতিদিনের মতোই ১৬ অক্টোবর সকালে হাঁটতে বের হন। কিন্তু সেইদিন ভিন্ন ছিল। অভিযোগ, নাথপাড়া মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকার সময় একটি বাইকে করে দু’জন দুষ্কৃতি এসে তাঁর উপর গুলি চালায়। মুহূর্তের মধ্যে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা ও পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে প্রদীপ দত্তকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত হওয়ায় ঘটনাটিকে রাজনৈতিকভাবে দেখা শুরু করে স্থানীয় রাজনীতি। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করেন, এটি একটি পরিকল্পিত খুন এবং প্রদীপ দত্তকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে।
পুলিশি তদন্ত ও প্রধান অভিযুক্ত চিহ্নিত
খুনের ঘটনার পরপরই বহরমপুর থানার পুলিশ সক্রিয়ভাবে তদন্ত শুরু করে। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও প্রযুক্তিগত নজরদারির মাধ্যমে পুলিশ জানতে পারে যে, প্রদীপ দত্তকে গুলি চালানোর ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত আকাশ দত্ত। পুলিশের সন্দেহ হয় যে আকাশ দত্ত অপরাধ ঘটিয়ে বহরমপুর ছেড়ে পালিয়ে উত্তরপ্রদেশে আত্মগোপন করেছে। এরপরে একটি বিশেষ পুলিশ দলকে উত্তরপ্রদেশে পাঠানো হয় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার জন্য।
অভিযুক্তের গ্রেফতারি
৩১ অক্টোবর, উত্তরপ্রদেশে আকাশ দত্তকে গ্রেফতার করে বহরমপুর থানার পুলিশ। উত্তরপ্রদেশের স্থানীয় একটি আদালতে আকাশ দত্তকে হাজির করা হলে, বিচারক তাঁকে দু’দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। এই নির্দেশ অনুযায়ী বহরমপুর থানার পুলিশ আকাশ দত্তকে নিয়ে শুক্রবার রাতে বহরমপুরে পৌঁছায়।
বহরমপুরে আদালতে পেশ
১ নভেম্বর, বহরমপুরের মুর্শিদাবাদ সিজেএম আদালতে অভিযুক্ত আকাশ দত্তকে হাজির করা হয়। আদালতে হাজিরার সময় পুলিশ আদালতের কাছে জানায় যে, আকাশ দত্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন। আদালত এই আবেদন মঞ্জুর করে আকাশ দত্তকে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ
আকাশ দত্তের পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন, পুলিশ এই খুনের পিছনের কারণ, পরিকল্পনা এবং অন্যান্য সহযোগীদের নাম প্রকাশ করার জন্য তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। পুলিশ মনে করছে যে, প্রদীপ দত্তের খুনের পেছনে রাজনৈতিক বিরোধ বা ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণ থাকতে পারে। এছাড়াও, এই ঘটনার সঙ্গে আর কোনো ব্যক্তি জড়িত রয়েছে কিনা, সে বিষয়েও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
স্থানীয় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি
প্রদীপ দত্তের হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই গোটা বহরমপুর এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় মানুষ এই ঘটনার নেপথ্যে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতারের জন্য চাপ সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক দলের নেতারা এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করেছেন এবং অপরাধীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
পুলিশের বক্তব্য
পুলিশ জানিয়েছে, আকাশ দত্তকে আটক করা হলেও তদন্ত এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আরও তথ্য সংগ্রহ করার জন্য পুলিশ বিভিন্ন দিক থেকে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। তবে স্থানীয় মানুষকে আশ্বস্ত করতে পুলিশ বলেছে যে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে এবং অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হবে।
এখন দেখার বিষয়, পুলিশের তদন্তে আর কী কী তথ্য উঠে আসে এবং আকাশ দত্তের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কতদূর এগোতে পারে তদন্ত।