কালীপুজো শেষ হতে না হতেই যে উৎসবের দিকে মানুষের নজর থাকে তা হল ‘ভাইফোঁটা’ (Bhai Dooj 2024)। অন্যান্য উৎসবের পাশাপাশি এটাও বাঙালি সংস্কৃতির একটি বিশেষ উৎসব। প্রতি বছর কার্তিক মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব পালিত হয়। এই দিনটিকে ভাই-বোনের বিশেষ সম্পর্ককে উদযাপন করার পাশাপাশি উভয় পক্ষের জন্য সুখ, সমৃদ্ধি ও ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তবে ভাইফোঁটার পেছনে রয়েছে একাধিক পৌরাণিক কাহিনী এবং ঐতিহ্য, যা এই উৎসবের গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু সেই পৌরাণিক কাহিনীগুলো কি জানেন? ভাইফোঁটার অন্যতম প্রচলিত পৌরাণিক কাহিনী হল ধর্মরাজ যমের সাথে তাঁর বোন যমুনার সম্পর্কের গল্প। যমুনা তার ভাই যমকে ফোঁটা দেয় এবং প্রতিজ্ঞা করেন যে, যিনি এই দিনে তার ভাইয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, তিনি দুঃখ ও বিপদ থেকে মুক্ত হবেন।
যমুনার এই প্রার্থনার ফলে যম যাদের প্রাণ রক্ষা করেন, তাদের জন্য ভাইফোঁটার গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। এই কাহিনী ভাই-বোনের সম্পর্কের ভিত্তি রচনা করে এবং ভাইফোঁটার আবেগকে আরও গভীর করে তোলে। আরেকটি কাহিনী হল রাজা মহাবীর এবং তার বোন শীতার। শীতার প্রার্থনার মাধ্যমে মহাবীর বিজয়ী হন এবং শীতা তার ভাইয়ের সুরক্ষার জন্য উৎসর্গিত করে ভাইফোঁটা। এভাবে ভাইফোঁটা শুধু এক উৎসবই নয়, বরং ভাই-বোনের প্রতি দায়িত্ব এবং ভালোবাসার একটি প্রতীক হয়ে ওঠে।
এই উৎসবের কিছু রীতি রয়েছে। ভাইফোঁটায় সাধারণত একটি বিশেষ রীতি অনুসরণ করা হয়। বোন তার ভাইয়ের জন্য একটি বিশেষ পুজোর আয়োজন করে, যেখানে সে ভাইয়ের দীর্ঘায়ু ও সাফল্য কামনা করে। ভাইয়ের মাথায় চন্দনের টিপ দিয়ে ভাইকে মিষ্টিমুখ করিয়ে উপহার দেয় বোনেরা। এই রীতি ভাই-বোনের মধ্যে সম্পর্ককে আরও মজবুত করে। ভাইয়েরাও এই দিন তাদের বোনকে উপহার দিয়ে থাকে, যা তাদের ভালোবাসা এবং সম্মানের প্রতীক।
তবে ভাইফোঁটা শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটি সমাজের সাংস্কৃতিক কাঠামোকে পরিবর্তন করতে সাহায্য করে। এটি পারিবারিক বন্ধনকে দৃঢ় করে, যেখানে ভাই-বোন একে অপরের প্রতি যত্ন নেওয়ার ও সুরক্ষা প্রদানের অঙ্গীকার করে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাইফোঁটার বিভিন্ন রীতি দেখা যায়, যা এই উৎসবের বৈচিত্র্যকে প্রকাশ করে। কিছু অঞ্চলে এটি বিশেষভাবে উদযাপন করা হয়। তবে বর্তমান সমাজে ভাইফোঁটার রীতি কিছুটা পরিবর্তিত হলেও এর মৌলিক সংজ্ঞা অক্ষুণ্ন রয়েছে।
শহুরে জীবনে যেখানে অনেক পরিবার বিভিন্ন কারণে একসাথে মিলিত হতে পারে না, সেখানে এই দিনটি পরিবারের সদস্যদের একত্রিত হওয়ার একটি উপলক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে ভাইফোঁটা এখন ভার্চুয়াল ফরম্যাটেও উদযাপিত হচ্ছে, যেখানে ভাই-বোনরা ভিডিও কলের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হন এবং অনুভূতিগুলি ভাগাভাগি করেন। ভাইফোঁটার প্রতীকী অর্থ অনেক গভীর। এটি কেবল একসাথে উদযাপন করা নয়, বরং পারস্পরিক স্নেহ ও বিশ্বাসের প্রতীক।
বোনেরা ভাইদের জন্য নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা প্রদান করে এবং ভাইয়েরা তাদের বোনদের জন্য জীবনের বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করার শক্তি প্রদান করে। এই সম্পর্কটি শুধু পারিবারিক নয়, বরং সামাজিক জীবনেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বর্তমানে পৌরাণিক কাহিনী, রীতি এবং সামাজিক প্রভাবের মাধ্যমে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক উৎসবে পরিণত হয়েছে।