শাসক বিধায়কের বিরুদ্ধে পোস্টার, সৌজন্যে তৃণমূলের সম্মান রক্ষা কমিটি

শাসক বিধায়কের বিরুদ্ধে পোস্টার। বসিরহাট উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক (TMC MLA) রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ‘সন্ধান চাই’ পোস্টার (Posters) পড়েছে এলাকা জুড়ে। ঘটনা প্রকাশে আসতে রাজনৈতিক তরজা…

TMC MLA Posters

শাসক বিধায়কের বিরুদ্ধে পোস্টার। বসিরহাট উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক (TMC MLA) রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ‘সন্ধান চাই’ পোস্টার (Posters) পড়েছে এলাকা জুড়ে। ঘটনা প্রকাশে আসতে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। এই পোস্টারগুলি কেবল একটি ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ নয়, বরং এটি রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক এবং দলের অভ্যন্তরীণ গতিশীলতার একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে। পোস্টারগুলোতে বলা হয়েছে যে, বিধায়কের দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে এলাকার মানুষ তার প্রতি অসন্তুষ্ট।

বিধায়ক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ভোটের পর থেকে তিনি এলাকায় প্রকাশ্যে উপস্থিত হননি এবং স্থানীয়দের সমস্যাগুলোর প্রতি তার কোন আগ্রহ নেই। এটি একটি সাংগঠনিক সমস্যা হিসেবেও দেখা হচ্ছে, যেখানে জনগণের কাছে নেতাদের দায়বদ্ধতার অভাব তৈরি হচ্ছে। পোস্টারগুলোতে এমনকি বিধায়কের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকেও তার খোঁজ পাওয়া যায় নি বলে উল্লেখ রয়েছে।

   

এই পরিস্থিতিতে রফিকুল ইসলামের এই ভূমিকা রাজনৈতিক দায়িত্বজ্ঞানহীনতার লক্ষণ বলে মনে হতে পারে। তিনি পাল্টা অভিযোগ করেছেন যে, এই পোস্টারগুলি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের ফল। তিনি বলেন, “এরা হলেন স্বার্থান্বেষী, যারা মিথ্যা প্রচার করছে।” তবে, প্রশ্ন হল, যদি তিনি সত্যিই এলাকার মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ হন, তবে কেন এতদিন তারা তার উপস্থিতি অনুভব করেনি?

এদিকে, ব্লক সভাপতি এস্কেন্দার গাজির বক্তব্যে অভিযোগের তির সিপিএমের বিরুদ্ধে। তিনি দাবি করেন, বিরোধী দলের সদস্যরা এই পোস্টার সাঁটানোর কাজ করেছে। তবে, এটি আরও একটি ইঙ্গিত দেয় যে, দলের অভ্যন্তরে অস্থিরতা এবং নেতৃত্বের অসংগতি বিদ্যমান। একজন নির্বাচিত প্রতিনিধির উপর জনগণের যে ধরনের আস্থা থাকা উচিত, সেটি যদি নষ্ট হয়, তবে তা দলের সমগ্র সাফল্যে প্রভাব ফেলবে।

বিধায়ক হিসেবে রফিকুল ইসলামের অভিজ্ঞতা এবং দলের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, যদি তিনি জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন, তবে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। জনগণের কাছে ফিরে আসার জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক কৌশলের পরিবর্তন। তিনি যদি জনগণের সমস্যাগুলি সরাসরি শুনতে এবং সমাধানে উদ্যোগী হন, তবে তা তার রাজনৈতিক অবস্থানকে পুনর্গঠনে সাহায্য করবে।

সিপিএমের প্রাক্তন নেতা সুবিদ আলি গাজি যে এই ঘটনাটিকে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “দলের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা আসন্ন লোকসভা উপ নির্বাচনে একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।” আসলে, এই ধরনের পোস্টার সাঁটা এক ধরনের রাজনৈতিক আক্রমণ, যা দলের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েনের ছবি ফুটিয়ে তোলে।

তৃণমূলের জন্য এই পরিস্থিতি একটি শিক্ষা। রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয় এবং জনগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারলে, দলটি আগামী নির্বাচনে আরও শক্তিশালী হবে। জনগণের স্বার্থ রক্ষার মাধ্যমে রাজনৈতিক সম্পর্ক এবং নেতৃত্বের দায়বদ্ধতা একটি দলের সফলতার মূল চাবিকাঠি। বিধায়ক রফিকুল ইসলামের সামনে চ্যালেঞ্জগুলি স্পষ্ট, তবে যদি তিনি এই চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করতে পারেন এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন, তবে এটি তার রাজনৈতিক জীবনে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।