জামাত ইসলামির হিন্দু সদস্যদের শপথবাক্য কী? সীমান্ত এলাকায় ‘সংঘ-জামাত সক্রিয়’

সাংগঠনিক নিয়মে কড়া জামাত ইসলামি। সংগঠনটি অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ তালিকা থেকে মুক্ত হয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনার মদতকারী হিসেবে চিহ্নিত তৎকালীন যুক্ত পাকিস্তানের জামাত…

Bangladesh

সাংগঠনিক নিয়মে কড়া জামাত ইসলামি। সংগঠনটি অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ তালিকা থেকে মুক্ত হয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনার মদতকারী হিসেবে চিহ্নিত তৎকালীন যুক্ত পাকিস্তানের জামাত সংগঠন। গণহত্যায় জড়িত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জামাতের বাংলাদেশি শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি হয়।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শাসন ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর জামাত নেতৃত্ব আগামী জাতীয় নির্বাচনে বৃহত্তম শক্তি হিসেবে উঠে আসার লক্ষ্য নিয়েছে। এই লক্ষ্যে জামাত ইসলামির বাংলাদেশ সূরা কমিটি (শীর্ষ সাংগঠনিক স্তর) সংগঠনের মধ্যে অ-মুসলিমদের অন্তর্ভুক্তিকরণ শুরু করেছে। জামাত ইসলামি বাংলাদেশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, ইসলাম অনুসারী না হলেও সংগঠনে আসা যাবে। এমন কাজ শুরু হয়েছে। এতে হিন্দুদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। খ্রিষ্টান, বৌদ্ধদের মধ্যেও জামাত সাংগঠনিক কাজ শুরু করেছে।

   

মুসলিম সংখ্যাগুরু বাংলাদেশের সবথেকে বড় সংখ্যালঘুরা হলো হিন্দু। এরপরেই আছে বৌদ্ধ ও খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা। উল্লেখ্য ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের গণহত্যায় জামাত ও সহযোগী একাধিক সংগঠন জড়িত। অভিযোগ বারবার প্রত্যাখান করেছে এই সংগঠন। বাংলাদেশ তৈরির পর জামাতের শীর্ষ নেতারা দীর্ঘ সময় পাকিস্তানে ছিলেন।

Bangladesh

গত কয়েক দশকে জামাত ইসলামি ও অন্যান্য ইসলামি সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে সরব যুক্তিবাদী-নাস্তিক লেখকরা বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত। সামাজিক মাধ্যমে তাদের অভিযোগ, শেখ হাসিনার সরকার ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বললেও দেশে ইসলামি ধর্মীয় সংগঠনগুলির চাপের কাছে মাথা নুইয়ে ছিল। আরও অভিযোগ, ভারতে হিন্দুত্ববাদী আরএসএস ঘনিষ্ঠ বাংলাদেশের হিন্দু সংগঠনের নেতারা জামাতের ‘বন্ধু’। তাদেরই উদ্যোগে ভারত সীমান্ত এলাকায় জামাত-সংঘ একযোগে কাজ করছে। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হলো। পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও ত্রিপুরা সংলগ্ন এলাকা।

বাংলাদেশের অন্যতম সংবাদপত্র ‘যুগান্তর’ জানাচ্ছে, সীমান্তের পশ্চিমবঙ্গ সংলগ্ন রংপুরের পীরগাছায় সদর ইউনিয়নে জামাত ইসলামির কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপজেলা জামাত নেতা আব্দুর জব্বার জানান, এই সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ভবেশ চন্দ্র বর্মণ। তিনি স্থানীয় মির্জাপুর ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। এই শাখার জামাত ইসলামির সাধারণ সম্পাদক ওষুধ ব্যবসায়ী বিজন চন্দ্র দাস। জামাত ইসলামিতে অংশগ্রহনের জন্য হিন্দুদের মধ্যে ছিল বিপুল উৎসাহ।

জামাত ইসলামির হিন্দু শাখায় যোগ দিতে শপথবাক্য পাঠ করানো হয়। দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, চার বিষয়ে একমত হয়ে থাকলে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ যে কেউ এই শাখার অধীনে দলভুক্ত হতে পারবেন। চারটি বিষয়ে শপথ নিতে হবে-
১. বাংলাদেশ জামাত ইসলামির সদস্য বা সদস্যা হিসেবে সাংগঠনিক নিয়ম শৃঙ্খলা ও সিদ্ধান্তসমূহ নিষ্ঠার সঙ্গে মেনে চলতে হবে।
২. জামাতের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নকে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।
৩. বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য একনিষ্ঠভাবে ভূমিকা পালন করতে হবে।
৪. উপার্জনে অবৈধ পন্থা অবলম্বন করা যাবে না।

সম্প্রতি বাংলাদেশের হিন্দু নেতা ও ভারতের আরএসএস ঘনিষ্ঠ গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেছেন ‘জামায়াত যেমন সৎ লোকের শাসন চায়, আমরা হিন্দুরাও সৎ লোকের শাসন চাই।’ তার এই মন্তব্য ও একাধিকবার জামাত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক বারবার বিতর্ক তৈরি করে।