মানালী দত্ত, বহরমপুর: মুর্শিদাবাদে (Murshidabad) পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বোমাবাজি এবং বোমা মজুদের ঘটনা বেড়েই চলেছে। এবারে সালার থানার অন্তর্গত কান্দরা এলাকায় একটি বিস্ফোরক ঘটনা প্রকাশ্যে এলো। শুক্রবার রাতে পুলিশ অভিযানে তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য স্যামপুল সেখের বাড়ি থেকে ১০টি তাজা বোমা উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় এলাকায় নতুন করে উত্তেজনার সঞ্চার হয়েছে।
পূর্বে দুর্গাপুজোর সময় সালারের কান্দরা অঞ্চলে শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে বোমাবাজির ঘটনা ঘটে, যেখানে মৃত্যু হয় এক ব্যক্তির। এই ঘটনা নিয়ে পুলিশের চোখে এলাকাটি সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। দুর্গাপূজার পর থেকেই পঞ্চায়েত সদস্য স্যামপুল সেখের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না, এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্যে তার অনুপস্থিতি ঘিরে সন্দেহ দানা বাঁধে। এরই মধ্যে গতকাল রাতে পুলিশ দল অভিযানে নেমে স্যামপুল সেখের বাড়িতে তল্লাশি চালায় এবং সেখানে মজুদ রাখা ১০টি তাজা বোমা উদ্ধার করে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বোমা মজুদ রাখার চল রয়েছে। পুলিশ ধারণা করছে, বিভিন্ন দাঙ্গা ও সংঘর্ষে এ ধরনের বোমা ব্যবহার করা হয়। স্থানীয় এক পুলিশকর্তা জানান, “পুজোর সময় শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে বোমা ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়ার পর থেকেই আমরা এলাকাটির উপর নজর রেখেছি। স্যামপুল সেখের বাড়িতে তল্লাশি চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, এবং সেই অভিযানে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক পাওয়া গেছে।”
তল্লাশির পর পরই বোমা নিষ্ক্রিয় করার জন্য বোম স্কোয়াড দলকে ডেকে আনা হয়। স্কোয়াডের সদস্যরা নিষ্ক্রিয় করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ওই বোমাগুলি একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে নিয়ে গিয়ে নিরাপদ স্থানে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করেন।
এদিকে স্যামপুল সেখের খোঁজে তল্লাশি চালিয়ে গেলেও এখনো তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ সন্দেহ করছে যে তিনি এলাকায় অশান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্যে বোমাগুলি মজুদ রেখেছিলেন। তবে অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্যের অনুপস্থিতির কারণে পুরো ঘটনার পেছনের ষড়যন্ত্র এখনো উদ্ঘাটিত হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য অনুযায়ী, রাজনৈতিক বিরোধের জেরেই এই বোমা মজুদের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। এলাকাবাসীরা জানান, সালার অঞ্চলে এমন ঘটনা মোটেও নতুন নয়, বরং প্রতিবারই কোনো না কোনো গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে বোমা মজুদ করে রাখে। স্থানীয় এক প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, “বোমা রেখে বোমাবাজি ঘটিয়ে এলাকায় ভয় দেখানো হচ্ছে, যার ফলে আমরা সাধারণ মানুষ প্রতিদিন আতঙ্কে থাকি। প্রশাসনের উচিত সঠিক তদন্ত করে দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া।” বর্তমানে পুলিশ স্যামপুল সেখের সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে এবং এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্যদের সনাক্তকরণের জন্য অনুসন্ধান চালাচ্ছে।