জলপাইগুড়ি: ডুয়ার্সের সরকারি মহলে জাল নথী তৈরির অভিযোগ তদন্তে নেমেছে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (CBI)। গত মঙ্গলবার জলপাইগুড়ির মালবাজারে সিবিআই-এর একটি বিশেষ দল হানা দেয় এবং বিভিন্ন সরকারি দফতরে নথি তৈরির কাজে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। অভিযোগ উঠেছে, পাসপোর্ট তৈরির সময় জমা দেওয়া হয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি, যেমন আধার কার্ড এবং জন্মের পরিচয় পত্র, যা আসলে জাল।
সূত্রের খবর, জলপাইগুড়ির মালবাজার, চালসা এবং ময়নাগুড়ি এলাকায় সিবিআই-এর দল নোটিশ দিয়ে কিছু ব্যক্তিকে ডেকে পাঠিয়েছে। এদের মধ্যে মাল পৌরসভার এক কর্মীও রয়েছেন। জেলা পুলিশ সুপার খান্ডবাহালে উমেশ গণপথ টেলিফোনে নিশ্চিত করেছেন যে সিবিআই তদন্ত করছে, তবে বিস্তারিত তথ্য জানেন না তিনি।
সিবিআই-এর এ অভিযান নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এই চক্রের মাধ্যমে জাল নথী তৈরি করে, প্রতারণার মাধ্যমে পাসপোর্ট তৈরি করার অভিযোগ দীর্ঘদিন থেকেই স্থানীয় প্রশাসনের কাছে ছিল। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
গতকাল, বুধবার বিকেল নাগাদ সিবিআই-এর একটি দল মালবাজারের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। তারা দুইজন করে ভাগ হয়ে কয়েকটি স্থানে তদন্ত করেন এবং কিছু ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সিবিআই-এর এই তদন্তে জলপাইগুড়ির স্থানীয় প্রশাসনের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই মনে করেন, স্থানীয় প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে এই ধরনের কার্যকলাপ সম্ভব হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার বেশ কয়েকটি দফতরে জাল নথী তৈরির চক্র গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে এই জাল নথীর ব্যবহার বেড়ে গেছে। ফলে অযাচিতভাবে অনেকে সরকারি সুযোগ-সুবিধা লাভ করছেন এবং প্রকৃত আবেদনকারীরা সমস্যায় পড়ছেন।
সিবিআই-এর অভিযানে যে সমস্ত নথি জাল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আধার কার্ড এবং জন্মের পরিচয় পত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ নথি রয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের মধ্যে ভয় এবং উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সিবিআই-এর এই তদন্তের ফলে স্থানীয় প্রশাসনে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, মাল পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান উৎপল ভাদুড়ি বলেছেন, “এক কর্মীকে সিবিআই নোটিশ পাঠিয়েছে এবং কিছু ব্যক্তিগত নথি চাওয়া হয়েছে। তবে এটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিষয় এবং পৌরসভার সঙ্গে এর কোনো যোগাযোগ নেই।”
নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সিবিআই যদি প্রয়োজন মনে করে, তবে এই ব্যক্তিদের দিল্লিতে ডেকে পাঠাতে পারে। এই কারণে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সিবিআইয়ের আগমন নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। কারণ, যদি কোনো কর্মকর্তার জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে, তাহলে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর হয়ে দাঁড়াবে।
স্থানীয় এলাকাবাসীরা সিবিআইয়ের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা আশা করেন, এই তদন্তের মাধ্যমে ডুয়ার্সের সরকারি দফতরগুলোতে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা হবে এবং জাল নথী তৈরির চক্রের মূল হোতাদের গ্রেপ্তার করা হবে।
সিবিআইয়ের তদন্ত কার্যক্রম নিয়ে অনেকেই মন্তব্য করেছেন যে, এটি সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনবে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দরজা খুলে দেবে। এই অভিযানের ফলে যদি সরকারি দফতরগুলোতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা আরও বাড়বে।