তুফানগঞ্জে সরকারি লাইসেন্স প্রাপ্ত মদের ভাটিখানা ভাঙচুর মহিলাদের

তুফানগঞ্জের (Tufanganj) ধলপল সাহাপাড়ায় সরকারি লাইসেন্স প্রাপ্ত মদের ভাটিখানা ভাঙচুর করেছেন স্থানীয় মহিলারা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে তুফানগঞ্জ ১ নম্বর ব্লকের এই এলাকায়।…

Tufanganj as Women Vandalize Licensed Liquor Shop

তুফানগঞ্জের (Tufanganj) ধলপল সাহাপাড়ায় সরকারি লাইসেন্স প্রাপ্ত মদের ভাটিখানা ভাঙচুর করেছেন স্থানীয় মহিলারা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে তুফানগঞ্জ ১ নম্বর ব্লকের এই এলাকায়। মহিলাদের অভিযোগ, গ্রামের ভেতর মদের ভাটিখানা চালু হলে গ্রামবাসীর জীবনযাত্রা ব্যাহত হবে। তাদের দাবি, গ্রামের ছোট ছোট বাচ্চা এবং পরিবারগুলোর জন্য এটি একটি বিপদজনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে, বাড়ির পুরুষরা মদের নেশায় আসক্ত হয়ে সংসারে অশান্তি বাড়াবে বলে আশঙ্কা করছেন গ্রামের মহিলারা। একই সঙ্গে মহিলারা নিজেদের সুরক্ষা নিয়েও উদ্বিগ্ন।

বৃহস্পতিবারই ভাটিখানার উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই স্থানীয় মহিলারা সেখানে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখান এবং ভাটিখানাটি ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় ঘটনাস্থলে তুফানগঞ্জ থানার পুলিশ এবং আবগারি দপ্তরের কর্মীরা উপস্থিত হন।

   

মহিলা সমাজের ক্ষোভ
এলাকার মহিলারা স্পষ্ট জানিয়েছেন, তারা এই ভাটিখানার অনুমতি দিতে রাজি নন। গ্রামের মধ্যে এ ধরনের ব্যবসা চালু হলে ছোট ছোট বাচ্চারা এর দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে এবং পারিবারিক জীবনে সমস্যা বাড়বে। এক মহিলার কথায়, “পুরুষেরা মদের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়লে পরিবারের অশান্তি বাড়বে। এছাড়া, আমাদের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়বে। আমরা এই পরিস্থিতি কিছুতেই মেনে নিতে পারি না।”

তাদের অভিযোগের মধ্যে সুরক্ষার বিষয়টি বারবার উঠে এসেছে। গ্রামের মহিলারা মনে করছেন, মদের দোকান চালু হলে তাদের সামাজিক এবং ব্যক্তিগত জীবনে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। সেই কারণেই তারা এমন কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

মালিকের প্রতিক্রিয়া
অন্যদিকে, মদের ভাটিখানার মালিক জয়দেব সরকার পুরো বিষয়টিকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী, বিজেপির ১ নম্বর মন্ডল সভাপতি যুগলকিশোর দাসের পরিকল্পনায় বাইরের মহিলাদের নিয়ে এসে এই ভাঙচুর চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, “এটি একটি সরকারি লাইসেন্স প্রাপ্ত দোকান। এখানে স্থানীয় মহিলারা ছিল না, বাইরের লোকজন এনে এই ভাঙচুর করা হয়েছে।”

তবে, যুগলকিশোর দাস এই অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তার বক্তব্য, “এটা গ্রামবাসীরই প্রতিবাদ। গ্রামের সচেতন মহিলারা নিজেদের স্বার্থেই এই ভাঙচুর চালিয়েছেন। এর সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই।”

প্রশাসনের ভূমিকা
ঘটনাস্থলে তুফানগঞ্জ থানার পুলিশ এবং আবগারি দপ্তরের কর্মীরা দ্রুত উপস্থিত হন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। তবে উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হলেও, এলাকায় এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পুলিশ ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

এই ঘটনায় রাজনৈতিক রং লাগার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, বিষয়টি শুধুমাত্র সামাজিক বা পারিবারিক সমস্যা নয়, এর মধ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও থাকতে পারে।

তুফানগঞ্জের এই ঘটনা প্রকাশ করে দিয়েছে, গ্রামের মধ্যে মদের দোকান নিয়ে কীভাবে সমাজের বিভিন্ন স্তরে উদ্বেগ এবং অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। সরকারি লাইসেন্স থাকলেও, স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুভূতির গুরুত্ব রয়েছে। এদিকে, পুলিশের তদন্ত এবং প্রশাসনের ভূমিকা আগামী দিনে এই ঘটনার পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করবে।