দুশ্চিন্তায় প্রহর গুনছে সুন্দরবন, ‘দানা’-র আতঙ্কে গ্রামবাসীরা

দুশ্চিন্তায় প্রহর গুনছে সুন্দরবন (Sundarban), ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’-র (Cyclone Dana) আতঙ্কে গ্রামবাসীরা। সুন্দরবনের মানুষদের মধ্যে চলছে চরম উদ্বেগ। আজ, ২৪ অক্টোবর, ২০২৪, দুপুরের পর থেকেই ‘দানা’…

Cyclone Dana

দুশ্চিন্তায় প্রহর গুনছে সুন্দরবন (Sundarban), ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’-র (Cyclone Dana) আতঙ্কে গ্রামবাসীরা। সুন্দরবনের মানুষদের মধ্যে চলছে চরম উদ্বেগ। আজ, ২৪ অক্টোবর, ২০২৪, দুপুরের পর থেকেই ‘দানা’ শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যার উপকূলের দিকে দ্রুত এগিয়ে আসছে। উপকূলবর্তী এলাকার মানুষজন গভীর উদ্বেগে রয়েছেন, কারণ এই অঞ্চলের আবহাওয়া পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা অনিল সর্দার জানাচ্ছেন, “আমরা রাতে ঘুমাতে পারছি না। খবরের মাধ্যমে জানতে পারছি, দানা খুবই শক্তিশালী এবং আমাদের গ্রামকে আক্রান্ত করতে পারে।” গ্রামে এখনই পুকুরের জল বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং স্থানীয় নদীগুলির জল স্তরও বাড়ছে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে বৃষ্টি, যা রাতের মধ্যে আরও বাড়ার আশঙ্কা।

   

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, দানা ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সুন্দরবন এলাকার উপর বাতাসের গতিবেগ ১০০ থেকে ১১০ কিমি প্রতি ঘণ্টায় পৌঁছাতে পারে। প্রশাসন ইতিমধ্যেই আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দিয়েছে, কিন্তু গ্রামবাসীরা সেখানেও যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করছেন না। তাদের অভিযোগ, সেখানে তাদের জীবিকার উপকরণ যেমন মাছ ধরার নৌকা এবং জাল থাকবে না, যা তাদের খাদ্য ও রোজগারের মূল উৎস।

গ্রামের বাসিন্দা মায়া বেগম বলছেন, “আমরা নিরাপদে থাকতে চাই, কিন্তু আমাদের জিনিসপত্রের কী হবে? আমাদের ঘর-বাড়ি, মাছ ধরার নৌকা, সবকিছুই যদি নষ্ট হয়ে যায়?” তাদের মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ, ভয়।

স্থানীয় প্রশাসন ইতিমধ্যে জরুরি পরিষেবা প্রস্তুত করতে শুরু করেছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসকরা এবং স্বাস্থ্য কর্মীরা পর্যাপ্ত সংখ্যায় উপস্থিত রয়েছেন। তাও, গ্রামবাসীদের মধ্যে একটি উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, সরকার তাদের নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি নিচ্ছে না।এই পরিস্থিতিতে, কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং যুব সংগঠনও গ্রামের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের সচেতন করতে এবং তাদের মধ্যে খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী বিতরণ করতে কাজ করছে।
স্থানীয় কৃষক ও মৎস্যজীবীদের মধ্যে আলোচনা চলছে, কীভাবে তারা নিজেদের রক্ষা করতে পারেন। অনেকেই মনে করছেন, সমুদ্রের জলের স্তর বাড়লে তাদের গ্রামগুলো সম্পূর্ণ তলিয়ে যেতে পারে। তাঁরা যদি সময়মতো নিরাপদ স্থানে চলে যেতে না পারেন, তবে তাদের পরিবার এবং সম্পত্তির জন্য বড় বিপদ অপেক্ষা করছে,” জানিয়েছেন স্থানীয় জেলে শ্যামল দে।

এছাড়াও, সুন্দরবন অঞ্চলের অন্যান্য গ্রামের মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। অনেকেই বলছেন, তারা এখনও প্রাথমিক প্রস্তুতি নিতে পারেননি এবং বর্ষাকালে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিপর্যয়ের কথা মনে করে তাদের ভয় বাড়ছে।

অন্যদিকে, আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় দানা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে এবং শুক্রবার সকালে পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যার উপকূলে আঘাত হানতে পারে। প্রশাসনের তরফ থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।সব মিলিয়ে, সুন্দরবনের গ্রামগুলো এখন দানা ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্কে প্রহর গুনছে। এই উদ্বেগের মাঝেও গ্রামবাসীরা আশা করছেন, তাদের প্রস্তুতি মাধ্যমে তারা এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারবেন।