২৩ অক্টোবর, ২০২৪: কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী (Priyanka Gandhi) আজ, বুধবার ওয়েনাড (Wayanad) লোকসভা উপনির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিলের মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক যাত্রার নতুন অধ্যায় শুরু করলেন। রাহুল গান্ধীর আসনটি খালি হওয়ার পর প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর এ পদক্ষেপ কংগ্রেসের জন্য একটি বড় প্রয়োজনীয়তা হয়ে উঠেছে, যেখানে রাহুল গান্ধী রায়বেরিলি আসনটি ধরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর জন্য এই নির্বাচন আরও তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি তাঁর প্রথমবারের মতো নিজের জন্য ভোট প্রার্থনা করা। তিনি আগে তার বাবা, মা এবং ভাইয়ের জন্য দীর্ঘকাল প্রচার করেছেন, কিন্তু নিজের প্রার্থিতার জন্য জনগণের সমর্থন চেয়ে তাঁর এটি প্রথম অভিজ্ঞতা।
প্রথমবার নিজের জন্য ভোট চাওয়া
একটি সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, “আমি ১৭ বছর বয়সে আমার বাবা রাজীব গান্ধীর জন্য প্রচার শুরু করেছিলাম। এরপর মায়ের জন্য, ভাইয়ের জন্য, এবং বহু সহকর্মীর জন্য ভোট চেয়েছি। কিন্তু এবারই প্রথম আমি নিজের জন্য ভোট চাইছি। এটা একেবারে অন্যরকম অনুভূতি।”
এই উপলক্ষে তিনি তাঁর অতীত রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করেন এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ওয়েনাডের জনগণকে ধন্যবাদ জানান, যারা তার ভাই রাহুল গান্ধীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন যখন পুরো বিশ্ব তাঁর বিরুদ্ধে ছিল। “আপনারা আমার ভাইয়ের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁকে সাহস এবং শক্তি দিয়েছিলেন লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য,” প্রিয়াঙ্কা বলেন।
প্রিয়াঙ্কার বক্তব্যে জনমতের মনোযোগ
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আরও উল্লেখ করেন যে, ওয়েনাডের জনগণ যেভাবে ভূমিধসের সময় সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে, তাতে তিনি মুগ্ধ। এছাড়াও, তিনি বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ঘৃণার রাজনীতির নিন্দা করেন, এবং বলেন, “আমরা একটি অদ্ভুত সময়ে বসবাস করছি, যেখানে ক্ষমতাসীনরা শুধুমাত্র ক্ষমতায় থাকার জন্য ঘৃণা ছড়াচ্ছে। তারা গণতন্ত্রকে খর্ব করতে এবং অপরাধমূলক উপায়ে ক্ষমতা ধরে রাখতে দ্বিধা করে না।”
তিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের কথা উল্লেখ করে বলেন যে, মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে যে জাতীয় আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তার মূল প্রেরণা ছিল অহিংসা এবং সমস্ত ধর্মের সম্মান। “আমাদের জাতির ভিত্তি ছিল সত্য, ন্যায়বিচার এবং সমানাধিকার, এবং আজ আমরা সেই মূল্যবোধের জন্য লড়াই করছি,” প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন।
রাহুল গান্ধীর ভূমিকা এবং ভারত জোড়ো যাত্রার উল্লেখ
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী তাঁর ভাই রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র উল্লেখ করেন এবং ওয়েনাডের জনগণের সমর্থনের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, “আমার ভাই আপনাদের থেকে যে সমর্থন পেয়েছেন, তা তাঁকে লড়াই চালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।” প্রিয়াঙ্কা প্রতিশ্রুতি দেন যে, তিনি রাহুল গান্ধীর রেখে যাওয়া কাজকে সামনে নিয়ে যাবেন এবং ওয়েনাডের জনগণের সমস্যাগুলি সরাসরি তাদের কাছ থেকে শুনতে চান।
প্রিয়াঙ্কা বলেন, “আমার ভাই আমাকে এই এলাকার বিভিন্ন সমস্যার কথা ব্যাখ্যা করেছেন, এবং আমি নিজে এসে আপনাদের সমস্যাগুলি বুঝতে চাই।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ওয়েনাডের জনগণের সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করতে চান এবং তাদের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
নৈতিক মূল্যবোধের উপর জোর
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী তাঁর ভাষণে নৈতিকতা, সত্য এবং ন্যায়বিচারের উপর জোর দিয়ে গীতার শিক্ষার কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন, “গীতার শিক্ষায় সত্যের জয়, কোরানের শিক্ষায় ন্যায়বিচার, এবং যিশুখ্রিস্টের শিক্ষায় ভালোবাসা রয়েছে।” তিনি এই শিক্ষাগুলিকে ভারতের মৌলিক মূল্যবোধ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং বলেন, “বুদ্ধের অহিংসা আমাদের শিখিয়েছে যে ভালোবাসা ছাড়া কোনো কিছু অর্থপূর্ণ নয়।”
With the blessing of the people of Wayanad, @priyankagandhi ji filed her nomination from Wayand Loksabha Constituency.
My best wishes to her as she takes a leap forward in public service.@kharge @RahulGandhi @kcvenugopalmp @INCIndia #Wayanadinte_Priyanka pic.twitter.com/PipgL2xPIT
— Sachin Pilot (@SachinPilot) October 23, 2024
রাজনৈতিক প্রতিযোগী এবং সমর্থন
ওয়েনাড উপনির্বাচনে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর প্রতিপক্ষ হিসেবে লড়ছেন এলডিএফের প্রার্থী সত্যন মোকেরি, যিনি ইন্ডিয়া ব্লকের জোটসঙ্গী। এছাড়াও বিজেপির প্রার্থী নভ্যা হারিদাসও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এই উপনির্বাচন নিয়ে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে. রেভান্থ রেড্ডি, প্রাক্তন ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল, এবং কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কে.সি. ভেণুগোপাল প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর প্রার্থিতার জন্য সমর্থন জানাতে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
ওয়েনাড উপনির্বাচনের তারিখ
ওয়েনাড লোকসভা উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৩ নভেম্বর। নির্বাচনের ফলাফল কংগ্রেসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের উপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে।