জম্মু ও কাশ্মীরে তিন পরিযায়ী শ্রমিককে গুলিতে হত্যা করল জঙ্গিদের

শ্রীনগর: জম্মু ও কাশ্মীরের (Jammu and Kashmir) গন্দারবাল জেলার গাগাঙ্গির এলাকায় জঙ্গিদের গুলিতে (Terrorist Attack) অন্তত তিনজন পরিযায়ী শ্রমিক নিহত হয়েছেন এবং পাঁচজন গুরুতরভাবে আহত…

3 Migrant Workers Shot Dead By Terrorists In Jammu and Kashmir

শ্রীনগর: জম্মু ও কাশ্মীরের (Jammu and Kashmir) গন্দারবাল জেলার গাগাঙ্গির এলাকায় জঙ্গিদের গুলিতে (Terrorist Attack) অন্তত তিনজন পরিযায়ী শ্রমিক নিহত হয়েছেন এবং পাঁচজন গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, এই ঘটনা ঘটেছে একটি নির্মাণ সাইটে, যেখানে শ্রমিকরা কাজ করছিলেন।

একজন পুলিশ অফিসার নিশ্চিত করেছেন যে, ঘটনাস্থলেই দুজন শ্রমিক নিহত হন এবং তৃতীয়জন পরে হাসপাতালে মারা যান। সূত্রে জানা গেছে, আহত শ্রমিকদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, যার ফলে মৃতের সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

   

জঙ্গিদের হামলার পর, পুলিশ এবং সেনাবাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে এলাকাটি ঘিরে ফেলে এবং হামলাকারীদের সন্ধানে তল্লাশি অভিযান শুরু করে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ প্রচেষ্টায় পুরো এলাকায় কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে।

ঘটনার পর জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ তার X (টুইটার) অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেন, “গাগাঙ্গির হামলার ক্ষতিগ্রস্থদের সংখ্যা এখনও চূড়ান্ত নয়, কারণ আহত শ্রমিকদের মধ্যে স্থানীয় এবং বাইরের অনেকেই রয়েছেন। আমি প্রার্থনা করছি, আহতরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। গুরুতরভাবে আহতদের শ্রীনগরের SKIMS হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে।”

হামলার প্রেক্ষাপট এবং প্রতিক্রিয়া
সূত্রের খবর অনুযায়ী, জঙ্গিরা গাগাঙ্গিরের একটি নির্মাণাধীন টানেল প্রকল্পে কাজ করা শ্রমিকদের ক্যাম্পে আচমকাই হামলা চালায়। গুলি চলার সময় শ্রমিকরা নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এই নির্মাণাধীন টানেলটি একটি বেসরকারি সংস্থার তত্ত্বাবধানে নির্মিত হচ্ছিল, যেখানে ওই শ্রমিকরা কাজ করছিলেন।

জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ তাদের X হ্যান্ডেলে একটি পোস্টে জানিয়েছে, “গাগাঙ্গির, গন্দারবাল এলাকায় জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। নিরাপত্তা বাহিনী পুরো এলাকাটি ঘিরে ফেলেছে। আরও বিস্তারিত তথ্য আসছে।”

শ্রমিকদের দুরবস্থা
এই ঘটনায় নিহত ও আহত শ্রমিকরা সকলেই পরিযায়ী শ্রমিক। তারা স্থানীয় এবং বিভিন্ন রাজ্য থেকে জম্মু ও কাশ্মীরে কাজ করতে এসেছিলেন। এই ধরনের জঙ্গি হামলায় পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবনের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে।

হামলার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় বাসিন্দারা ভীত হয়ে পড়েছেন, কারণ এটি এলাকার শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। জঙ্গিরা বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিকদের লক্ষ্যবস্তু করে বারবার হামলা চালাচ্ছে, যা নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার কড়াকড়ি
এই ঘটনার পরে, জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন এবং কেন্দ্রীয় সরকার পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথভাবে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে এবং অপরাধীদের দ্রুত খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। জম্মু ও কাশ্মীরের সেনাবাহিনী ও পুলিশ এই অঞ্চলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করেছে। গাগাঙ্গিরের মতো এলাকা, যেখানে বহু গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণ প্রকল্প চলছে, সেই সব এলাকায় বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে যাতে জঙ্গিরা আর কোনও হামলা চালাতে না পারে।

প্রতিক্রিয়াসমূহ
এই জঙ্গি হামলার ঘটনার পর, জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, বুদ্ধিজীবী এবং সাধারণ মানুষ তাদের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা এই ধরনের হামলার নিন্দা করেছেন এবং প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ ছাড়াও, বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ এবং সংস্থার পক্ষ থেকে নিহত শ্রমিকদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করা হয়েছে।

এই ধরনের হামলার ঘটনা প্রমাণ করে যে, জম্মু ও কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখনও অস্থিতিশীল। নিরাপত্তা বাহিনী এবং প্রশাসনের যৌথ প্রচেষ্টায় এই জঙ্গি কার্যকলাপ দমন করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে সাধারণ মানুষ এবং বিশেষত পরিযায়ী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।

গাগাঙ্গিরের এই জঙ্গি হামলার ঘটনা জম্মু ও কাশ্মীরের অব্যাহত নিরাপত্তা সংকটকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবনের ঝুঁকি এবং নিরাপত্তা বাহিনীর চ্যালেঞ্জগুলোকে আরও জটিল করেছে এই ধরনের হামলা। সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে আরও সতর্ক হয়ে এই ধরনের জঙ্গি কার্যকলাপ মোকাবিলা করতে হবে এবং নিরীহ মানুষের জীবন রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।