দেবাশিস-মমতার ফোনালাপে কি নবান্নে গলতে চলেছে ধর্মতলার বরফ?

শনিবারের বারবেলায় দুটো বাজার মিনিট কয়েক আগেই রাজ্যের মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ পৌঁছে যান ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন (Junior Doctors Protest) মঞ্চে । সঙ্গে ছিলেন…

Junior Doctors Protest, Chief Minister, Phone Call

শনিবারের বারবেলায় দুটো বাজার মিনিট কয়েক আগেই রাজ্যের মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ পৌঁছে যান ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন (Junior Doctors Protest) মঞ্চে । সঙ্গে ছিলেন ডিসি সেন্ট্রাল। কিন্তু চমক যেন আরও বাকি ছিল। একদিকে ছিল সোমবার দিন অবধি আল্টিমেটাম, আর তারপরেই ধর্মঘটে যাওয়ার হুঁশিয়ারি। অন্যদিকে সরকারের উপরেও চাপ ছিল পরিস্থিতিকে যে কোন মূল্যে স্বাভাবিক করে নিয়ে আসার।

ইতিমধ্যেই তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষ এবং প্রতিবাদী ডাক্তার নারায়ণ গাঙ্গুলির হঠাৎ বৈঠক ঘিরে নারদ নারদ অবস্থা ডাক্তার মহলে। ওদিকে আবার কুনাল ঘোষ আক্রমণের ধার আরও বাড়িয়েছেন। জুনিয়ার ডক্টর স্ট্রন্টের ফান্ডের কোটি টাকা ডোনেশন নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন সমাজ মাধ্যমে।

   

আর তারই মধ্যে ধর্মতলা থেকে নবান্নে আবারও বৈঠকের ঘোষণা। মেডিকেল কলেজ গুলোতে নির্বাচন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর চার মাসের সময় চেয়ে নেওয়া। এবং সর্বশেষ কাজে ফেরার অনুরোধ। সবমিলিয়ে শনিবারের বারবেলায় ধর্মতলার চেনা ছবিটা যেন অনেকটাই পাল্টে গেল কয়েক মুহূর্তে। শনিবার যেন এই চমকটা অপ্রত্যাশিত ছিল। মুখ্য সচিব নিজে এসে উপস্থিত হলেন অনশন মঞ্চে। এর আগে স্বাস্থ্য ভবনের আন্দোলনে খোদ মমতা গিয়ে হাজির হয়েছিলেন। তারপরে সরকারের দরবারে বারবার গিয়েছিলেন ডাক্তাররা। কখনো বৈঠক আংশিক সফল তো কখনো কার্যত নিষ্ফল। সিনেমার ডায়লগ অনুযায়ী তারিখ পে তারিখ চলে গেল কিন্তু সমস্যার সমাধান হলো না। এবং সর্বশেষ উৎসবের মরশুমে অনশনের ইস্যুতে রাজ্য রাজনীতি থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য মহল ছিল সরগরম।

উৎসব মেটার পর প্রত্যাশিতভাবে আন্দোলনের ধার আরো বাড়ার দিকে এগোচ্ছিল। সোমবারের আল্টিমেটামে কার্যত সেই ঝাঁঝালো রণকৌশল এর ছায়াই দেখছিলেন অনেকে। যদিও অনেকের মতে ইতিমধ্যেই ডাক্তারদের আন্দোলনে নিজেদের মধ্যেই একাধিক মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।

ফলে এতদিন ধরে যে জল মাপার অংক সরকার করে গিয়েছে বলে অনেকে মনে করছিলেন, সেই পন্থাতেই চলবেন কিনা মমতা এবং পন্থ, সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠছিল। কিন্তু অনশন মঞ্চে মমতার দূত হিসাবে মনোজপন্থের পৌঁছে যাওয়া কার্যত অনেক অংকই পাল্টে দিতে পারে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।

শুধু পন্থের পৌঁছানো নয় রীতিমতো মোবাইল ফোনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আন্দোলনকারী ডাক্তারদের কথা বলিয়েছেন তিনি। দীর্ঘক্ষণের ফোনে কথায় একদিকে যেরকম বার্তা এবং আশ্বাস ছিল সেরকমই ছিল কাজে ফেরার অনুরোধ।

আপাতত যে সোমবারে ধর্মঘটের আল্টিমেটাম ছিল, সেই সোমবার বিকেল পাঁচটাতেই ডাক্তারদের সঙ্গে নবান্নে বৈঠক মুখ্যমন্ত্রীর। তবে ডাক্তাররাও গোঁ ধরে আছেন। স্বাস্থ্য সচিবকে অপসারণ করতেই হবে এই দাবি আজও তারা জানিয়ে রাখলেন স্পষ্ট ভাবে। অপরদিকে মমতারও কার্যত পরিষ্কার বক্তব্য, কোন উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ বা দুর্নীতির অভিযোগ ছাড়া স্বাস্থ্য সচিবের অপসারণ সম্ভব নয়। ওদিকে একাধিক দাবিতে ডাক্তাররা যে মাথা নোয়াচ্ছেন না কোনোভাবেই, সেটাও পরিষ্কার করে দিয়েছেন আন্দোলনকারী ডাক্তাররা।

অপরদিকে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, সামনেই দিওয়ালি এবং তারপরেই উপনির্বাচন। এইসব ঝামেলা মিটিয়ে তারপরে ডাক্তারদের মেডিকেল কলেজগুলির নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে সরকারের কোনো অসুবিধা নেই। অন্যদিকে প্রায় ১১৩ কোটি টাকা ইতিমধ্যেই বরাদ্দ করা হয়েছে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের বিভিন্ন পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য, আজ ফোনের বার্তা তেই দাবি করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী।

দাবি মানার আশ্বাস থেকে শুরু করে অনুরোধ, সেই সঙ্গে মুখোমুখি বসে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা। রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী চেষ্টা করছেন ঠিকই। কিন্তু সেই চেষ্টা কতটা সফল হবে, সেটা নির্ভর করছে আন্দোলনকারী ডাক্তারদের ওপরেই। মুখ্যমন্ত্রীর সাথে ফোনে কথা বলবার সময়ও ডাক্তারি আন্দোলনের অন্যতম মুখ দেবাশিষ হালদারের বক্তব্যেও ছিল দাবিতে অনড় থাকার সুর। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই দশ দফা দাবি কথাই তারা মনে করিয়েছেন। সরকারের দাবি ৭ দফা মেরেছেন তারা, বাকি তিনের গেরোতে নবান্নের বৈঠক কি আবারও নিষ্ফল হবে? নাকি এবার অন্তত কোনো সমাধান সূত্র বের হবে? সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে আগামী সোমবার বেলা পাঁচটার পরের ঘটনা প্রবাহ থেকে।