কুণালের সঙ্গে নারায়ণের বৈঠকে ক্ষুদ্ধ জুনিয়র চিকিৎসকরা, বিবৃতি দিল জেপিডি

এখনও ধর্মতলায় বসে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা। রাজ্য সরকার তাদের নিরাপত্তাসহ ১০ দফা দাবি মেটানো না পর্যন্ত এই অনশন চালিয়ে যাবেন তাঁরা।…

Junior doctors are furious at the meeting between Kunal and Narayan, JPD issued a statement.

এখনও ধর্মতলায় বসে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা। রাজ্য সরকার তাদের নিরাপত্তাসহ ১০ দফা দাবি মেটানো না পর্যন্ত এই অনশন চালিয়ে যাবেন তাঁরা। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বেশ অনেকক্ষণ বৈঠক করলেন সিপিএমপন্থী চিকিৎসক নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh Narayan Banerjee)। কিন্তু তাঁদের দুজনের সেই বৈঠক দেখে খুশি হতে পারছেন না জুনিয়র চিকিৎসকরা।

আর তাই এবার এ বিষয় নিয়ে মুখ খুললেন জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের অন্যতম মুখ আসফাকুল্লা নাইয়া। জুনিয়র চিকিৎসকরা ধর্মতলার যেখানে অবস্থান করছেন বৃহস্পতিবার তার এক কিলোমিটারের মধ্যে নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও কুণাল ঘোষের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। আর এই বৈঠককে ঘিরে নতুন করে কৌতূহলের পারদ চড়তে শুরু করে। ঠিক কী কারণে হঠাৎ করে এই দুই সিপিএমপন্থী ও তৃণমূল নেতার মধ্যে বৈঠক হল সেই প্রশ্ন ওঠার পাশাপাশি কেন তিনি এভাবে কুণাল ঘোষের সঙ্গে দেখা করলেন তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

   

যদিও তৃণমূল নেতার সঙ্গে তাঁর এই বৈঠকের পেছনে কী কারণ রয়েছে তা কিছুটা নিজেই জানিয়েছেন নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে কুণালের সঙ্গে তাঁর এই বৈঠক দেখে বেশ দুঃখ পেয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। আর সেকথা তাঁরা নিজেরাই জানিয়েছেন। শুক্রবার সকালে আসফাকুল্লা নাইয়া বলেছেন, নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের সিনিয়র। তিনি কেন এই বৈঠক করলেন তা যেমন তাঁরা জানেন না ঠিক তেমনি তাঁরা মনে করছেন জুনিয়র ডাক্তারদের সমস্যাগুলি এভাবে সুরাহা করা যাবে না।

গোটা ঘটনায় জুনিয়র চিকিৎসকরা খুব দুঃখ পেয়েছেন বলেও তিনি জানিয়েছেন। চিকিৎসকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে আসফাকুল্লা জানিয়েছেন, “আমরা জানি, সব যুদ্ধে জেতা যায় না। কিন্তু রণাঙ্গনে সক্রিয় থাকতে হয়। তার ফলেই ইতিমধ্যে অনেক কাজও হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংস্কার এই আন্দোলনের ফলেই হয়েছে।” অন্যদিকে এই বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “আমরা ক্ষুণ্ণ। কেন উনি কুণালের সঙ্গে দেখা করলেন, জানি না। আমরা এর প্রতিবাদ করছি না। তবে আমরা দুঃখ পেয়েছি।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে দেখা করে কথা বললে আমাদের সমস্যার সমাধান হলেও হতে পারে। কিন্তু কুণাল ঘোষের সঙ্গে কথা বলে এর কোনও সমাধান হবে বলে আমাদের মনে হয় না।” প্রসঙ্গত, আরজি কর-কাণ্ডে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনে প্রথম থেকেই সেই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন নারায়ণ। তিনি এদিনের বৈঠক শেষে জানিয়েছেন, “আমি একজন নাগরিক। আমি একজন চিকিৎসক। কুণাল ঘোষও একজন নাগরিক এবং সাংবাদিক। আমরা দেখা করেছি, কথা বলেছি। আগেও আমাদের পরিচয় হয়েছে। কোনও রাজনৈতিক দলের মুখপাত্রের সঙ্গে কথা বলিনি আমি।”

এরপরে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করে লেখেন, “জুনিয়রদের ভালর জন্য যা করার, করেছি। আমি প্রথমে মানুষ, তারপরে ডাক্তার, তারপরে আমার রাজনৈতিক সত্তা।” তবে এখানেই শেষ নয়। এরপর ফের বৃহস্পতিবার রাতে একটি ভিডিয়োবার্তায় নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আদালতে মামলা চলছে। তা সময়সাপেক্ষ। এই পরিস্থিতিতে আলোচনার টেবিলে বিষয়টিকে আনা যায় কিনা, সে বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতরের ব্যক্তির কাছে যাতে বার্তা পৌঁছে দেওয়া যায়, সেই কারণেই আমি গিয়েছিলাম।” তবে কুণাল ঘোষের সঙ্গে তাঁর এই বৈঠক নিয়ে বর্তমানে বেশ ‘ক্ষুণ্ণ’ জুনিয়র চিকিৎসকরা।

অন্যদিকে এই বৈঠক নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়ে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস (জেপিডি) বলেছে, “নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও চিকিৎসক সংগঠনের প্রতিনিধি কিনা, আমরা জানি না। ব্যক্তিগত এক্তিয়ারে তিনি কারও সঙ্গে দেখা করতেই পারেন। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র ডাক্তার এবং জনগণের এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে দৌত্যের অধিকার তাঁকে কেউ দেননি। তিনি এমন একজনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, যিনি প্রতিনিয়ত এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকদের অতি কদর্য ভাষায় আক্রমণ করছেন। আমরা মনে করি, নারায়ণবাবু আন্দোলনে পরিপন্থী ভূমিকা পালন করছেন। তাঁর এই আচরণকে আমরা সমর্থন করছি না।”