বাবা সিদ্দিকির হত্যাকারীদের হ্যান্ডলার কে? জলন্ধর থেকে মুম্বই পর্যন্ত সূত্র

মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মন্ত্রী বাবা সিদ্দিকীর (Baba Siddique) হত্যাকাণ্ডে চতুর্থ ব্যক্তি হিসেবে যুক্ত ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ্যে এসেছে, যার মূল সূত্র পাঞ্জাবের জলন্ধর। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে,…

Uncovering the Handler of Baba Siddique's Killers: The Trail Leading from Jalandhar to Mumbai Baba Siddique, Handler uncovered, Jalandhar,Mumbai Crime investigation

মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মন্ত্রী বাবা সিদ্দিকীর (Baba Siddique) হত্যাকাণ্ডে চতুর্থ ব্যক্তি হিসেবে যুক্ত ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ্যে এসেছে, যার মূল সূত্র পাঞ্জাবের জলন্ধর। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদ জিশান আখতার নামে এই ব্যক্তি দুই বছর আগে স্থানীয় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন এবং পাটিয়ালা জেলে লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং-এর সদস্যদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি মুম্বইয়ে চলে যান।

আখতার ছিলেন বাবা সিদ্দিকীর হত্যাকারীদের প্রধান হ্যান্ডলার, এবং বাইরে থেকে শুটারদের নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। যখন সিদ্দিকীকে গুলি করা হয়, তখন আখতার শুটারদের তার অবস্থান সম্পর্কে তথ্য দিচ্ছিলেন। তিনি শুটারদের জন্য লজিস্টিক সাপোর্টের ব্যবস্থাও করেছিলেন, যার মধ্যে একটি ঘর ভাড়া নেওয়া অন্তর্ভুক্ত ছিল।

   

বাবা সিদ্দিকীর হত্যাকাণ্ডে তিনজন শুটার জড়িত ছিল। তাদের মধ্যে গুরমেল সিং হরিয়ানার কৈথাল জেলার নারাদ গ্রামের বাসিন্দা। বাকি দু’জন উত্তরপ্রদেশের বেহরাইচ জেলার বাসিন্দা। গুরমেল এবং দ্বিতীয় শুটার, যিনি নিজেকে নাবালক দাবি করেছেন, তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তৃতীয় শুটার শিব কুমার এখনও পলাতক।

মোহাম্মদ জিশান আখতার ছিলেন পাঞ্জাবের জলন্ধরের নাকোদার গ্রামের শাকর এলাকার বাসিন্দা। ২০২২ সালে তিনি সংগঠিত অপরাধ, খুন এবং ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার হন এবং পাটিয়ালা জেলে রাখা হয়। সেখানেই তিনি লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং-এর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন এবং তাদের থেকে বাবা সিদ্দিকীকে হত্যার নির্দেশনা পান।

পুলিশ জানিয়েছে, আখতার ৭ জুন জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর কৈথালে গুরমেলের সাথে দেখা করতে যান। এরপর শুটাররা মুম্বইয়ে রওনা দেয় এবং সেখানে নিজেদের ঘাঁটি তৈরি করে।

ঘটনার দিন, আখতার মুম্বইয়ে ছিলেন এবং বাইরে থেকে শুটারদের সমস্ত নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। সিদ্দিকীকে গুলি করার পর আখতার পালিয়ে যান। পুলিশের মতে, তিনি এখনও মুম্বইয়ে কোথাও লুকিয়ে আছেন। তাকে ধরার জন্য একাধিক পুলিশ টিম গঠন করা হয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ এবং মাস্টারমাইন্ডের ভূমিকা
বাবা সিদ্দিকীর হত্যাকাণ্ডটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে মনে করা হচ্ছে, যার পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে। লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং-এর সাথে আখতারের যোগাযোগ এবং সিদ্দিকীর মৃত্যুর সাথে তাদের সম্পৃক্ততার সূত্রগুলিকে বিশদভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যকলাপের সাথে জড়িত এবং তারাই এই হত্যাকাণ্ডের মূল কারিগর বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আখতারের ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে যখন জানা যায়, তিনি শুধু শুটারদের নির্দেশনা দিচ্ছিলেন না, বরং তাদের থাকার জায়গা থেকে শুরু করে প্রতিটি পদক্ষেপের পরিকল্পনায় তার সরাসরি অংশগ্রহণ ছিল। পুলিশ বলছে, এই ষড়যন্ত্রের সমস্ত খুঁটিনাটি তদন্তের পর পুরো ঘটনা প্রকাশ পাবে।

আইনি পদক্ষেপ এবং তদন্তের অগ্রগতি
বর্তমানে গুরমেল সিং এবং অপর এক শুটার গ্রেপ্তার হয়েছে, এবং তারা তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছে। যদিও শিব কুমার এখনও পলাতক, পুলিশ তার সন্ধানে জোরালো চেষ্টা চালাচ্ছে। এছাড়াও, আখতারকে ধরতে মুম্বইয়ের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশি অভিযান চালানো হচ্ছে।

পুলিশ সূত্রে আরও জানা যায় যে, আখতার মুম্বইয়ের বেশ কয়েকটি জায়গায় অবস্থান করেছেন এবং তার মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশন থেকে তার অবস্থান শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। পুলিশের ধারণা, আখতার বর্তমানে মুম্বইয়ের কোনও অপরাধমূলক গোষ্ঠীর আশ্রয়ে থাকতে পারে।

এই হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং-এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলার তদন্ত আরও গভীরে চলছে। অন্যান্য শুটারদের সাথে গ্যাং-এর সম্পর্ক এবং আখতারের মাধ্যমে গ্যাং-এর কার্যকলাপের উপর আলোকপাত করার জন্য নতুন করে তদন্তের দিক পরিবর্তন করা হয়েছে।

সম্ভাব্য শাস্তি এবং ভবিষ্যতের পদক্ষেপ
যদি আখতার ধরা পড়েন, তবে তার বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ আনা হবে, যার মধ্যে খুনের ষড়যন্ত্র, অপরাধমূলক চক্রান্ত এবং অপরাধমূলক সমর্থন অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এছাড়াও, লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং-এর অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধেও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের মাধ্যমে পুলিশ আশা করছে, মুম্বইয়ের অপরাধমূলক চক্র এবং গ্যাং সংক্রান্ত অপরাধমূলক কার্যকলাপের উপর আরও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।