‘ভাগ্যিস”মেয়ে” হয়ে জন্মাইনি’, হঠাৎ কেন এমন বললেন তথাগত?

কলকাতার আরজি কর কাণ্ডে (R G Kar) তোলপাড় হয়েছে গোটা রাজ্য থেকে দেশ। এই নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিলেন সর্বস্তরের মানুষ। এই তালিকায় বাদ যায়নি…

Tathagata-Mukherjee

কলকাতার আরজি কর কাণ্ডে (R G Kar) তোলপাড় হয়েছে গোটা রাজ্য থেকে দেশ। এই নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিলেন সর্বস্তরের মানুষ। এই তালিকায় বাদ যায়নি বিনোদন জগতও। ঘটনার প্রতিবাদের আগুন এখনও প্রজ্বলিত। কিন্তু বিভিন্ন রাজ্যের মহিলাদের উপর যৌন হেনস্থা, ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার খবর সামনে এসেই চলেছে। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের জয়নগরে ৯ বছরের কাশোরীকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় নতুন করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এবার এই সংক্রান্ত ঘটনার কথা উদ্ধৃত করে সমাজ মাধ্যমে নিজের অনুভূতি শেয়ার করেছেন অভিনেতা ও পরিচালক তথাগত (Tathagata Mukherjee)।

অভিনেতা পরিচালক তথাগত (Tathagata Mukherjee) তার সমাজ মাধ্যমে তার মায়ে সঙ্গে একটি পুরোনো ছবি শেয়ার করেছেন। দেখা যাচ্ছে, তথাগতকে তাঁর মা শিশুকন্যার মতো সাজিয়েছেন। তথাগত ক্যপশনে লেখেন, ‘ভাগ্যিস”মেয়ে” হয়ে জন্মাইনি।ছোটবেলার ছবিটা পুরীর সমুদ্রের ধারের।আমার মা চেয়েছিল দ্বিতীয় সন্তান যেন মেয়েই হয়,হলাম আমি।ছোটবেলায় খুব লম্বা চুল ছিল। তাই অধিকাংশ সময় মা চুল ফিতে দিয়ে বেঁধে,এমন পোশাক পরিয়ে,টিপ পরিয়ে রাখত,যাতে কিছুক্ষনের জন্য হলেও পথচলতি লোকজন ভুল করে বলে ফেলে “ভীষন মিস্টি মেয়ে আপনার”।

   

ব্যাপারটার প্রমান অজস্র পুরোনো ছবিতে আমি পেয়েছি।বড় হওয়ার সাথে শরীরে ব্যাপারটা পালটে গেলেও মননে খানিকটা থেকেই গেল।সে কথা দিদি,বান্ধবী,প্রেমিকা,স্ত্রী এদের কাছে শুনেছি বহূবার,আমার কিছু আঁকড়ে ধরা- টরা কিম্বা ভাবা নাকি মেয়েদের মতোন।যেহেতু আমি মেয়ে নই তাই যাচাই করে উঠতে পারিনি “মেয়েদের মতোন” না হলে আর হলে ঠিক কিরকমটা হয়।’

এখানেই শেষ নয় তথাগত (Tathagata Mukherjee) তার লেখার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করেন কেন তিনি মেয়ে হতে চাইনা। অভিনেতা লেখেন, ‘ভাগ্যিস হইনি,নইলে আমাকে ভাবতে হোতো জয়নগরের মেয়েটা আমি হতে পারতাম,কিম্বা রাজারহাটের বা আর জি করের মেয়েটা,কিম্বা কামদুনি,মনিপুর,উত্তরপ্রদেশ,দিল্লী আসলে গোটা ভারতবর্ষের যে কোনো অঞ্চলের যে কোনো বয়সের মেয়ে।এমন এক প্রজাতির প্রতিনিধি হিসেবে বড় হতে হোতো যে কোনোদিন,যে কোনো বয়সে তার সাথে যে কোনো কিছু ঘটতে পারে ভারতবর্ষ নামক দেশের এই গনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায়।

এখানে দু বছরের মেয়ে শিশুও তো ছাড় পায় না।আমি তো বরং সেই সম্প্রদায়ের অংশ যারা এই দেশে যে কোনো সময় যা কিছু করে ফেলার ক্ষমতা রাখে।আমার মায়ের তো নিশ্চিন্ত আর খুশি হওয়ার কথা।অথচ আমার মা খুশি হতে পারেনি।কারন মা গল্প করার বন্ধু পায়নি,সমব্যথী পায়নি,অল্পবয়সের কষ্টের গল্প বোঝার লোক পায়নি,জড়িয়ে ধরে কাঁদার লোক পায়নি,যন্ত্রনা বোঝার সমমনস্ক সচেতন মন পায়নি,একই দুখ ভাগ করার মতোন মানুষ পায়নি।শুধু পেয়েছে এই সমাজে আমার ধর্ষিত না হওয়ার নিশ্চিন্ততা।আমি কিন্তু নিশ্চিন্ত হয়েছি,মায়ের ইচ্ছে পূর্ন হয়নি।আমি ছেলে হয়েছি,পুরুষ….বাঙালি পুরুষ সিংহ।’

অভিনেতা (Tathagata Mukherjee) আরও লেখেন,’আমি আফ্রিকাতে ছয় ফিটের ডিস্টেন্সে বহূ সিংহ দেখেছি,ঘুমোতে আর হিসু করতে।পরে পড়াশুনা করে জানলাম শিকার করে খাবার জোগাড় করা,বাচ্চাদের বড় করা,দল গঠন করা এ সমস্ত তুচ্ছ কাজ সিংহীরাই করে।সিংহরা শিকার করে আনা খাবার খায়,ঘুমোয়,পটি করে আর সিজনে সেক্স করে।আমি টের পেলাম ভারতীয় বাঙালিদের কেন পুরুষ সিংহ বলা হয়।আমিও সেই পুরুষ সিংহ দলের প্রতিনিধি।ভাগ্যিস,”মেয়ে” হয়ে জন্মাইনি।’