বেশ কিছুদিন ধরেই তাঁকে নিয়ে ‘অসন্তুষ্টিতে’ ভুগছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। চোট সমস্যা, কেলেঙ্কারির অভিযোগ, অফফর্ম ইত্যাদি নানা বিতর্কে নাম জড়িয়েছিল তাঁর। এছাড়াও ক্রিকেটমহলে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছিল তাঁর অবসররের জল্পনার গুঞ্জন। তবে জল্পনা ভেঙে অবশেষে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন সাকিব আল হাসান (Shakib Al Hasan)। আজ ভারতের বিপক্ষে কানপুরে টেস্টে মাঠে নামার আগে সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা করেন ৩৭ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার। তবে কানপুরে নয় ঘরের মাঠে আগামী ২১ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলে সাদা পোশাক তুলে রাখবেন বাংলাদেশি কিংবদন্তি। তাই আসন্ন ভারত-বাংলাদেশ টি টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে আর দেখা যাবে না এই অলরাউন্ডারকে। যদিও ক্যারিয়ারের শেষ টি-টোয়েন্টি খেলে ফেলেছেন সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই। তবে অবসর ঘোষণা করলেও এদিন ওয়ানডে ক্রিকেট নিয়ে তাঁর পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি আগামী বছর পাকিস্তানে হতে যাওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত খেলার কথা বলেছেন।
আজ সাংবাদিক সম্মেলনে আগামী অক্টোবরে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টের খেলা নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। জবাবে সহাস্যে তিনি বলেন, ” দেখুন, এখন পর্যন্ত আমি তো অ্যাভেইলেবল। যেহেতু অনেক পরিস্থিতি আছে, সবকিছু অবশ্যই আমার ওপরে না। আমি বিসিবির সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনা করেছি। তাদের বলা হয়েছে আমার কী পরিকল্পনা। এই সিরিজ আর হোম সিরিজটা আমি ফিল করেছিলাম আমার শেষ সিরিজ হবে, টেস্ট ক্রিকেটে স্পেশালি। তাই এই সিরিজটি খেলতে চাইছি। তবে দেশের মাটিতে খেলেই অবসরে যেতে চাই।”
এদিন নিজের অবসরের ঘোষণা করতেই বিষাদগ্রস্ত দেখায় বাংলাদেশি অলরাউন্ডারকে। এদিন বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানিয়ে সাকিব যোগ করেন,” ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে ও নির্বাচকদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। যদি সুযোগ থাকে, আমি যদি দেশে যাই, খেলতে পারি, তাহলে মিরপুর টেস্ট হবে আমার জন্য শেষ। সেই কথাটা বোর্ডের সবার সঙ্গে বলা হয়েছে। তাঁরা চেষ্টা করছেন কীভাবে সুন্দরভাবে আয়োজন করা যায়।”
SHAKIB AL HASAN ANNOUNCES TEST RETIREMENT.
– Shakib to retire from Test cricket after the Test match against South Africa in Mirpur. pic.twitter.com/g4DTAkxF9v
— Mufaddal Vohra (@mufaddal_vohra) September 26, 2024
তবে বিভিন্ন বিতর্কে জড়িয়ে পরেই অভিমান থেকে কি টেস্ট ছাড়ছেন সাকিব? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘বিতর্ক কিংবা অভিমান থেকে নেওয়া নয়। আমার মনে হয় এটাই সঠিক সময়, সরে যাওয়ার জন্য এবং নতুনদের আসার সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার জন্য।’ একই প্রশ্নের উত্তরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকেও নিজের সরে যাওয়ার ঘোষণাটা দেন সাকিব, ‘অপ্রাসঙ্গিক হলেও বলে ফেলতে চাই, টি-টোয়েন্টি নিয়েও আমার কথা হয়েছে। বোর্ডের সবার সঙ্গে, নির্বাচকদের সঙ্গে, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। টি-টোয়েন্টি থেকেও আমি সরে যেতে যাই। আপাতত পরের যে সিরিজগুলো আছে, নতুন খেলোয়াড় আসুক, সুযোগ দেওয়া হোক। নিজেকে এই ফরম্যাটে আর মানানসই বলে মনে হচ্ছে না আর। “
তবে টি টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে অবসর নিলেও , বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজ লিগে খেলা চালিয়ে যেতে চান সাকিব। এদিন এ বিষয়ে বাংলাদেশি সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তাঁদের তিনি বলেন, “আমি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলো খেলতে থাকি, ছয় মাস–এক বছর পরে যদি বিসিবি মনে করে যদি আমার টি-টোয়েন্টিকে কন্ট্রিবিউট করার সুযোগ আছে, আমি পারফর্ম করছি এবং ফিট আছি তাহলেই আমি পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব এব্যাপারে। কিন্তু এই মুহূর্তে নিজেকে টি-টোয়েন্টিতে দেখছি না। ২০২৬ সালের দিকে যদি বাংলাদেশ ক্রিকেট তাকায়, তাহলে এটাই বাংলাদেশের জন্য ভালো। আমরা সবাই মিলেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমার এই সিদ্ধান্তে সবাই একমত।”
এদিন অবসরের বিষয়ে উত্তর দিলেও, দীর্ঘদিনের চোট নিয়ে কোনো কথা বলেননি সাকিব (Shakib Al Hasan)। বার বার এই প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে দেখা যায় তাঁকে। চলতি ভারত-বাংলাদেশ সিরিজেও চোট সমস্যার কবলে পড়েছেন তিনি। তবে এবিষয়ে সবিস্তারে কথা না বললেও, এদিন তিনি বলেন, “আমি মনে করি, আমি রিজনেবলি ওকে করেছি। আমি খুশি। কোনো অনুশোচনা নেই। জীবনে কখনো অনুশোচনা ছিল না। এখনো নেই। যত দিন উপভোগ করেছি, আমি ক্রিকেট খেলেছি। আমার মনে হয়েছে, এটা বাংলাদেশ ক্রিকেট ও আমার জন্য সঠিক সময়, যে কারণে এই সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া। কোচ,অধিনায়ক,নির্বাচক,বোর্ড—সবার সঙ্গেই আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া”