মির্জাপুর কাহিনী, মোদীর খাস এলাকায় কেন এত প্রভাব অতীশীর?

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: ‘কঁহি দূর যব দিন ঢল যায়ে…’এ শহর মির্জাপুরের একপাশে গঙ্গায় সূর্যাস্ত হয় প্রকৃতির অমোঘ নির্দেশে। সন্ধ্যাতারা ঝিলিক দে়য়। দূরে গঙ্গা-বরুণা নদীর ওপারে কাশী…

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: ‘কঁহি দূর যব দিন ঢল যায়ে…’এ শহর মির্জাপুরের একপাশে গঙ্গায় সূর্যাস্ত হয় প্রকৃতির অমোঘ নির্দেশে। সন্ধ্যাতারা ঝিলিক দে়য়। দূরে গঙ্গা-বরুণা নদীর ওপারে কাশী তখন ঝলমলে। মির্জাপুরও (Mirzapur) তখন আলোকিত। রিল নয় রিয়েল মির্জাপুরের কিছু কথা লিখছি ফের। ওয়েব সিরিজে মির্জাপুরকে আপনি দেখেছেন খানদানি পরিবারের অভ্যন্তর থেকে কণ্ঠলগ্না-বাহুলগ্না শিহরিত মুহূর্তে। শ্নীল-অশ্লীলতার বেড়া টপকে মির্জাপুরের ভিতর নজর রাখলে চমক লাগে। ভারতের গালিচা রাজধানী মির্জাপুরে আপনাকে স্বাগত জানাই।

মির্জাপুরের অকাশে দুটো একটা তারা খসে পড়ে। এ তারা প্রকৃতির না। রাজনীতির তারকা। যেমন ফুলন দেবী। যেমন অতীশী। মির্জাপুরেই দস্যুরানি ফুলনের রাজনৈতিক জন্ম হয়েছিল। যে কহিনীর শেষে কয়েকটা রক্তমাখা বুলেট পড়ে আছে। দিল্লিতে খুন করা হয়েছিল মির্জাপুরের সমাজবাদী পার্টির সাংসদ ফুলনদেবীকে। মির্জাপুর ও দিল্লির সংযোগে আরও একবার দেশ চমকিত। মির্জাপুরের বধু অতীশী দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী।

   

বাকিদের তুড়ি মেরে উড়িয়ে একা দিল্লি তিনজন মহিলা মু়খ্যমন্ত্রীর নাম লিখল। এটি নজির। বিজেপির সুষমা স্বরাজ, কংগ্রেসের শীলা দীক্ষিত ও আম আদমি পার্টির অতীশী মারলেনা এই তিন সদা হাস্যময়ী রাজনীতিক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দিল্লির সিংহাসনে বসলেন।

অতীশীর কাহিনী আছে মির্জাপুরে, বারাণসীর সর্বত্র।
উত্তরপ্রদেশের পূর্বাঞ্চল এলাকায় পড়ে বারাণসী-কাশী। এখানে আছে অতীশীর গভীর সম্পর্ক। তিনি কাশীর বধূ। তাঁর স্বামী প্রবীণ সিং সমাজসেবার সাথে যুক্ত। তিনি মির্জাপুরের মাজওয়ান ব্লকের অনন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা। অতীশীর শ্বশুরবাড়ির সবাই দীর্ঘদিন ধরে বারাণসীর লঙ্কা এলাকায় বসবাস করছেনন। প্রবীণ সিং আইআইটি দিল্লি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি এবং আইআইএম আহমেদাবাদ থেকে ম্যানেজমেন্ট ডিগ্রি অর্জনের পর সমাজসেবার কাজ শুরু করেন।

দিল্লিতে দেখা হয়েছিল অতীশী ও প্রবীণের। তারা দুজনেই সামাজিক সংস্কার এবং গ্রাম স্বরাজের নীতির মাধ্যমে সচেতনতা আনতে চেয়েছিলেন। একই মতবাদের কারণে দুজনেই একে অপরের কাছাকাছি চলে আসেন। ২০০৬ সালে অতীশী এবং প্রবীণ বিয়ে করেন। দিল্লিতে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগে অতিশী কাশীতেই থাকতেন। তার স্বামী প্রবীণের পরিবার কাশী-বারাণসীর মর্যাদাপূর্ণ পরিবারগুলির মধ্যে একটি।

অতীশী সেন্ট স্টিফেন কলেজ এবং অক্সফোর্ডের প্রাক্তনী। স্বামীর সাথে গ্রামীণ উন্নয়ন, কৃষি উন্নয়ন এবং সামাজিক স্তর উন্নীত করার লক্ষ্যে ২০০৭ সালে মধ্যপ্রদেশে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল গান্ধীজির গ্রাম স্বরাজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা। পরে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সংস্পর্শে এসে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন অতিশী।

মির্জাপুর ও কাশীর মধ্যে বিশেষ পরিচিতি আছে অতীশীর শ্বশুরবাড়ির। দিল্লির আম আদমি সরকারেক চর্চিত মন্ত্রী ছিলেন অতিশী। তাঁকে সামনে রেখেই প্রধানমন্ত্রী মোদীর সংসদীয় এলাকায় একটি কূটচাল দিল আম আদমি। মনে করা হচ্ছে কেজরিওয়ালকে ফের মোদীর বিরুদ্ধে ভোট যুদ্ধে নামানো হবে। এর আগে বারাণসীতেই মোদীর কাছে হেরেছিলেন কেজরি। আর গত লোকসভা নির্বাচনে খোদ মোদী কয়েক রাউন্ড পিছিয়েছিলেন। কংগ্রেস মুচকি হেসে়ছিল।

কংগ্রেসের শীলা দীক্ষিত এবং বিজেপির সুষমা স্বরাজের পর আম আদমি পার্টির অতীশী দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। শীলা দীক্ষিত দিল্লির দীর্ঘতম মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, ১৯৯৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছর এই পদে ছিলেন। ১৯৯৮ সালে বিজেপির সুষমা স্বরাজের মুখ্যমন্ত্রীত্বের মেয়াদ ছিল ৫২ দিন। পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর অতিশী এখন দেশের দ্বিতীয় বর্তমান মহিলা মুখ্যমন্ত্রী।