প্রসেনজিৎ চৌধুরী: গণবিক্ষোভে এক কাপড়ে গণভবন ছেড়েছিলেন। পাশে ছিলেন বোন। বাংলাদেশ (Bangladesh) থেকে ক্ষমতাচ্যুত (Sheikh Hasina) শেখ হাসিনা। গত ৫ আগস্ট থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই কন্যা দ্বিতীয় দফায় ভারতে আশ্রিত। এবারে তাঁদের ভারতে অবস্থানের সরকারি মেয়াদ শেষ হল। মধ্যরাতে অভিবাসন আইনের দৃষ্টিতে ‘আশ্রিত’ হাসিনা ভারতে ‘উদ্বাস্তু’।
শেখ হাসিনা যখন ভারতে প্রবেশ করেছিলেন তখন তাঁর কাছে ছিল কূটনৈতিক লাল পাসপোর্ট। এই পাসপোর্টের নিয়মে তিনি ভারতে ৪৫ দিন থাকার অনুমতি পান। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ৪৫ দিন পূর্ণ। মধ্যরাতে অর্থাৎ শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) থেকে হাসিনা সরকারি ‘পরিচয়হীন’ বাংলাদেশি!
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করে দিয়েছে। এর ফলে ৪৫ দিনের মেয়াদ শেষে ভারতে থাকার আর কোনো বৈধ অনুমোদন তার কাছে থাকছে না। এমনই মনে করছেন বাংলাদেশের বিদেশনীতি বিশেষজ্ঞরা।
ভারত কি হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেবে?
ঢাকা ও নয়াদিল্লির কূটনৈতিক মহল মনে করছে কূটনৈতিক পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হলেও হাসিনাকে ভারত সরকার রেখে দেবে। তাঁকে তিব্বতি ধর্মগুরু চতুর্দশ দালাই লামার (তেনজিন গিয়াৎসো) মতো ‘বিশেষ রাজনৈতিক আশ্রয়’ দেওয়া হতে পারে।
১৯৫৯ সানে চিনা সেনার হামলায় প্রাণভয়ে দলাই লামা তিব্বত থেকে পালিয়ে এসে ভারতে ‘উদ্বাস্তু’ হিসেবে বসবাস করছেন। তাঁর নেতৃত্বে ভারতে চলছে নির্বাসিত তিব্বতিদের সরকার। তাঁকে ভারতে আশ্রয় দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু।
ভারত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বাংলাদেশের শেখ পরিবার। রাষ্ট্রপতি থাকার সময় সেনা বিদ্রোহে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালে স্ত্রী-সন্তান ও আত্মীয়দের সঙ্গে খুন করা হয়েছিল। তখন তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে কড়া নিরাপত্তা দিয়ে রেখেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ঘটনাচক্রে নরেন্দ্র মোদীর আমলেও হাসিনা ‘আশ্রিত’।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, দিল্লিতে মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সঙ্গে শেখ হাসিনাকে অভিজাত পার্ক লোদি গার্ডেন দেখা গেছে। পুতুল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(হু)-তে উচ্চপদে কর্মরত। আর পুত্র জয় আমেরিকা প্রবাসী। শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির হেভিওয়েট নেত্রী ও সাংসদ। পুত্ররা অন্য দেশে আছেন।
বাংলাদেশ ত্যাগ করা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তাঁর দেশেই দায়ের হচ্ছে হত্যা ও গণহত্যার মামলা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। নেবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে চলা বাংলাদশের অন্তর্বর্তী সরকারের অভিযোগ, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন গণবিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীকে গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। শত-শত বিক্ষোভকারী নিহত।