পাকিস্তানের চেয়ে অধম আর আফগানিস্তানের চেয়ে নিকৃষ্ট হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ: তসলিমা

বাংলাদেশে (Bangladesh) গণবিক্ষোভে শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina) ক্ষমতাচ্যুত হওয়াকে স্বৈরাচার শাসনের পতন বলে মনে করেন ধর্মীয় মৌলবাদ বিরোধী লেখিকা (Taslima Nasrin) তসলিমা নাসরিন। তবে হাসিনা…

Taslima Nasrin Expresses Concern

বাংলাদেশে (Bangladesh) গণবিক্ষোভে শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina) ক্ষমতাচ্যুত হওয়াকে স্বৈরাচার শাসনের পতন বলে মনে করেন ধর্মীয় মৌলবাদ বিরোধী লেখিকা (Taslima Nasrin) তসলিমা নাসরিন। তবে হাসিনা জমানার পতনের পর থেকে বাংলাদেশের ভিতর ইসলামি মৌলবাদ আরও শক্তিধর হচ্ছে বলে লাগাতার লিখে চলেছেন তিনি। নাস্তিক-যুক্তিবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন দীর্ঘ কয়েক দশক তাঁর নিজের দেশ থেকে বিতাড়িত। তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশ ক্রমে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের থেকেও নিকৃষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

‘নির্বাসিত লেখিকা’ তসলিমা নাসরিন সুইডেনের নাগরিকত্ব নিয়ে ভারতে থাকেন। আর সদ্য ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাও ভারতে আশ্রিত। তসলিমা বরাবর শেখ হাসিনা ও তাঁর পূর্ববর্তী খালেদা জিয়ার শাসনামলে ধর্মীয় মৌলবাদ বিরোধী ভূমিকা রেখে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন। তাঁর পৈত্রিক ভিটে বাংলাদেশের ময়মনসিংহে।

   

ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী আঠারবাড়ী কলেজের একটি ছবি দিয়ে তসলিমা নাসরিন বাংলাদেশে ইসলামি মৌলবাদের সমালোচনায় সরব। ছবিতে দেখা যাচ্ছে ওই কলেজের রবীন্দ্র স্মৃতি ভবনের নাম মুছে সেখানে ধর্মীয় বাণী লেখা হয়েছে।

তসলিমা নাসরিন যে ছবি সামাজিক মাধ্যমে দিয়েছেন তাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আঠারবাড়ী কলেজ থেকে রবীন্দ্রনাথের নাম মোছা হয়েছে। কলেজটি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। ভারত বিভাজনের আগে আঠারবাড়ী জমিদার পরিবারের আমন্ত্রণে ১৯২৬ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এসেছিলেন। তিনি ময়মনসিংহের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পুলকিত হন। আঠারবাড়ীর সর্বশেষ জমিদার প্রমোদ চন্দ্র রায় চৌধুরী শান্তিনিকেতনের ছাত্র ছিলেন। সে সুবাদে রবীন্দ্রনাথ এসেছিলেন। ভারত ভাগের পর এই জমিদার বাড়িটি কলেজ হয় ১৯৬৮ সালে। কলেজটিতে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি ভবন লেখা হয়েছিল।

পাকিস্তান আমলেও রবীন্দ্রনাথের নাম অক্ষত ছিল বলে এলাকাবাসী জানান। তাদের আক্ষেপ পাকিস্তান আমলে যা হয়নি, পাক শাসন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাংলাদেশে সেটাই হল।

তসলিমা নাসরিন লিখেছেন, “রাষ্ট্রকে ধর্ম থেকে পৃথক করার জরুরি কাজটি না করে ধর্মকে রাজনীতিতে এবং রাষ্ট্রের অন্দরমহলে ঢুকিয়ে ফেলা হচ্ছে! এর পরিণাম আমরা দেখতে পাচ্ছি, দেশ জুড়ে থিকথিক করছে হিংস্র সন্ত্রাসী আর প্রতিশোধপরায়ণ স্বার্থান্ধ প্রজন্ম। এই দেশে বিজ্ঞানী, দার্শনিক, মানবতাবাদী, নারীবাদী, মুক্তচিন্তক, উদার নিরীশ্বরবাদী আর মহান শিল্পী সাহিত্যিকের জন্ম হওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠবে, এবং জন্ম হলেও জীবন যাপন তাঁদের দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। দেশটা পাকিস্তানের চেয়ে অধম আর আফগানিস্তানের চেয়ে নিকৃষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”

উল্লেখ্য বাংলাদেশের সংবিধানে দেশটি ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ বলে লিখিত হলেও এ দেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। এ নিয়ে বিতর্ক প্রবল। বাংলাদেশে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সামরিক শাসনের সময় সংবিধানে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ অন্তর্ভুক্ত করানো হয়। তসলিমা নাসরিনসহ বাংলাদেশি মুক্তমনারা বারবার রাষ্ট্রধর্ম বাতিলের পক্ষে সরব। তাঁদের অভিযোগ, যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তারা ধর্মীয় মৌলবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে রাষ্ট্রধর্ম বাতিল বিষয়টি উপেক্ষা করে।