মমতার অনুরোধ নাকচ, ইস্তফার চিঠি নিয়ে দিল্লির পথে জহর

দীর্ঘক্ষণ কথা বলার পরেও বরফ গলেনি। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) অনুরোধ না রেখেই তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা জানালেন…

Mamata's request rejected, jawhar heads to Delhi with resignation letter

দীর্ঘক্ষণ কথা বলার পরেও বরফ গলেনি। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) অনুরোধ না রেখেই তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা জানালেন জহর সরকার। শুধু তাই নয়, তিনি দিল্লিতে গিয়ে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে তাঁর কাছে সাক্ষাতের সময় চাইবেন। এর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে নিজের সাংসদ পদ ছাড়ার কথা এর আগেই জানিয়েছিলেন তিনি। শোনা যাচ্ছে, বুধবারই নিজের সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিতে দিল্লি যাচ্ছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ।

এর জন্য প্রস্তুতিপর্বও শুরু করে দিয়েছেন তিনি। ওই দিনই উপরাষ্ট্রপতির দফতরে গিয়ে সাক্ষাত করে নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন আমলা। তবে দিল্লিতে খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পেরেছেন, রাজ্যসভার চেয়ারম্যান তথা উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় বর্তমানে বিশেষ কাজের জন্য রাজধানীর বাইরে রয়েছেন। তাই এদিন উপরাষ্ট্রপতির সঙ্গে যদি তাঁর দেখা নাও হয় তাহলে ধনখড়ের কাছে সাক্ষাতের সময় চেয়ে লিখিত আবেদন করে আসবেন জহর। তবে সেখানে আবেদনপত্র জমা দিয়ে আপাতত কলকাতায় ফিরে আসবেন প্রাক্তন আমলা।

   

রবিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে নিজের সাংসদ পদ ছাড়ার কথা জানিয়েছিলেন প্রসার ভারতীর এই প্রাক্তন অধিকর্তা। মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে নিজের ইস্তফা দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে জহর লিখেছেন, “আমি গত একমাস ধৈর্য ধরে আরজি কর হাসপাতালের ঘৃণ্য ঘটনার বিরুদ্ধে সবার প্রতিক্রিয়া দেখেছি আর ভেবেছি, আপনি কেন সেই পুরনো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে সরাসরি জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলছেন না। এখন সরকার যেসব শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা এক কথায় অতি অল্প এবং অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।

মাননীয়া মহোদয়া, বিশ্বাস করুন, এই মুহূর্তে রাজ্যের সাধারণ মানুষের যে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন ও রাগের বহিঃপ্রকাশ আমরা সবাই দেখছি, এর মূল কারণ কতিপয় পছন্দের আমলা ও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পেশিশক্তির আস্ফালন। আমার এত বছরের জীবনে এমন ক্ষোভ ও সরকারের প্রতি সম্পূর্ণ অনাস্থা আগে কখনও দেখিনি।” সেদিনই জহরকে ফোন করে দীর্ঘক্ষণ ধরে তাঁরা সাথে কথা বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এই কথোপকথনেও আখেরে লাভ হয়নি। দলনেত্রীর অনুরোধ যে তাঁর পক্ষে আর রাখা সম্ভব হচ্ছে না, তা জানিয়ে বিদায়ী সাংসদ বলেছেন, “মনস্থির যখন করেই ফেলেছি, তখন আর ইস্তফার জন্য বিলম্ব করতে চাই না।

রাজ্যসভার চেয়ারম্যান এখন রাজধানীতে নেই। তাই দিল্লি গিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আবেদন জানিয়ে আসব। তিনি ফিরলেই যাতে আমাকে সাক্ষাতের সময় দেন, সে ভাবেই আবেদন জানাব। উপরাষ্ট্রপতি সময় দিলেই দিল্লি গিয়ে আমি আমার পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে আসব। অযথা সময় নষ্ট করতে চাই না।” প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায় দুর্নীতি চক্রে ইডির হাতে গ্রেফতার হয়। সেসময় সেই ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছিলেন জহর। কিন্তু সেই বিবৃতির জন্য দলে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। সেই সময়েই সাংসদ পদ ছাড়তে চেয়েছিলেন তিনি। তবে এবার দুর্নীতি ও আরজি কর সব ঘটনা নিয়েই ইস্তফা দিয়ে রাজনীতি থেকে বেরোনোর সিদ্ধান্ত নিলেন জহর সরকার।