সন্দীপের ভূমিকা নিয়ে একাধিক ‘সুপ্রিম’ প্রশ্ন

৯ অগাস্ট আরজি করে (RG Kar Case) তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটে। এরপর সেই নৃশংস ঘটনার বিচারের দাবিতে দিকে দিকে ওঠে প্রতিবাদের ঝড়।…

supreme court hearing of RG Kar Case

short-samachar

৯ অগাস্ট আরজি করে (RG Kar Case) তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটে। এরপর সেই নৃশংস ঘটনার বিচারের দাবিতে দিকে দিকে ওঠে প্রতিবাদের ঝড়। কিন্তু আজ প্রায় এক মাস হতে চললেও এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত অভিযুক্তরা এখনও অধরা। এবার সেই এক মাসের মাথায় অর্থাৎ ৯ সেপ্টেম্বর ফের সুপ্রিম কোর্টে হল আরজি কর মামলার পরবর্তী শুনানি। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার স্টেটাস রিপোর্ট জমা দেয় সিবিআই ও রাজ্য সরকার। শুনানি পর্বের শুরুতেই প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় সিবিআইয়ের কাছে জানতে চায় আরজি করের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বাড়ি থেকে হাসপাতালের দূরত্ব ঠিক কতটা?

   

প্রত্যুত্তরে সিবিআইয়ের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আদালতে জানিয়েছেন, “১৫-২০ মিনিটের পথ। চাইলে আপনারা রিপোর্টের সঙ্গে চার্টটি দেখতে পারেন।” এরপরেই প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন তুলে জিজ্ঞাসা করেন, ঘটনার দিন অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা ঠিক কখন রুজ্জু করা হয়েছিল? এ বিষয়ে আদালতে রাজ্যের তরফ থেকে জানানো হয়, দুপুর ১টা ৪৭ মিনিটে মৃত্যু শংসাপত্র দেওয়া হয়েছিল। অন্যদিকে অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছিল দুপুর ২টো ৫৫মিনিটে। এর পাশাপাশি আদালত রাজ্যের কাছে জেনারেল ডায়েরির ঠিক কখন করা হয়েছিল সেই সময় জানতে চাইলে এ বিষয়ে রাজ্যের তরফ থেকে জানানো হয়, জেনারেল ডায়েরিও একই সময় ঠিক ২টো ৫৫মিনিটেই করা হয়েছিল।

এর পাশাপাশি সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ সিবিআইকে দেওয়া হয়েছে কিনা সেই নিয়ে বিচারপতি রাজ্যের কাছে জানতে চায়। এর জবাবে রাজ্যের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, সমস্ত ফুটেজই তাঁরা সিবিআইকে দিয়েছে। তবে এদিন আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়েছে আরজি কর কাণ্ডের ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া। সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি সংশয় প্রকাশ করে জানিয়েছেন, “সন্ধ্যে ৬টার পর ময়নাতদন্ত করার আইন দেশের কোথাও নেই। দ্রুত দেহ সৎকারের জন্য এটা করা হয়েছে।” সেখানে প্রধান বিচারপতি রাজ্যকে প্রশ্ন করেছে, “দেহ যখন ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছিল সেই চালান কোথায়?” এ বিষয়ে সিবিআই আদালতে জানিয়েছে, তাঁরা রাজ্যের কাছ থেকে এ বিষয়ে কোন চালান পাননি।

চালানের প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতির দাবি, “চালান এই কারণেই গুরুত্বপূর্ণ যে তাতে বোঝা যায় দেহের সাথে কী কী পাঠানো হয়েছিল। এই চালান ছাড়া দেহ ময়নাতদন্তের জন্য গ্রহণ করা যায় না।” তবে এদিন আদালতে আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি সংশয় প্রকাশ করে বলেছেন, “২৭ বছরের কর্মজীবনে দেখিনি যে, এফআইআর হওয়ার আগেই ‘সার্চ এন্ড সিজার’।” সিবিআইয়ের তরফে সলিসিটর জেনারেল সুপ্রিম কোর্টে বলেছেন, “সকাল সাড়ে ৯টায় দেহ দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। ফরেন্সিক রিপোর্ট বলছে, দেহ যখন পাওয়া গিয়েছিল, তখন তা অর্ধনগ্ন অবস্থায় ছিল। তাঁর দেহে ক্ষতচিহ্ন ছিল। ওই সব নমুনা এমস বা অন্য কোনও ল্যাবরেটরিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিবিআই।”

ঘটনার এক মাস পরেও কেন মৃত্যুর সময় জানা গেল না, তা নিয়ে এদিন প্রশ্ন তুলে আদালতে আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি জানিয়েছেন, “বলা হচ্ছে, মৃতার পা ৯০ ডিগ্রি কোণে ছিল। হাঁটু ভাঙা না হলে এটা সম্ভব নয়।” সেইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, হাসপাতালের শৌচালয়ের সব টাইলস বদলে ফেলা হয়েছে তাই এখন অভিযুক্তের লুমিনেল পরীক্ষা হলেও কিছু পাওয়া যাবে না। তবে এই ঘটনা প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় প্রশ্ন তুলে জানিয়েছেন, “৩ হাজার ৭৪৭ টি সিসিটিভি রাজ্যের মেডিকেল কলেজগুলোতে কাজ করে, তাহলে এই ঘটনা কীভাবে ঘটে?”

এদিকে আরজি করের ঘটনার জন্য পথে নেমে আন্দোলন করার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে কর্মবিরতি পালন করছেন সেখানকার জুনিয়র চিকিৎসকরা। তাই এদিন আদালতে প্রধান বিচারপতি আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের কাল বিকেল ৫ টার মধ্যে কাজে ফেরার আহ্বান দিয়েছেন। এই ঘটনায় সিবিআইকে ফের স্টেটাস রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফের সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ১৭ সেপ্টেম্বর।