রবীন্দ্রনাথের লেখা জাতীয় সঙ্গীত রক্ষায় বাংলাদেশের বাম সংগঠন ‘উদীচী’র গণপ্রতিরোধ বার্তা

সরকারি চাকরিতে আসন সংরক্ষণের প্রতিবাদ ও রক্তাক্ত গণবিক্ষোভ গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ (Bangladesh) থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন শেখ হাসিনা। তাঁর সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ জুড়ে চলছে…

Bangladesh Rabindranath National Anthem

সরকারি চাকরিতে আসন সংরক্ষণের প্রতিবাদ ও রক্তাক্ত গণবিক্ষোভ গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ (Bangladesh) থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন শেখ হাসিনা। তাঁর সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ জুড়ে চলছে জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের দাবি। বিভিন্ন সংগঠন সরব। বিশেষত ইসলামি সংগঠনগুলি একযোগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত জাতীয় সঙ্গীত বাতিলের দাবিতে সোচ্চার। অন্যদিকে জাতীয় সঙ্গীত ধরে রাখতে প্রতিরোধ বার্তা দিল বাংলাদেশ ‘উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী’।

সারাদেশে একযোগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার কর্মসূচি দিয়েছে বাম সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী। সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় ঢাকায় উদীচী চত্বরে উন্মুক্ত স্থানে এই কর্মসূচি পালন করা হবে। একই সময়ে উদীচীর সব জেলা ও শাখা সংসদের আয়োজনে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার পাশাপাশি পতাকা উত্তোলন করা হবে।

   

উদীচী জানিয়েছে, “একটি ধর্মান্ধ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণঅভ্যূত্থানের মূল সুরকে বিকৃত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এরা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনার বিরোধীতা করা থেকে শুরু করে জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকার ওপর আঘাত হানতে শুরু করেছে। এই হীন চক্রান্তের প্রতিবাদ এবং এর সঙ্গে জড়িতদের রুখে দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

উদীচী সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল সংযুক্ত পাকিস্তান আমলে-১৯৬৮ সালে। তৎকালীন পাক সরকার সামরিক শাসন চালাচ্ছিল। এর প্রতিবাদে পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট নেতা সত্যেন সেন উদীচী প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠালগ্নে থেকেই উদীচী সদস্যরা বাঙালি সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ বার্তা দিতে থাকেন। ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তানের রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানে পাক সামরিক শাসক আয়ুব খানের পতন হয়েছিল। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে উদীচী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। বাংলাদেশ তৈরি হলে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী দেশটির প্রধান সাংস্কৃতিক সংগঠনের মর্যাদা পায়।

যেভাবে ‘সোনার বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ‘আমার সোনার বাংলা’ রচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯৭১ সালে রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তান থেকে ছিন্ন হয়ে তৈরি হয় বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের জেল থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডনে চলে যান। লন্ডন থেকে নয়াদিল্লি আসার পথে মুজিবুর রহমানের সফরসঙ্গী ছিলেন ভারতীয় কূনীতিক শশাঙ্ক শেখর ব্যানার্জি।

কূটনীতিক শশাঙ্ক শেখর ব্যানার্জি তাঁর ‘বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় সঙ্গীত’ বইয়ে লিখেছেন, ১৯৭২ সালের ৯ জানুয়ারি লন্ডন হিথ্রো বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে এলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁকে স্বাগত জানালেন ব্রিটেনের সরকার ও কমনওয়েলথ বিভাগের কর্মকর্তা ইয়ান সাদারল্যান্ড ও লন্ডনে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার আপা বি পন্থ। আমাকে দেখে শেখ মুজিব বলেন, ‘ব্যানার্জি, এখানেও আছেন!’ সেসময় ইন্দিরা-মুজিব টেলিফোনে আলাপ হয়। এরপর রওয়ানা দিই বাংলাদেশের পথে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে জ্বালানি নিয়ে বিমানটি উড়ছে। বঙ্গবন্ধু জানালা দিয়ে শ্বেতশুভ্র মেঘের দিকে অপলক তাকিয়ে রইলেন। কিছুক্ষণ পর গাইতে লাগলেন, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’। তার চোখে জল।

তিনি বললেন,‘ব্যানার্জি, আপনিও ধরুন। রিহার্সেল দিয়ে নিই।’ এরপর আমাকে অবাক করে দিয়ে বঙ্গবন্ধু উঠলেন, ‘এ গানটি হবে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। কেমন হবে বলেন তো?’ শশাঙ্ক জবাব দিলেন, ‘ইতিহাসে তাহলে প্রথমবারের মতো দুটি দেশের জাতীয় সংগীতের লেখক হবেন একই ব্যক্তি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।’