ধর্মতলায় আচমকা রাতের দখল নিল স্বস্তিকা-সোহিনী-দেবলীনারা

বলা হয়, সময় অনেক ক্ষতই শুকিয়ে দেয়। একসময় অনেকে মনে করেছিলেন আর জি কর ধর্ষণকাণ্ডে (RG Kar Rape-Murder Case) নাগরিক সমাজের প্রতিবাদের তীব্রতা হয়ত কমবে।…

Dharna Movement Erupts in Dharmatala by Civil Society Over RG Kar Rape-Murder Case

বলা হয়, সময় অনেক ক্ষতই শুকিয়ে দেয়। একসময় অনেকে মনে করেছিলেন আর জি কর ধর্ষণকাণ্ডে (RG Kar Rape-Murder Case) নাগরিক সমাজের প্রতিবাদের তীব্রতা হয়ত কমবে। সামনেই দুর্গাপুজোর মরশুম, উৎসবপ্রিয় বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবে হয়তবা প্রতিবাদের আগুন আপাতত ছাই চাপা পড়বে। কিন্তু বাংলার শাসকদলের সমস্ত হিসেব এবং অনুমান সম্ভবত ভ্রান্ত প্রমাণিত হতে চলেছে।

সারা সপ্তাহ ধরেই আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে একাধিক ছোট-বড় মিছিল, জমায়েত হয়ে চলেছে কলকাতা সহ রাজ্যজুড়ে। কিন্তু গত সপ্তাহের মতো এই সপ্তাহেও শনি রোববারে তার তীব্রতা আরও বহুগুণ বেড়েছে। রবিবার কলকাতার রাজপথে ‘আমার তিলোত্তমা’ মঞ্চের ডাকে নাগরিক সমাজের মহামিছিলে জনতার ঢল নেমেছে। শুধু জনতাই নয় টলিউড সেলিব্রিটিদেরও একটা বড় অংশ ধর্ষক বা ধর্ষকদের চরম শাস্তি চেয়ে মিছিলে পা মিলিয়েছে।

   

স্বস্তিকা মুখার্জি, সৃজিত মুখার্জি থেকে শুরু করে অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, দিতিপ্রিয়া থেকে শুরু করে দেবলীনা টলিউডের একাধিক সুপরিচিত মুখকে আজ দেখা গিয়েছে এই মিছিলে। কিন্তু সন্ধ্যেবেলাতেই মিছিলের মধ্যেই হঠাৎ করে সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হয়। সাধারণ মানুষেদের সঙ্গে আজ রাত জাগবেন টলিউডের সেলিব্রিটিরাও এরকমই ঘোষণা করা হয়। ভোর চারটে অবধি ধর্ণা মঞ্চে থাকবেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সেলিব্রেটিরা। এমনকি প্রয়োজনে ঝরনার সময় আরও বাড়তে পারে বলেও হুশিয়ারি দিয়েছেন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের একটা বড় অংশ।

মিছিলে অংশগ্রহণকারী টলিউড পরিচালক বিরসা দাশগুপ্তের বক্তব্য যে তারা পাঁচ দফা দাবিতে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর স্বাস্থ্য দপ্তর নারী এবং শিশু কল্যাণ দপ্তর এবং সেই সঙ্গে পরিবহন দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছিলে। এখনও অবধি ইমেল করে পাঠানো সেই চিঠির কোনও জবাব কোনও দফতরের আধিকারিকদের তরফ থেকে আসেনি বলেই দাবি করছেন তারা। তাদের দাবি যতক্ষণ অবধি না কোনো সন্তোষজনক জবাব আসছে ততক্ষণ অবধি তারা ধর্না থেকে না উঠবারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ইতিমধ্যেই আরজি করের ধর্ষণকাণ্ড নিয়ে গান গেয়েছেন অরিজিৎ সিং। যা নিয়ে কার্যত তাকে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষ। আর অরিজিৎ-এর গাওয়া সেই গানই আজকে মিছিলে অংশগ্রহণ মানুষের গলায় গলায় প্রতিধ্বনিত হয়েছে। ক্রমশ যেন গণ-আন্দোলনের থিম সং হয়ে উঠেছে অরিজিতের এই গান। খোলা গলায় কিংবা গিটারের সঙ্গে পথ চলতে চলতে আন্দোলনকারীরা সুরে সুর মিলিয়েছেন।

মিছিলে অংশগ্রহণকারী মানুষদের মুখে আরও একটি মারাত্মক অভিযোগের কথা শোনা যাচ্ছে। নারীদের হেনস্থা বিরোধী এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেই মহিলা হেনস্থার ঘটনা ঘটেছে, এমনটাই তাদের অভিযোগ। ধর্মতলার এই প্রতিবাদ সমাবেশে একজন তরুণী নিগৃহীতা হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের কেউই কোন জড়িতকে ধরতে পারেনি বলে অভিযোগ।

সবমিলিয়ে দুর্গাপুজোর মাসখানেক বাকি থাকতে বঙ্গের সেই চেনা ছবি আর দেখা যাচ্ছে না। যে ধর্মতলা চত্বর এই সময় পুজোর কেনাকাটার ভিড়ে ব্যস্ত থাকতো, সেখানে ভিড় তো হচ্ছে, তবে তা কেনাকাটার নয়, প্রতিবাদের ভিড়। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে রাস্তায় এরকমই ভিড় দেখা যাচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই।নারী-পুরুষ বয়স নির্বিশেষে সেই ভিড়ের একটাই কন্ঠ, একটাই স্বর। আর সেটা হল ‘জাস্টিস ফর আরজিকর ‘।