বন্যা কূটনীতি! ‘বাঁধ খোলা’ বিতর্কে বাংলাদেশকে জবাব দিল ভারত

তিনদিকে বাংলাদেশ ঘেরা ত্রিপুরায় ভয়াবহ বন্যা (Tripura Flood) পরিস্থিতি। সেই বন্যার জল বাংলাদেশে ঢুকে সে দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে জলবন্দি করেছে। তবে বাংলাদেশ থেকে ভেসে আসা…

Tripura Flood, ত্রিপুরা বন্যা

তিনদিকে বাংলাদেশ ঘেরা ত্রিপুরায় ভয়াবহ বন্যা (Tripura Flood) পরিস্থিতি। সেই বন্যার জল বাংলাদেশে ঢুকে সে দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে জলবন্দি করেছে। তবে বাংলাদেশ থেকে ভেসে আসা অভিযোগ, ভারতের দিকে জলাধারের ফটক বিনা নোটিশে খুলে দেওয়া হয়। সেই কারণে লাখ লাখ গৃহহীন। এই অভিযোগ উড়িয়ে দিল ভারত সরকার।

অভিযোগ কী?
বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ঘনিষ্ঠ ছাত্র নেতাদের দাবি, ত্রিপুরার ডুম্বুর জলাধারের গেট খুলে দিয়েছে ভারত। সেই কারণে ভারতের বিভিন্ন জায়গার পাশাপাশি বাংলাদেশের বহু জায়গা জলের তলায়। তারা আরও অভিযোগ করেছেন, ‘ভারত পানিতে মারার চেষ্টা করছে’ কারণ নয়াদিল্লির বন্ধু সরকার ক্ষমতাচ্যুত। তিন দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো কেন ভারত সরকার আগাম নোটিশ না দিয়ে ডুম্বুর জলাধারের গেট খুলল এই প্রশ্ন তুলছে বাংলাদেশ।

   

ভারতের জবাব
ত্রিপুরার গোমতী নদীর বাঁধ খুলে দেওয়া নিয়ে যে আলোচনা চলছে, তা সঠিক নয় বলছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত কয়েকদিন ধরে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গোমতী নদী সংলগ্ন অঞ্চলে এই বছরের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বাংলাদেশে বন্যার প্রাথমিক কারণ, বাঁধের ভাটি অংশের অববাহিকায় বিপুল জলপ্রবাহ।

ত্রিপুরায় গোমতী নদীর ওপর দেয়া বাঁধের জল ছাড়ায় বাংলাদেশে বন্যার কারণ নাকচ করে দিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ত্রিপুরা রাজ্যের ডুম্বুর বাঁধটির অবস্থান সীমান্ত থেকে বেশ দূরে। এই বাঁধের উচ্চতা প্রায় ৩০ মিটার। ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের এই বাঁধ থেকে যে শক্তি উৎপাদন হয়, তার সুবিধাভোগী বাংলাদেশও। এখান থেকে বাংলাদেশ ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নেয়।

বিদেশমন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী থাকায় দুই দেশের জন্যই বন্যা এমন একটি সমস্যা, যা জনগণের জীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি করে।সমস্যা সমাধানে দ্বিপাক্ষিক পরামর্শ প্রয়োজন বলেও এখানে উল্লেখ করা হয়।

ত্রিপুরার পরিস্থিতি:
আবহাওয়া বিভাগ জানাচ্ছে, বাংলাদেশের উত্তর অংশে ঘূর্ণাবর্তার প্রভাবে ত্রিপুরায় অতি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ঘূর্ণাবর্তার তীব্রতা কিছুটা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ২৪ ঘন্টায় রাজ্যের সমস্ত জেলায় লাল সর্তকতা জারি করা হয়েছে। ধলাই, গোমতী জেলা, সিপাহীজলা এবং দক্ষিণ জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সর্তকতা জারি রয়েছে। গোমতী, হাওড়াসহ রাজ্যের সবকটি নদীর জলস্তর সতর্কসীমা পেরিয়েছে। রাজধানীর আগরতলায় হাওড়া নদী লাগোয়া এলাকাগুলিতে পরিস্থিতি বেসামাল।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি:
সীমান্তের ওপারে ত্রিপুরা থেকে আসা বন্যার জলে নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ ছয়টি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম বাজার পানিতে তলিয়ে গেছে।বন্যার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ২০ কি.মি দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রক জানিয়েছে, বন্যার কারণে ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রায় ৩০ লাখ মানুষ বিপন্ন। দুর্গতদের এক কোটি ৮২ লক্ষ টাকা নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী থেকে ১৬০ জন সদস্য ও নৌবাহিনীর ৭১ জন সদস্য ও আটটি উদ্ধারকারী যান দুর্গত এলাকাগুলোতে কাজ করছে। উদ্ধারে নেমেছে বিজিবি রক্ষী বাহিনী।

বাংলাদেশের আবহাওয়া দপ্তর বলছে, বৃহস্পতিবারও বৃষ্টিপাত অব্যহত থাকতে পারে দেশের কিছু কিছু জেলায়। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।