“পুলিশ একজনকে অন্তত..”! আরজিকরের অধ্যক্ষের আর্জিতে কোন ভয়ংকর ইঙ্গিত?

আরজিকর (RG Kar) কাণ্ডে কার্যত বিক্ষোভরত ইন্টার্ন এবং চিকিৎসকদেরই জয় হল। এর আগেও বেশ কয়েকবার অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছে পড়ুয়ারা। তাঁর পদত্যাগের…

আরজিকর (RG Kar) কাণ্ডে কার্যত বিক্ষোভরত ইন্টার্ন এবং চিকিৎসকদেরই জয় হল। এর আগেও বেশ কয়েকবার অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলেছে পড়ুয়ারা। তাঁর পদত্যাগের দাবিতে ছাত্র বিক্ষোভ নতুন নয়। এমনকি বদলি হয়েও অতীতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ফিরে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু এবার স্বেচ্ছায় করলেন পদত্যাগ। আর সেই পদত্যাগে আরজিকরের রহস্যের জাল আরও যেন জটিলই হল।

গত কয়েক দিনে একাধিক তত্ত্ব উঠে এসেছে এই পৈশাচিক ধর্ষণকাণ্ডকে ঘিরে। তবে মোটামুটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একটা মিল পাওয়া গিয়েছে। ধৃত সিভিক ভলেন্টিয়ার্স শুধু একা নয়, এই নারকীয় পৈশাচিক কর্মে তার সহযোগী আরও অন্য কেউ আছে। এবার খোদ অধ্যক্ষ পদত্যাগের পর সংবাদমাধ্যমের সামনে যে বিবৃতি দিলেন, তাতে কি তিনি না বলতে চেয়েও সেই ইঙ্গিতই দিয়ে গেলেন?

   

গত ২-১ দিনে বেশ কিছু অডিও ক্লিপ এবং হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট ভাইরাল হয়েছে। এক০টি অডিয়া ক্লিপে আর জি কর নিয়ে একাধিক রহস্য এবং এই ধর্ষণকাণ্ডে আরও অন্য ব্যক্তির যোগের স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। নাম না করে কোনও এক অতি প্রভাবশালীর কথাও সেখানে বলা হয়েছে। অপরদিকে ডাক্তারদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের চ্যাট-এ একজন চিকিৎসক পরিষ্কার বলছেন, তারা ‘দৈত্য’ তৈরি করছেন। যা প্রকারান্তরে সর্ষের মধ্যেই ভুতের অবস্থানের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

আর এবার সন্দীপ ঘোষ তার পদত্যাগের পরে আত্মপক্ষ সমর্থনে অনেক কিছু বললেন। তার না বলা কথা তার বক্তব্য বলে রটিয়ে দিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুললেন। সন্দীপবাবুর বক্তব্যে হাসপাতালে ঘুঘুর বাসার ইঙ্গিতও স্পষ্ট। এমনকী তার বিরুদ্ধে ছাত্র বিক্ষোভের জন্য আদতে দায়ী তারই ‘সততা’, এমনই দাবি সন্দীপ ঘোষের।

তার দাবি, ঘটনার ব্যাপারে খবর পাওয়ার পরই তিনি সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজের ব্যবস্থা করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন। নইলে নাকি এই সমস্ত ক্ষেত্রে, অপরাধীকে শনাক্ত করতেই ৩-৪ দিন লেগে যায়। তারপরেই তার সেই উক্তি যা নিয়ে রীতিমতো রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

তিনি দাবি করেছেন যে তার এই সহযোগিতার জন্যই ‘ অন্তত একজনকে’ পুলিশ এত তাড়াতাড়ি গ্রেফতার করতে পেরেছে। এই ‘অন্তত একজন’ শব্দবন্ধটা কী শুধুই কথার কথা? নাকি এর পিছনে লুকিয়ে আছে কোনও না বলতে চাওয়া সত্যি? যে দাবি বিভিন্ন মহল এমনকি পোস্টমর্টেম অফিসারেরাও করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে, তাহলে কি সেটাই সত্যি?

এই নারকীয় ধর্ষণকাণ্ডে তাহলে শুধু একা সঞ্জয় নয়, আরও অন্য কেউ জড়িত? প্রশাসন কি তাহলে তাদের আড়াল করার চেষ্টা করছে? এরকম হাজারো প্রশ্ন প্রথম দিন থেকেই উঠে আসছে! যদিও এখনো অবধি তদন্তের গতিপ্রকৃতি ধৃত সিভিক ভলেন্টিয়ার্স সঞ্জয়কে কেন্দ্র করেই ঘনীভূত হচ্ছে।

কিন্তু ‘খুন করে ধর্ষণের’ ক্ষেত্রে একাধিক পয়েন্ট উল্লেখ করছেন বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা। সেই পয়েন্ট অনুসারে কিন্তু এই পৈশাচিক কুকর্মে একাধিক চরিত্রের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ঘটনার পরপরই মুখ্যমন্ত্রী মৃতার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। আজ স্বয়ং তিনি সোদপুরে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে অভিষেক, কঠোরতম শাস্তি বা এনকাউন্টারের দাবি উঠেছে সব পক্ষ থেকেই।

কিন্তু তা সত্ত্বেও একাধিক মহল থেকে একাধিক সম্ভাবনায় রহস্যের জাল ক্রমশ বেড়েই চলেছে। খোদ পদত্যাগী অধ্যক্ষের ‘একজন অন্তত’ উক্তিতে যেন সেই রহস্যের চোরাপথকে আরও জটিল করল। বিভিন্ন ক্ষেত্রে এরকম ঘটনার পর একাধিক সত্যি উঠে আসে। আর জি কর কে ঘিরেও এখন একাধিক বেনিয়ম অনিয়মের সত্যি সামনে আসছে।

রাতে অবৈধ বহিরাগতদের মুক্তাঞ্চল থেকে শুরু করে নেশার আসরের একাধিক প্রমাণ সামনে উঠে আসছে। এতদিন সেই অর্থে কোনও বড়সড়ো সমস্যা না হওয়ায় কি সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করা হয়েছিল? নাকি এর পিছনে রয়েছে কোন বড়সড় প্রভাবশালী চক্র?

এই প্রশ্ন উঠছে বারবার। একজন দায়িত্বশীল, কর্তব্যপরায়ণ তরুণী ডাক্তারের নির্মম মৃত্যু যেন চকচকে কার্পেটের তলায় লুকিয়ে থাকা ধুলোর মত ধূসর ‘সত্যি’গুলোকে সামনে নিয়ে আসছে। সেই সত্যি মেনে নিয়ে কী সত্যিই শিক্ষা নেবে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রক থেকে শুরু করে প্রশাসন? নাকি আবারও কিছুদিন পরে সেই গয়ংগচ্ছ মনোভাবই ফিরে আসবে? আপাতত বিরলের মধ্যে বিরলতম ধর্ষণ রহস্যের অন্ধকারে সেই উত্তরই হাতড়ে বেড়াচ্ছে আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ।