রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট আশঙ্কা, সমর্থকদের আহ্বান দেশত্যাগী হাসিনার পুত্র জয়ের, কী ঘটেছিল সেদিন?

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: ফোন এল ১৫ আগস্টের ভোরে।। দু’চার কথায় সব শুনে ভারতের তৎকালীন গোয়েন্দা প্রধান আর এন কাও কেঁপে গেছিলেন। বুঝলেন তিনি যা আন্দাজ করেছিলেন…

Fear of the bloody 15 August Bangladesh martyr Hasinas son Joy what happened that day, রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট আশঙ্কা, সমর্থকদের আহ্বান দেশত্যাগী হাসিনার পুত্র জয়ের, কী ঘটেছিল সেদিন?

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: ফোন এল ১৫ আগস্টের ভোরে।। দু’চার কথায় সব শুনে ভারতের তৎকালীন গোয়েন্দা প্রধান আর এন কাও কেঁপে গেছিলেন। বুঝলেন তিনি যা আন্দাজ করেছিলেন তাই ঘটে গেছে। জলদি তাঁর ‘ম্যাডাম’কে সব জানালেন। সব শুনে হতচকিত ইন্দিরা গান্ধী! তাঁর ‘শেখ সাহাব’ নেই। ভারত বারবার সতর্কতা দিলেও তিনি বলেছিলেন, বাঙালি আমারে মারবে? ঘটনাচক্রে ওই দিন বাঙালির হাতেই সপরিবারে খুন হন বাংলাদেশের জাতির পিতা ও রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান।

পাকিস্তান কেটে বাংলাদেশ তৈরির পর নিজ শাসনকালে (১৯৭১-১৯৭৫) শেখ মুজিবুর রহমান একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চেয়েছিলেন। মুজিব ‘স্বৈরাচারী’ নীতি নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠে গেছিল। ১৫ আগস্টেই সেই ঘোষণা করার কথা ছিল।

   

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভারতে স্বাধীনতা পালনের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের ঠিক আগেই পড়শি বাংলাদেশে সেনা অভ্যুত্থানে শেষ হয়েছিল শেখ শাসন! বিশ্ব কাঁপানো এই ঘটনার ৪৯ বছরে ফের বাংলাদেশে পতন হয়েছে শেখ শাসন। রক্তাক্ত গণবিক্ষোভের ধাক্কায় মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহনা ফের ভারতে আশ্রিত। পিতা-মাতা ও পরিবারের বাকি সদস্যদের খুনের পরেও যেমন তাঁরা ভারতে আশ্রিত ছিলেন। তবে এখন হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। তাঁকে ঘিরে বিশ্ব জুড়ে তীব্র আলোড়ন।

মা-মাসি ভারতে। হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় আছেন আমেরিকায়। সেদেশের সরকার শেখ হাসিনার ভিসা আপাতত বাতিল করেছে। আর আমেরিকা থেকেই জয় লাগাতার পরস্পর বিরোধী বিবৃতি দিয়ে চলেছেন। তিনি একবার বলছেন, মা আর বাংলাদেশে ফিরবেন না। পরে বলেছেন ভোট ঘোষণা হলেই মা ফিরবেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে তাঁর মন্তব্যগুলি তৈরি করেছে ধোঁয়াশা।

সংখ্যালঘু নির্যাতন ‘গভীর উদ্বেগে’র, ঘরে-বাইরে ‘চাপে’ মুখ খুলল ইউনূস সরকার

বাংলাদেশে বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তবর্তী সরকার সাম্প্রতিক অভ্যুত্থানে হাসিনার ষোল বছরের শাসন অবসানকে ‘ছাত্র-জনতার বিপ্লব’ ও দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে চিহ্নিত করেছে। লক্ষ্যনীয় এই সরকার কোনোভাবেই মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ও যে বাড়িতে তাঁকে খুন করা হয়েছিল সেটি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার সমালোচনা করেনি। মনে করা হচ্ছে, আগামী ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে কোনও জাতীয় শোকদিবস পালিত হবে না।

সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ নীতির বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রেশ ধরে রক্তাক্ত বিক্ষোভে বাংলাদেশে গত ৫ আগস্ট পালাবদল হয়েছে। ওইদিন থেকেই কুঁকড়ে গেছে টানা ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ। এখন দলটির কিছু অস্তিত্ব শুধুমাত্র শেখ হাসিনার সংসদীয় এলাকা গোপালগঞ্জে। দলীয় সমর্থকদের চাঙ্গা করতে হাসিনা পুত্র জয় এবার ১৫ আগস্ট ঢাকায় আসার আহ্বান জানালেন।

ভিডিও বার্তায় জয় বলেন, “বঙ্গবন্ধু একটি দলীয় বিষয় না। বঙ্গবন্ধু হলেন জাতির পিতা। বঙ্গবন্ধু না হলে আজ আমরা বাংলাদেশ পেতাম না। আজকে পাকিস্তান হয়ে থাকতাম। সামনে ১৫ আগস্ট। সেই কালরাত, যে রাতে বঙ্গবন্ধু ও আমার পরিবারকে হত্যা করা হয়। আপনারা যদি স্বাধীনতার চেতনা বিশ্বাস করেন, আপনারা যদি বাংলাদেশকে ভালোবাসেন। এই যে বাংলাদেশে বাস করছেন এবং যদি মেনে নেন যে বঙ্গবন্ধু আপনাকে স্বাধীনতা দিয়েছে, আমাদেরকে স্বাধীনতা দিয়েছে। ১৫ আগস্ট আপনাদের প্রতি আহ্বান, শান্তিপূর্ণভাবে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে ফুল দিয়ে আসবেন। দোয়া করবেন, বঙ্গবন্ধুর জন্য, স্বাধীনতার চেতার জন্য, আমার পরিবারের জন্য।”

আওয়ামী লীগের এমন জমায়েতের পাল্টা গণপ্রতিবাদ কর্মসূচির আহ্বান করছে অভ্যুত্থানের মূল পক্ষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মঞ্চ। তাদের সমর্থন করেছে হাসিনা শাসনে কুঁকড়ে থাকা হঠাত বলীয়ান বিএনপি ও জামাত ইসলামিসহ বিভিন্ন সংগঠন। তাদের অভিযোগ, বিদেশি শক্তির মদতে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ক্ষমতা পুনরায় দখল করতে মরিয়া। ফলে ১৫ আগস্ট ঢাকায় ফের সংঘর্ষের তীব্র আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।