আবারও সেনা শাসনে ‘সোনার’ বাংলাদেশ (Bangladesh) । গোটা বাংলাদেশ (Bangladesh) জুড়ে একদিকে আন্দোলন সফলের রক্তাক্ত উল্লাস, অন্যদিকে সরকারপন্থী নেতা আমলা থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনসহ বিভিন্ন সরকারি ভবনে হিংস্র লুটপাটের চিত্র (Bangladesh)।
গণবিক্ষোভে প্রাণভয়ে দেশত্যাগের পর ভারতে এসেছেন বাংলাদেশ থেকে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) । আপাতত হাসিনার ঠিকানা উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের হিন্ডন এয়ারবেস। বিকেলবেলাতেই সেখানে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের আগমন ঘটেছে। যা নিয়ে শুধু দেশের রাজনীতি নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বেশ শোরগোল পড়েছে। কারণ মোদীর বিদেশ নীতির অন্যতম তুরুপের তাস বলা হয় অজিত ডোভালকে। তবে কূটনৈতিক মহলে চর্চা ডোভালের ইন্টেলিসেন্স সম্পূর্ণ অকৃতকার্য হয়েছে বাংলাদেশে।
ফলে ডোভাল যখন ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রায় এক ঘন্টা বৈঠক করেছেন, তখন জল্পনা ছড়ানোটাই স্বাভাবিক। শোনা যাচ্ছে হিন্ডন এয়ারবেস থেকে বেরিয়ে ডোভাল পৌঁছে গিয়েছেন সোজা নয়াদিল্লিতে বিদেশমন্ত্রীর কাছে। এটা পরিষ্কার যে হাসিনার বার্তা এবং রিপোর্ট তিনি নিয়ে গিয়েছেন বিদেশ মন্ত্রকে।
ভারতে থাকতে পারবেন ‘দেশত্যাগী’ হাসিনা? কী বলছে দিল্লি-ঢাকা বন্দি বিনিময় নীতি
আপাতত এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই খুব সম্ভবত আলোচনা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে। যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং থেকে শুরু করে বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শংকর এমনকি খোদ অজিত ডোভালও। এই মুহূর্তে ভারতের পদক্ষেপ কী হতে পারে সেটা নিয়েই এই উচ্চপর্যায়ের আলোচনা চলছে।
কিন্তু সেই সঙ্গে শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ নিয়েও আলোচনা হবে সেটা খুব স্বাভাবিক। আপাতত যা খবর পাওয়া যাচ্ছে, লন্ডনে আশ্রয় নিতে চাইছেন শেখ হাসিনা। লন্ডনে তাঁর নিজের বাড়ি রয়েছে। এমনকী তাঁর বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ ব্রিটেনের রাজনীতিতে প্রভাবশালী। কিন্তু এই মুহূর্তে ব্রিটেনের তরফ থেকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাব নাকচ করা হয়েছে বলেই শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে আবার ভারতের শেখ হাসিনার থাকা নিয়েও বেশ কিছু বিপদ রয়েছে।
প্রথমত হাসিনা রাজনৈতিক আশ্রয় নিতে ভারতে প্রবেশ করেনছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল যদি বাংলাদেশের নবগঠিত অভ্যন্তরীণ সরকার শেখ হাসিনাকে অপরাধী ঘোষণা করে? সেক্ষেত্রে ভারত পড়বে চরম বিড়ম্বনায়। কারণ ভারত বাংলাদেশের মধ্যে বন্দি প্রত্যার্পনের চুক্তি রয়েছে। বাংলাদেশের নতুন সরকার ক্ষমতাসীন হলেই শেখ হাসিনাকে বিচারের আওতায় আনবে। চুক্তির বলে হাসিনাকে ফেরত চা়ইবে। কারণ ইতিমধ্যেই সেই দেশের আন্দোলনকারী ছাত্র সংগঠন দেশত্যাগী হাসিনার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের দাবিও জানিয়ে দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে হাসিনার বিষয়ে ভারতের অবস্থা হবে ‘রাখি কুল, না রাখি শ্যামের’ মতন! ফলে নয়াদিল্লিতে হাসিনা আদৌ থাকতে পারবেন কি না তা নিয়েও ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে।
হাসিনা বাংলাদেশ ছাড়তেই মুক্তি পাচ্ছেন খালেদা জিয়া
এই সমস্ত সম্ভাব্য দিকের অঙ্ক কষতেই ব্যস্ত বিদেশ মন্ত্রক এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কারণ হাসিনার শাসনে পড়শি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক সম্পর্ক যথেষ্ট দৃঢ় ছিল। ‘ছিল’ বলা হচ্ছে কারণ রাজনৈতিক ডামাডোলে রপ্তানি এবং আমদানি দুটোই বন্ধ রয়েছে। পরিকাঠামো এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রচুর ভারতীয় বিনিয়োগও রয়েছে বাংলাদেশ জুড়ে। যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক বা যারাই দেশ চালাক, ভারতকে নিজের স্বার্থে তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতেই হবে। এক্ষেত্রে হাসিনার জন্য কোনওভাবেই যেন কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয় সেটাও মাথায় রাখতে হচ্ছে মোদীকে।
একসময় উগ্র মৌলবাদীদের দাবি মেনে লেখিকা তাসলিমা নাসরিনকে বাংলাদেশ থেকে নির্বাচিত করেছিলেন শেখ হাসিনা। সময়ের অদ্ভুত সমাপতন, এই মুহূর্তে তাসলিমা দিল্লিতে, আর হাসিনাও নির্বাসিত হয়ে ভারতে। দুই নির্বাসিত একই দেশে! বিশেষজ্ঞদের মতে যদি ভারত বা ইংল্যান্ড কোথাও জায়গা না পান হাসিনা, তাহলে তার গন্তব্য হয়ত হতে চলেছে ফ্রান্স বা ইতালি। অদ্ভুতভাবে তসলিমাও নির্বাসন পরবর্তী সময়ে ভারত থেকে ফ্রান্সেই গেছিলেন।
বলা হয় ‘ইতিহাস বারবার ফিরে আসে’। তবে দেখার বিষয়, দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে অন্যতম প্রভাবশালী চরিত্র শেখ হাসিনা আবার কখনও বাংলাদেশে তাঁর অস্তিত্ব ফিরিয়ে আনতে পারে কিনা। যদিও হাসিনার ছেলে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন তাঁর মা আর রাজনীতিতে ফিরবেন না। কিন্তু হাসিনার রক্তে রাজনীতি। সেই রাজনীতির টানে ১৯৮০ দশকে যেমন ‘নির্বাসিত’ হাসিনা বাংলাদেশে গিয়ে চমকে দিয়েছিলেন। দশকের পর দশক পার হয়েছে। মধ্য সত্তরের শেখ হাসিনা এখন ক্লান্ত পরাজিত। দেশত্যাগের আগে সর্বশেষ তাঁর মন্তব্য ‘অপশক্তির কাছে হেরে গেলাম’।