‘বঙ্গভঙ্গ’তেই সুকান্তকে ‘কিস্তিমাত’ শুভেন্দুর? ‘খেলা’ ঘুরিয়ে দিলেন মমতাই!

বিধানসভায় মমতার (Mamata Banerjee) সমর্থন মেলায় বিজেপির মধ্যেই কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে শুভেন্দু? অন্তত বিধানসভায় মমতা-শুভেন্দু সৌজন্যের আবহের দীর্ঘমেয়াদি ফল হিসাবে সেরকমই সম্ভবনা দেখতে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।…

Photo showing three people standing together. On the left is a man in a suit, Suvendu Adhikari, in the center is a woman in a saree, Mamata Banerjee, and on the right is a man in a white shirt, Sukanta Majumdar. They are all smiling and engaging with each other in a formal setting.

বিধানসভায় মমতার (Mamata Banerjee) সমর্থন মেলায় বিজেপির মধ্যেই কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে শুভেন্দু? অন্তত বিধানসভায় মমতা-শুভেন্দু সৌজন্যের আবহের দীর্ঘমেয়াদি ফল হিসাবে সেরকমই সম্ভবনা দেখতে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কথায় বলে রাজনীতি সম্ভাবনার শিল্প। আর সেই সম্ভাবনার শিল্পে আপাত-অসম্ভব যেকোনও জিনিসই সম্ভব। ঠিক তাঁরা যেমনটা তারা মনে করছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ক্ষেত্রে।

গত কয়েকদিন যাবৎ যেভাবে ওপার বাংলা উত্তাল, সেরকমভাবে এই বাংলার রাজনীতিও সরগরম। গত কয়েক সপ্তাহ জুড়ে এই বাংলার রাজনীতিতে ‘বঙ্গভঙ্গের’ গনগনে আঁচ। একদিকে কেন্দ্রীয় শিক্ষা এবং উত্তর-পূর্ব উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের করা প্রস্তাব। অন্যদিকে রাজ্যসভায় কোচবিহারের অনন্ত মহারাজের গ্রেটার কোচবিহার নিয়ে সওয়াল। এদিকে আবার বিজেপিরই বিহারের সাংসদের মুর্শিদাবাদ এবং বিহারের বেশ কিছু এলাকা নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের দাবি।

   

কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণভাবে একটা জিনিস লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা গোটা বিষয়টি থেকে কিন্তু বরাবর গা বাঁচিয়েই চলেছেন। কান পাতলে শোনা যায় যে বিজেপির অভ্যন্তরে বর্তমানে তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষের নাম সুকান্ত মজুমদার। লক্ষণীয়ভাবে লোকসভায় জিতে প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পরে সুকান্তর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এবং ভাষণের ধরনও কিন্তু অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কোথাও না কোথাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আক্রমণের অভিমুখ হচ্ছেন সেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতাই। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল।

যেচে শুভেন্দুর বাড়িতে গিয়ে চা খাওয়ার নিমন্ত্রণ চাইলেন মমতা!

আর এই অবস্থায় সুকান্তর উত্তরবঙ্গকে উত্তর-পূর্বের সঙ্গে একই লিস্টে রেখে উন্নয়নের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে যায়। এমনকী রাজ্যের বিজেপির এই বিষয়ে ‘অফিসিয়াল স্ট্যান্ড’ নিয়েও দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলেন মুরলীধর সেন লেনের মহারথীরা। এদিকে রাজ্য সভাপতির পদ ছেড়ে যাওয়ার আগেই বিরোধী রাজনীতির লাইম লাইট নিজের দিকে টেনে নিয়েছেন সুকান্ত।

একদিকে লোকসভায় কাঙ্ক্ষিত ফল না হওয়ার ব্যর্থতার চাপ, অন্যদিকে সুকান্তর হঠাৎ করে এরকম উঠে আসা। রাজ্য সভাপতি হলেও সুকান্ত বরাবরই শুভেন্দুর ছায়ায় ঢাকা পড়েছিলেন বলেই অভিমত বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু এবার ডক্টর সুকান্ত মজুমদার যেন খাপ খুলে বেরিয়েছেন। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে এতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছিলেন বিজেপির অভ্যন্তরে ‘শুভেন্দু-লবির’ লোকজনেরা।

আর এহেন অবস্থায় চমক অপেক্ষা করছিল বিধানসভার অভ্যন্তরে। বিধানসভায় শাসক-বিরোধী সৌজন্যের বেনজির চিত্র দেখা দিয়েছে আজ। শুভেন্দুর বঙ্গভঙ্গ বিরোধী বক্তব্যকে রাজ্যের প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন জানান খোদ মুখ্যমন্ত্রী। যা দেখে হতবাক অনেকেই। কিন্তু রাজনীতিবিদদের মতে এতে মমতা এবং শুভেন্দু উভয় পক্ষেরই লাভ হয়েছে। মমতা বঙ্গের উন্নয়নের স্বার্থে যে কোনও স্তরে যেতে পারেন, এরকম একটা ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারলেন। অপরদিকে শুভেন্দুও বাংলা বিরোধী নন এরকম একটা বার্তা কিন্তু পরোক্ষভাবে গেল জনমানসে।

ভেদ পানামা-রহস্য! রাতেই তড়িঘড়ি কলকাতা হাইকোর্টে জরুরি শুনানি

যদিও শুভেন্দু বারবার বলেছেন যে সুকান্তর প্রস্তাব আদতে বাংলা ভাগের জন্য নয়। কিন্তু উত্তরবঙ্গ নিয়ে সুকান্তর এই প্রস্তাবে নানা জল্পনা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। মজার বিষয় উত্তরবঙ্গে বিজেপি যথেষ্ট শক্তিশালী। ফলে এই উত্তরবঙ্গ লবি কি তাহলে আগামী দিনে গোটা বঙ্গের বিজেপিকে পরিচালনা করবে সেরকম প্রশ্ন উঠছিল। যদিও বিজেপিতে উত্তরবঙ্গ-দক্ষিণবঙ্গ বলে কোনও বিভাজন এখনও অবধি খোলাখুলি লক্ষ্য করা যায়নি। কিন্তু বঙ্গ বিজেপিতে সুকান্ত তাঁর প্রভাব ক্রমশ বাড়াতে চাইছেন বলেই মনে করছিলেন বিজেপির অভ্যন্তরে অনেক নেতাই।

সেক্ষেত্রে সবথেকে চাপে পড়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল শুভেন্দুরই। গত লোকসভায় বঙ্গ বিজেপিকে বাংলা বিরোধী তকমা দিয়ে ‘অল আউট’ প্রচারে নেমেছিল তৃণমূল। তার ফলও পাওয়া গিয়েছে হাতে নাতে। তার ওপরে আবার বাংলা ভাগের অভিযোগ। একদিকে ‘বাংলা বিরোধী’ তকমা ছাড়ার প্রচেষ্টা এবং অপরদিকে নিজের প্রতিপক্ষকে কিছুটা হলেও পাল্টা চাপ দেওয়া। মমতার দৌলতে দুই লক্ষ্যেই কার্যসিদ্ধি হয়েছে শুভেন্দুর। এমনকী অনেক বিশেষজ্ঞের মতে জনমানসে নেতা হিসেবে শুভেন্দুর ভাবমূর্তি আরও কিছুটা উজ্জ্বল হতে পারে এই ঘটনায়।

কিছুদিন আগে এই বিধানসভার অফিসেই শুভেন্দু ঘটা করে জন্মদিন পালন করেছিলেন দিলীপ ঘোষের। শুভেন্দু দিলীপের এহেন বন্ধুত্বপূর্ণ দৃশ্য কার্যত অকল্পনীয়ই ছিল একটা সময়। অপরদিকে আজ মমতা কার্যত মজা করে শুভেন্দুর বাড়িতে চা খেতে যাওয়ার কথা বললেন। ২০২১ সালের পর যা কেউ কখনও কল্পনাই করতে পারেনি। এটাও কখনো কেউ ভাবেনি যে, শুভেন্দুর বক্তব্যকে রাজ্যের প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন জানাবে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা। এমনকী বিধানসভায় শাসক-বিরোধী সমস্ত বিধায়ক একসাথে রাজ্য সংগীত গাইছেন! যা ছিল এতদিন কার্যত সূর্য পশ্চিম দিকে ওঠার শামিল।

সবজির বাজার গরম, চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে নিত্যপণ্য

অনেক বিশেষজ্ঞই এক্ষেত্রে আইনস্টাইনের সেই বিখ্যাত উক্তি মনে করিয়ে দিতে চাইছেন। যার মূল বক্তব্যই ছিল এই পৃথিবীতে সবই ‘আপেক্ষিক’। আর রাজনীতিতে শত্রুতা হোক কিংবা বন্ধুত্ব, সবই ‘আপেক্ষিক’, সবই ‘ক্ষণস্থায়ী’।

তবে অনেকের মতে ২০২৬-এর বিধানসভার আগে শুভেন্দুকে মমতার বিরুদ্ধে লড়ার পাশাপাশি নিজের দলের কিছু নেতার সাথেও লড়াই করতে হচ্ছে। ২০২১-এ বিজেপিতে আসার পর যে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল, তার অনেকটাই যেন এখন হারিয়েছেন তিনি। তাই একদিকে দলকে ক্ষমতার সরণিতে নিয়ে আসা, অন্যদিকে নিজের হৃত ক্ষমতার পুনরুদ্ধার। কিন্তু হাতে সময় অল্প। মাত্র দুটো বছর। এখন দেখা যাক রাজ্য রাজনীতিতে শুভেন্দুকে ঘিরে আর কী কী চমক দেখা যায় ২৬-এর বিধানসভার আগে।