ছাত্র আন্দোলনের আড়ালে জামাত ইসলামির ষড়যন্ত্র আছে দাবি করে সংগঠনটিকে সন্ত্রাস দমন আইনে নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ (Bangladesh) সরকার। এই নিষেধাজ্ঞায় সমর্থন জানালেও নিজ দেশের সরকারের বিরুদ্ধে নৈরাজ্য কায়েম করার অভিযোগ এনেছেন লেখিকা (Taslima Nasrin) তসলিমা নাসরিন। যে কোনও ধর্মীয় মৌলবাদী চিন্তাধারার বিরোধী তিনি দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত। তাঁর দাবি, নিষিদ্ধ করলেও জামাত ইসলামি ছড়িয়ে আছে খোদ হাসিনার (Sheikh Hasina) দলের অভ্যন্তরে এবং দেশের সর্বত্র।
‘নির্বাসিত লেখিকা’ তসলিমা নাসরিন বাংলাদেশের পড়ুয়াদের আন্দোলনের সফলতা চেয়ে লিখেছেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ‘গণতন্ত্রহীন রাজনীতি’ করছেন। তিনি লিখেছেন, “হাসিনা মান সম্মান নিয়ে গদি থেকে নামতে পারতেন। কিন্তু ক্ষমতার প্রতি তাঁর অতি লোভ তাঁকে তা করতে দিল না। তিনি দেশকে তাঁর বাপের সম্পত্তি মনে করেছিলেন, নিজে অনন্তকাল মক্ষীরানী হয়ে থাকতে চেয়েছিলেন। তাঁর স্তাবকেরা, তাঁর দলদাসেরা, চাটুকারেরা তাঁকে এমনই মাথায় উঠিয়েছিল যে তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান করতেন। বিরোধী দলগুলোর অস্তিত্ব ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। একাই লুটপাট করে খেতে দিয়েছিলেন দলের লোকদের, তাঁর কর্মকর্তাদের। নির্বাচনের নামে প্রহসন চালাতেন। গণতন্ত্রহীন রাজনীতির পরিণতি এমনই করুণ হয়।”
তসলিমা বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার দাবি করেছেন শেখ হাসিনার ধর্মনিরপেক্ষতা আসলে লোক দেখানো। তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশে যেভাবে মডেল মাদ্রাসা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা তাতে দেশে ইসলামি মৌলবাদ মাথাচাড়া দিয়েছে।
চলতি বিক্ষোভের প্রসঙ্গে তসলিমা নাসরিনের বিশ্লেষণ, “অনেকে বলছে, দেশ তো শিক্ষার্থীরা চালাবে না, দেশ চালাবে জামাত শিবির। বাংলাদেশের এটাই হয়তো নিয়তি। দেশে ইসলামিকরণ চলেছে কয়েক যুগ ধরে। সবাই জামাতের রাজনীতি না করলেও জামাতি মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠেছে, তারাই আজ দেশের সংখ্যাগুরু। নাস্তিক, মুক্তচিন্তক, যুক্তিবুদ্ধি সম্পন্ন বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা হাতে গোনা। হাসিনার দলের ভেতরেও আছে জামাতি মানসিকতা, দলের বাইরেও আছে জামাতি মানসিকতা। তাহলে দেশ চালাবে জামাত, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।”
তিনি লিখেছেন, “আমি মনে করি না, ধর্মনিরপেক্ষতা সহজে আসবে। তবে জামাত শিবির মনোভাবের লোকের অত্যাচারে মানুষ যখন একদিন অতিষ্ট হবে, মানুষের পিঠ যখন দেয়ালে ঠেকবে, দেয়ালে ঠেকিয়ে রাখতে রাখতে পিঠে ঘা হয়ে যাবে, সেই ঘা থেকে রক্ত আর পুঁজ গড়িয়ে পড়বে, সে কারণে যে যন্ত্রণা হবে, সেই যন্ত্রণা থেকে জন্ম হতে পারে ধর্মনিরপেক্ষতার, সেক্যুলারিজমের, সেই যন্ত্রণা থেকে জন্ম হতে পারে শুভবুদ্ধির, সমতার, সমানাধিকারের। সেই দিন দেরিতে হলেও কোনও একদিন আসুক।”