চলছে গুলি পড়ছে দেহ, বিক্ষোভ থামাতে বাংলাদেশে অনির্দিষ্টকাল কারফিউ

সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়মের সংস্কার ইস্যুতে যে ছাত্র আন্দোলন চলছে বাংলাদেশে তার মূল লক্ষ্য এখন ‘সরকারের পতন’। বিবিসি’র খবর সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি জানিয়ে…

সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়মের সংস্কার ইস্যুতে যে ছাত্র আন্দোলন চলছে বাংলাদেশে তার মূল লক্ষ্য এখন ‘সরকারের পতন’। বিবিসি’র খবর সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে রবিবার ঢাকা ও বিভিন্ন জেলা উপজেলায় রক্তাক্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলোচনার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে আন্দোলনকারীরা।

বাংলাদেশে রক্তাক্ত রবিবার। ক্রমাগত বাড়ছে নিহতের সংখ্যা। সরকার বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘স্বৈরাচারী’ বলছেন আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা। বিরোধীরা দাবি করেছে এই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতার সংগ্রাম। আর সরকারপক্ষের দাবি, দেশে অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।

   

আন্দোলন থামাতে রবিবার থেকে বাংলাদেশে শুরু হচ্ছে অনির্দিষ্টকালীন সান্ধ্য আইন তথা কারফিউ। সান্ধ্য আইনে জমায়েত নিষিদ্ধ। আইন ভাঙলে গুলি চালানোর নির্দেশ থাকে। সেনা নামিয়ে কারফিউ জারি করে গত জুলাই মাসে পড়ুয়াদের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে হিংসাত্মক পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দিয়েছিল সরকার।
বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে,রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ঢাকা মহানগরসহ সব বিভাগীয় শহর, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, শিল্পাঞ্চল, জেলা সদর ও উপজেলা সদরে সান্ধ্য আইন বলবৎ করা হল।

পরিস্থিতি গুরুতর বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার নিরাপত্তা বিষয়ক জাতীয় কমিটির বৈঠক করেন। তিনি বলেছেন, এখন যারা নাশকতা করছে, তারা কেউ ছাত্র না, তারা সন্ত্রাসী। তাদের শক্ত হাতে দমন করতে দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন তিনি। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং নৌবাহিনী প্রধান, বিভিন্ন মন্ত্রক নিয়ে গঠিত কমিটির সব সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব উপস্থিত ছিলেন। এবার আগস্ট মাসে আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্বে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আগেই ঘোষণা করেছেন ‘জনগণের পাশে থাকবে সেনা’।

সর্বশেষ নির্বাচন বয়কট করে সংসদে না থাকলেও বাংলাদেশের মূল বিরোধী দল বলে চিহ্নিত বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন দেশে সরকার বিরোধী গণঅভ্যুত্থান শুরু হয়েছে।

সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ ইস্যুতে আন্দোলন ঘিরে গত ১৬ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে ১৫০ জনের বেশি মৃত। যাদের বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ। অভিযোগ, আন্দোলন থামাতে সরকারে থাকা দল আওয়ামী লীগের শাখা সংগঠন ছাত্র ও যুব লীগ সদস্যরা হামলা করেছিল। সেই হামলার প্রত্যাঘাত শুরু করেন পড়ুয়ারা। রক্তাক্ত এই সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে পুলিশের গুলি চালানো পক্ষপাতদুষ্ট বলে আন্দোলন গণবিক্ষোভে পরিণত হয়।

সরকারের দাবি আদালতের নির্দেশে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে জেনেও পড়ুয়াদের আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে জামাত ইসলামি, বিএনপিসহ বিভিন্ন সংগঠন নাশকতা ছড়ায়। জামাতকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। গত জুলাই থেকে যে রক্তাক্ত আন্দোলন ছড়িয়েছে চলতি আগস্টে সেটি আরও বড় আকার নিল। ঢাকার সংবাদ মাধ্যমগুলিতে বলা হয়েছে, আন্দোলন দমনে সরকারের ভূমিকা ভয়াবহ ও নির্বিচারে গুলি করে খুনের অভিযোগে পড়ুয়াদের অভিভাবক ও জনতা সামিল।