বাংলাদেশে জামাত নিষিদ্ধ, ‘রাষ্ট্রধর্ম’ ইসলাম বাতিল কবে? হাসিনাকে প্রশ্ন তসলিমার

রাষ্ট্রধর্ম বজায় রেখে ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠন নিষিদ্ধ করে কোনও লাভ নেই। নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর সদস্যরা নাম ভাঁড়িয়ে নিজেদের মূলস্রোতের রাজনীতিতে সক্রিয় রাখবে এমনই লিখেছেন বাংলাদেশ (Bangladesh)…

Taslima Nasrin Questions Sheikh Hasina

রাষ্ট্রধর্ম বজায় রেখে ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠন নিষিদ্ধ করে কোনও লাভ নেই। নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর সদস্যরা নাম ভাঁড়িয়ে নিজেদের মূলস্রোতের রাজনীতিতে সক্রিয় রাখবে এমনই লিখেছেন বাংলাদেশ (Bangladesh) থেকে নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। সমস্ত ধর্মের রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধাচরণ করেন তিনি। লেখিকা তসলিমা নাসরিনের (Taslima Nasrin) যুক্তি, ‘রাষ্ট্রধর্ম’ বাতিল ও দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করুক শেখ হাসিনার সরকার। তসলিমার কটাক্ষ, জামাতের মত সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে কোনও লাভ নেই। কারণ, এই দলটির সদস্যরাই শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina) দল আওয়ামী লীগের মধ্যে ঢুকে আছে।

নির্বাচিত কলাম, লজ্জা, সেই সব অন্ধকারসহ বিভিন্ন বইতে ধর্মীয় রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে লিখেছেন তসলিমা নাসরিন। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত। ভারত ও ফ্রান্সে ‘আশ্রয়ে’ আছেন। তসলিমার কটাক্ষ, “জামায়াতে ইসলামিকে নিষিদ্ধ করার কথা এখন ভাবছে সরকার। আগে কেন ভাবেনি? আগে কেন নিষিদ্ধ করেনি? আগে দরকার পড়েনি। এখন তাহলে পড়েছে দরকার!”

   

সন্ত্রাস দমন আইনের ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয়ে গেছে জামাত ইসলামি সংগঠন। এই সংগঠনটির নেতৃত্ব আত্মগোপনে। বাংলাদেশ সরকারের অভিযোগ, সাম্প্রতিক পড়ুয়াদের আন্দোলনে জামাতসহ বিভিন্ন উগ্র সংগঠন ও জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো রক্তাক্ত পরিস্থিতি কায়েম করে অভ্যুত্থান ছক করেছিল। এর প্রেক্ষিতে ১ জুলাই ‘বাংলাদেশ জামায়াত ই ইসলামী’ ও তার সব শাখা সংগঠনকে নিষিদ্ধ তালিকাভুক্ত করা হয়।

জামাত নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পাকিস্তানের প্রেতাত্মাদের দেশে ঠা়ঁই নাই। নিষিদ্ধ জামাত নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জ এই ঘোষণা ‘বুমেরাং হবে’। বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে নিষিদ্ধ হয়েছিল জামাত ইসলামি। ১৯৭৯ সালে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছিল। আর ২০২৪ সালে দ্বিতীয় বার নিষিদ্ধ হয়েছে ‘হিংসাত্মক-রক্তাক্ত আন্দোলনে জড়িত’ জামাত।

তসলিমা নাসরিন লিখেছেন,” আমার প্রশ্ন, জামায়াতে ইসলামির কর্মীরা বা সদস্যরা কজন আর জামায়াতে ইসলামি নামের দলটিতে রয়েছে? অনেকেই তো ঢুকে গেছে অন্যান্য রাজনৈতিক দলে, বিএনপিতে, জাতীয় পার্টিতে, এমনকী আওয়ামী লীগেও। যখন তৃণসম ছিল এই দলটি, উচিত ছিল তখনই নিষিদ্ধ করা, কারণ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল কোনও দেশের মঙ্গল ডেকে আনে না। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি দেশকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে। গণতন্ত্রকে, বাক স্বাধীনতাকে, ধর্মনিরপেক্ষতাকে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। তখন দেশ আর দেশ থাকে না। অঙ্গারে পরিণত হয়। “

তসলিমা লিখেছেন, “জামায়াতে ইসলামি নামের কোনও দলকে নয়, নিষিদ্ধ করতে হবে ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি, তাহলেই নিষিদ্ধ হবে জামায়াতে ইসলামির নিন্দনীয় সব কার্যকলাপ, এবং বন্ধ হবে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ধর্ম নিয়ে রাজনীতি। জামায়াতে ইসলামি একা নয়, জামায়াতে ইসলামির রাজনীতি অন্যান্য রাজনৈতিক দলও করছে। দীর্ঘদিন থেকেই করছে, নির্বিঘ্নে করছে। জামায়াতে ইসলামির পলিটিক্যাল এজেন্ডা জাতীয় পার্টি সফল করেছে কিছুটা, বিএনপি সফল করেছে কিছুটা, এরপর বাকি যেটুকু ছিল, সফল করেছে আওয়ামি লীগ।”

তসলিমা লিখেছেন “আধুনিক রাষ্ট্র হতে গেলে রাষ্ট্রকে সেক্যুলার হতেই হয়। কোনও রাষ্ট্রধর্ম বহনকারী রাষ্ট্র আধুনিক রাষ্ট্র বা সভ্য রাষ্ট্র হতেই পারে না।” উল্লেখ্য বাংলাদেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। জেনারেল হুসেইন মুহাম্দ এরশাদের শাসনে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করা হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামী লীগের সরকার কেন রাষ্ট্রধর্ম নিয়ম বাতিল করছে না এই বিতর্ক তুঙ্গে।

শেখ হাসিনার সরকারের নীতি মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রসঙ্গ টেনে তসলিমা নাসরিনের কটাক্ষ, “মডেল মসজিদ নির্মাণ কোনও সেক্যুলার দলের এজেণ্ডা হতে পারে না, এ শতভাগ জামায়াতে ইসলামির এজেন্ডা। জামায়াতে ইসলামি ক্ষমতায় না থেকেও ক্ষমতায় থেকেছে। জাতীয় পার্টি, বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশে এমন ভয়ঙ্করভাবে সমস্ত কিছুর ইসলামিকরণ হয়েছে, যে, জামায়াতে ইসলামির কোনও কাজ আর অসম্পূর্ণ থাকেনি। সত্যি বলতে কী, জামায়াতে ইসলামির যে আদর্শ এবং নীতি, তা সব রাজনৈতিক দলেরই আদর্শ এবং নীতি।”