দক্ষিণেশ্বরের মা ভবতারিণীর বোনেদের বাড়ি কোথায় জানেন কী?

একটা কথা আমরা প্রায়শই শুনে থাকি ‘কালী-কলকাত্তাওয়ালী’ (Dakshineswar)। শুধু কলকাতায় নয় কলকাতার বাইরেও গোটা বাংলা জুড়ে মা কালী তার রাজ্যপাট ছড়িয়ে রেখেছেন (Dakshineswar)। তবে সুদৃশ্য…

Image of Maa Bhavatarini, the presiding deity of Dakshineswar Temple, depicted in a traditional and serene illustration, showcasing her divine presence and spiritual significance.

একটা কথা আমরা প্রায়শই শুনে থাকি ‘কালী-কলকাত্তাওয়ালী’ (Dakshineswar)। শুধু কলকাতায় নয় কলকাতার বাইরেও গোটা বাংলা জুড়ে মা কালী তার রাজ্যপাট ছড়িয়ে রেখেছেন (Dakshineswar)।

তবে সুদৃশ্য কালী মন্দির বললেই শিল্প রসিকদের চোখের সামনে সবার আগে ভেসে ওঠে দক্ষিণেশ্বর-এর (Dakshineswar) সুউচ্চ আলোকোজ্জ্বল নবরত্ন মন্দির! যার গর্ভগৃহে অবস্থান করছেন কষ্টিপাথরে নির্মিতা প্রসন্নবদনা মা ভবতারিণী। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে তো অনেকেই গিয়েছেন। কিন্তু জানেন কী মা ভবতারিণীর আরও দুই বোন আছেন এই কলকাতাতেই!

   

আজ থেকে প্রায় ১৬৮ বছর আগে ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে গঙ্গাতীরে ৩০ হাজার একর জমির উপরে, ১২টি শিব মন্দির এবং একটি রাধা কৃষ্ণ ও একটি নাট মন্দির সহ বাংলা স্থাপত্যের এই নবরত্ন মন্দির প্রতিষ্ঠার কাজ সম্পন্ন হয় রানি রাসমনির আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায়।

আজও দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে গেলে, রানী রাসমনির দৃষ্টিনন্দন সমাধিমন্দির মন্দির সবাই দেখতে পাবেন। সেই সময়কার নথি থেকে জানা যায়, ৩১শে মে স্নানযাত্রার দিন মন্দিরের গর্ভগৃহে মাতৃ প্রতিমার স্থাপনা করা হয়। তৎকালীন সময়ে ভবতারিণী নয়, মা জগদীশ্বরী নামেই এখানকার মা কালী বিখ্যাত ছিলেন। শোনা যায় এই উপলক্ষে নাকি, প্রায় এক লক্ষ ব্রাহ্মণ ভোজন এর ব্যবস্থা করা হয়েছিল!

কিন্তু এই প্রতিমা নির্মাণের ক্ষেত্রেও একটা অদ্ভুত ইতিহাস শোনা যায়। এই মন্দিরের প্রতিমা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তৎকালীন আপার চিৎপুর রোডের ‘ওরিয়েন্টাল স্টোন ওয়ার্কস’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে! যে প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ছিলেন বর্ধমানের কাটোয়া নিবাসী রামচন্দ্র ভাস্কর। তৎকালীন সময়ে রামচন্দ্রের মাত্র ১৯ বছর বয়সী পুত্র নবীন ভাস্কর, নিজের সুদক্ষ হাতে এই প্রতিমা নির্মাণের কার্য সুসম্পন্ন করেন!

কিন্তু শুনলে অবাক হবেন, নবীন ভাস্করের তৈরি প্রথম দুটি প্রতিমা বাতিল হয়ে যায় উচ্চতার কারণে! তৃতীয় বার নির্মিত প্রতিমাটিই দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের গর্ভ গৃহ আলোকিত করে আজও বিরাজ করছেন।

নবীন ভাস্কর নির্মিত তিনটি প্রতিমাই একটি কষ্টিপাথরের চাঁই থেকেই খোদাই করে বানানো হয়েছিল। যে কষ্টিপাথর আনা হয়েছিল পশ্চিম জামালপুর থেকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তৎকালীন বর্ধমানের মহারাজার নিজস্ব লিজ নেওয়া পাথরের খাদান ছিল এই জামালপুর।

কিন্ত এখন প্রশ্ন হল, প্রথম যে দুটি মূর্তি বাতিল হয়ে গিয়েছিল, সেই দুটির কি হল? শুনলে অবাক হবেন, যে এই দুটি মূর্তিই দক্ষিণেশ্বরের কাছাকাছি দুটি মন্দিরে আজও নিত্য পূজা পেয়ে চলেছেন।

প্রথম মূর্তিটি দক্ষিণেশ্বর মন্দির প্রতিষ্ঠা ঠিক দু’বছর আগে ১৮৫৩ সালে দক্ষিণেশ্বরেরই কাছাকাছি বরাহনগরে বর্তমানে ২২৫ নম্বর প্রামানিক ঘাট রোডে, রামগোপাল দে এবং দূর্গাপ্রসাদ দে কতৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। জনশ্রুতি যে স্বয়ং রামকৃষ্ণ দেব এখানে আসতেন এবং এখানকার মাতৃ প্রতিমাকে তিনি ‘মেজো মাসি’ বলে ডাকতেন। বর্তমানে এই প্রতিমা আনন্দময়ী মা নামে খ্যাত এবং এই কালীবাড়ি আনন্দময়ী কালীবাড়ি বলেও প্রসিদ্ধ।

দ্বিতীয় মূর্তিটি রয়েছে, উত্তর কলকাতায় স্টার থিয়েটার এর কাছাকাছি বৃন্দাবন বোস লেনে। শিবচরণ গোহো প্রতিষ্ঠিত গোয়াবাগান রোডের এই কালীমন্দির, নিস্তারিণী দেবী কালীমন্দির নামেও পরিচিত!

তাহলে পরেরবার যখন কোনও কার্যসূত্রে আপনি এই দুই এলাকায় যাবেন, তখন মা ভবতারিণীর এই দুই বোনের সাথে দেখা করতে কিন্তু ভুলবেন না!