৭৫ লাখের প্যাচওয়ার্ক ‘ভ্যানিশ’! দিশাহারা পুলিশের চিঠি ফিরহাদকে

সেই কবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কবিতায় লিখে গিয়েছেন – “কলকাতা চলিয়াছে হেলিতে দুলিতে” (Kolkata Traffic)। বর্ষার শুরুতেই গোটা কলকাতার রাস্তা (Kolkata Traffic) জুড়ে হেলে দুলে…

West Bengal Minister Firhad Hakim inspecting road conditions, standing in the middle of a flooded street, surrounded by officials and media personnel, with a serious expression

সেই কবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কবিতায় লিখে গিয়েছেন – “কলকাতা চলিয়াছে হেলিতে দুলিতে” (Kolkata Traffic)। বর্ষার শুরুতেই গোটা কলকাতার রাস্তা (Kolkata Traffic) জুড়ে হেলে দুলে চলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তার কারণ জল পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন রাস্তার কঙ্কালসার চেহারা আবারও বে-আব্রু হয়ে পড়েছে। যার ফলে যানবাহনের একটু গতি বাড়লেই দুর্ঘটনা যেন একটা স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে (Kolkata Traffic)।

রাস্তার এই বেহাল অবস্থাতে গলদঘর্ম হাল কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগেরও। বিভিন্ন রাস্তায় ট্রাফিকের চাপ এবং তার উপরে জ্যাম। আর তার মধ্যে রাস্তার ভাঙাচোরা অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে কলকাতা পুলিশের। তাই এবার বাধ্য হয়ে মহানগরের রাস্তার হাল ফেরাতে মহানগরিকেরই শরণাপন্ন হয়েছে কলকাতা পুলিশ। কলকাতার মহানগরিক অর্থাৎ মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে উদ্ধৃত করে লালবাজার সূত্রে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে ।

   

লালবাজার সূত্রে খবর বেহাল রাস্তাগুলিকে জরুরী ভিত্তিতে মেরামতের দাবি জানিয়ে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে কলকাতা কর্পোরেশন এবং মেয়রকে। বর্ষার আগেই প্রায় ৭৫ লক্ষ টাকা খরচা করে বিভিন্ন রাস্তায় প্যাচওয়ার্কের কাজ হয়েছে। কিন্তু বর্ষার জলে ধুয়ে সাফ হয়ে গিয়েছে সেই প্যাচওয়ার্ক। কার্যত ৭৫ লাখ টাকা জলেই গিয়েছে বলে মেনে নিচ্ছেন পুরসভার আধিকারিকদের একাংশ।

প্রবল বৃষ্টির মধ্যে ভূমিধস, মৃত ৫, ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে শতাধিক

কিন্তু কেন এই অবস্থা? শুধুই কী খারাপ নির্মাণ সামগ্রী? পুরসভার বিশেষজ্ঞদের মতে শুধু নির্মাণসামগ্রী নয়, সময়টাও এক্ষেত্রে ভিলেন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে পরিবেশ রক্ষার জন্য কলকাতার মধ্যে হট মিক্সিং প্লান্ট বসানো যাচ্ছে না। বাইরে থেকে মিক্সিং করে তা এনে কাজ চলছে। সাধারণত পিচ গরম থাকা অবস্থাতেই তার প্রলেপ দেওয়া জরুরী। কিন্তু এক্ষেত্রে আনা নেওয়ার সময় পিচের উষ্ণতা বেশ কিছুটা কমে যাচ্ছে। অপরদিকে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ বরাবরই ছিল।

নবান্নের সভাঘরে মুখ্যমন্ত্রী রাস্তার নির্মাণ সামগ্রীর কোয়ালিটি নিয়ে সরব হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর মতে একশ্রেণীর ঠিকাদারেরা কমদামি সাদাটে পাথর ব্যবহার করছে রাস্তা তৈরির জন্য। যে কারণে রাস্তা টেকসই হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রীর মতে কালো শক্ত পাথর ছাড়া আর অন্য কোন ধরনের পাথর রাস্তা তৈরীর কাজে ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও বেহাল অবস্থা রাস্তার। শুধু হট মিক্সিং প্লান্ট ব্যবহার না করতে পারাই নয়, অনেকের মতে নিম্নমানের পিচ এবং পাথরও এক্ষেত্রে বড় ভিলেন।

কিছুদিন আগেই দুর্গাপুরের সাংসদ কীর্তি আজাদ সদ্য তৈরি হওয়ার রাস্তার বেহাল দশা দেখে ক্ষেপে গিয়েছিলেন। নতুন তৈরি পিচের রাস্তা থেকে মুড়ির মতো উঠে আসছে স্টোনচিপ। তা দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে কীর্তি সেই স্টোনচিপস কুড়িয়ে নিয়ে ভরে দেন অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের পকেটে। পরবর্তীকালে ডেপুটি ইঞ্জিনিয়ারকেও বরখাস্ত করা হয়েছে বলে শোনা গিয়েছে। শুধু কলকাতা নয় গোটা রাজ্যেরই রাস্তার এখন বেহাল দশাই যেন স্বাভাবিক চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রেল দুর্ঘটনার জেরে বাতিল একগুচ্ছ ট্রেন, ঘুরপথে চলবে বহু এক্সপ্রেস

এবার খোদ কলকাতার বুকেই ট্রাফিক পুলিশের তরফ থেকে চিঠি গেল কর্পোরেশনের কাছে। যা কার্যত নজিরবিহীন বলেই মানছেন পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে পুর আধিকারিকদের একাংশ। ঘটনাচক্রে কলকাতার মেয়র আবার রাজ্যের পুর এবং নগরোন্নয়ন দপ্তরেরও মন্ত্রী। সামনেই পুজো আসছে। তার আগে এখনও অবধি বর্ষা তার সেই চেনা পরিচিত মেজাজ দেখায়নি বললেই চলে। পুজোর আগে বর্ষা যদি মারকুটে ব্যাটিং করে তাহলে তিলোত্তমার রাজপথের কি হাল হবে তা ভেবেই অনেকে শিউরে উঠছেন।

আপাতত মেয়র এই মুহূর্তে রয়েছেন সাঁড়াশি চাপে। একদিকে বর্ষার জল জমা রাস্তার মধ্যেই রাস্তা ঠিক করা, অপরদিকে ঠিকঠাক নির্মাণ সামগ্রী ঠিকঠাক প্রক্রিয়ায় এনে ঠিকভাবে ব্যবহার করার ব্যবস্থা করা। মহানগরিক হাকিম সাহেব কলকাতার রাস্তার এই চিরকালীন চেনা পরিচিত অসুখে কোনও নতুন দাওয়াই দেন কিনা সেটাই দেখার বিষয়।